আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পড়েছে উপকূলীয় জেলা সমূহ। বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি প্রকট আকার ধারণ করেছে উপকূলে। নিন্ম অঞ্চলে দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। প্রাণহানি, জমি ও সম্পদ বিনষ্ট এবং বহু মানুষ বাস্তচ্যুত হচ্ছে। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। শীতের এই মৌসূমে জেলার অনেক এলাকা এখনো পানির তলে। লাশ দাফন করতে হিমশীম খাচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অনেকে কলাগাছে ভেলা তৈরি করে লাশ দাফন করেছেন। গত ৭ জানুয়ারী সাতক্ষীরা সদরের লাবশায় একটি মুসলিম পরিবারের এক সদস্যকে মৃত্যুর পর তার লাশ কলাগাছের ভেলা তৈরি করে পানিতে দাফন করা হয়। দেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেহাট জেলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলায় এধরণের ঘটনা বার বার ঘটতে দেখা যাচ্ছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নিতে চলেছে। শুধু সাতক্ষীরা জেলায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ইউনিসেফ মনে করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বড় ধরনের দুর্যোগে জীবনরক্ষা, উন্নয়ন, অংশগ্রহণ এবং শিশুর সুরক্ষা উন্নততর করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করলেও কাজের কাজ কম হচ্ছে।
প্রচন্ড শীত ও স্থায়ী জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হওয়া অনেকে সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব। মনুষ্য সৃষ্টির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর নাব্যতা হ্রাস, পলিপড়ে নদীর তলদেশ ভরাট, অকেজো স্লুইস গেট, খননের নামে চরম দুর্নীর্তি ও ভারতীয় নদী আগ্রাশান এর জন্য দায়ী। ফলে ফসলের মাঠ,মৎস্য ঘেরসহ গোটা জেলার নিন্ম অঞ্চল এখনো পানিতে ভাসছে। পানির প্রবাহ হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে জেলার ৪২৯টি খাল। এসব খাল এখন জেলাবাসীর দু:খ বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টি স্লুুইস গেটের বেশির ভাগ অকেজো। ২৭টি নদীর ১৩ টি পলিপড়ে ভরাট হয়ে গেছে।
ছয় ঋতুর বাংলাদেশের অন্যতম বর্ষা আমাদের দেশের বাস্তবতায় বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভিত্তিক বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে, সাতক্ষীরার বাস্তবতায় বৃষ্টিপাত একই প্রকৃতির। কিন্তু জলাবদ্ধতার বিষয়টি অন্য যে কোন জেলা অপেক্ষা সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত। জেলা শহরের আবাসিক এলাকার উল্লেখযোগ্য অংশ জলাবদ্ধতায় মগ্ন হয়ে পড়ে সেই ধারাবাহিকতা থেমে নেই। সাতক্ষীরা শহরের জীবন যাপনে এবং জলাবদ্ধতার সর্বাপেক্ষা দায়বদ্ধতা তা হলো ড্রেনেজ ব্যবস্থার দুরবস্থা। শহরের ড্রেনজ ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য অংশ দখলে এবং দুষনে আক্রান্ত। ড্রেনের উপরে অবৈধ স্থাপনাও পানি নিষ্কশন ব্যবস্থায় চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। সাতক্ষীরার প্রতাপনগর ছিল অর্থনীতিতে, উন্নয়নে এবং সমৃদ্ধিতে এগিয়ে চলা সেই প্রতাপনগরের জীবন যাত্রা চরম ভাবে বিপর্যস্থ। প্রতাপনগরের যে পরিবারটি দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে পরম নির্ভরতায় জীবনযাপন করতো সেই পরিবার বর্তমানে ভিক্ষার ঝুড়ি নিয়ে পথে পথে। আর এমনই হয়েছে জলাবদ্ধতার কল্যানে, সাতক্ষীরার বাস্তবতায় জলাবদ্ধতাই কেবল শেষ কথা নয়, নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা দিনে দিনে আতঙ্কজনক পরিস্থিতিতে পৌছেছে। খোলপেটুয়া নদীর ভাঙ্গনে কেবল প্রতাপনগর নয়, আশাশুনি উপজেলার বিস্তীর্ন এলাকা পানিতে ভাসছে।
দেশের অভ্যন্তরীন নদ নদী ভাঙ্গনের ফল এক ধরনের আর সীমান্ত নদী ভাঙ্গনের প্রভাব ভিন্ন প্রকৃৃতির সীমান্ত নদী ভাঙ্গন ভূখন্ড বিলীন হয় আর দেশের ভূ-খন্ড হারিয়ে যায়। বিধায় সীমান্ত নদী ভাঙ্গনের ভয়াল রূপ আর ক্ষয়ক্ষতি কঠিন কঠোর সাক্ষী সাতক্ষীরার সীমান্ত পারের জনগোষ্ঠী। ইছামতির পাশাপাশি রায় মঙ্গলের ভাঙ্গন ও শেষ নেই। জলাবদ্ধতা আর নদী ভাঙ্গনের সাথে অবিরাম যুদ্ধরত সাতক্ষীরার জনমানব, জেলার নিম্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত। ফসল উৎপাদনে চরম ভাবে ভাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে, সাতক্ষীরা জনমানুষের ভোগান্তীর পাশাপাশি কৃষি উৎপাদনে ও চিংড়ী উৎপাদনেও চরম দুঃসময় পার করছে সাতক্ষীরাকে জলাবদ্ধতা ও নদী ভাঙ্গনের কবল হতে রক্ষা পেতে হবে আর এজন্য সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭ জানুয়ারী সাতক্ষীরা সদরের লাবশার গোপিনাথপুরের বয়োবৃদ্ধ সোনাভান বিবি মারা যান। এতে লাশ কবরস্থ করতে বিপাকে পড়েন স্বজনরা। বাধ্য হয়ে এলাকার জলাবদ্ধ কবরস্থানে কবর খুড়ে কলাগাছের উপরে মৃত দেহ রেখেই কবরস্থ করা হয়েছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ছয়টি খাল পুনঃখননের দাবিতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের পানিবন্দী মানুষ মানববন্ধন করেছেন। জলাবদ্ধ নিরসনে বেতনা ও মরিচ্চাপ অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন এবং ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে মানবিক সহায়তা প্রদানের দাবীতে হাটু পানিতে দাঁড়ি মানববন্ধন পালন করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ৮/১/২০২২
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …