পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি
খুলনার পাইকগাছার কপোতাক্ষের তীরে মানবতা ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ময়না বিবি ওরফে পাগলির (৫২) অসহায় জীবনযাপনের সীমা নেই। আগুন জ্বালিয়ে ও ছেঁড়া কাঁথায় অনাহারে কাটছে শীতের দিন-রাত।
উপজেলার কপিলমুনি বাইপাস সড়কের কপোতাক্ষ নদের তীরে একটি ঝুঁপড়ি ঘরে বাস করছে পাগলি ওরফে ময়না। কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় লোকে তাকে পাগলি বলেই ডাকে। ঘরটির কিছু অংশ পলিথিন ও চট দিয়ে ছাওয়া ও পুরাতন কাপড় দিয়ে দু-পাশ ঘেরা। এর মধ্যে সেই অসহায় নারীর বসবাস। সম্পদ বলতে ছোট্ট একটা ভাঙাচুরা অসমতল চৌকিখাট।
যার দুটি পায়া না থাকায় ইট দিয়ে ঠেকা দেওয়া হয়েছে। কিশোরী বয়সে আগড়ঘাটার কার্ত্তিকের মোড়ের পাশে করিম গাজীর সঙ্গে বিয়ে হয় পাগলির। বিয়ের কয়েক বছর পর সেখানে একটি মেয়েসন্তান জন্মায় তার। সন্তান জন্মের ৭ বছর বয়সে হন স্বামী পরিত্যক্তা।
এরপর তাকে নিয়ে বর্তমান স্থানে শুরু করে বসবাস। বাজারের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার ও চায়ের দোকানে পানি দিয়ে যা আয় হতো তাই দিয়েই চলতো সংসার। মূল পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। ১৬ বছর বয়সে তার মেয়েটি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। পরে পাগলি আরও অসহায় হয়ে পড়ে। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।
নতুন স্থাপনা তৈরি হবে বলে পাগলিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। অগত্যা আশ্রায় নেয় কপিলমুনির আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরের পেছনে কপোতাক্ষ নদের তীরে ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, পাগলি আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন। কাঁদতে কাঁদতে কাপড় দিয়ে বারবার চোখ মুছছিলেন।
পাগলি জানান, নদীর ধারে শীতের তীব্রতায় রাতে ঘুমাতে পারি না। অনেকের কাছে একটি কম্বল চেয়েছি কিন্তু ভাগ্যে জোটেনি। পাইনি কোনো সরকারি ত্রাণ সহায়তা। মাথা গোঁজার জন্য আশ্রয়।
স্থানীয় হালিম হাওলাদার ও সাইদ গাজী জানান, পাগলির মতো অসহায় গৃহহীন নারী কিছুই পায় না এটা বড় অমানবিক।
স্থানীয় চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দার জানান, এখানে এমন একজন ব্যক্তি বাস করছেন, তা জানা ছিল না। তবে আমার কাছে আসলে তার জন্য কিছু করার চেষ্টা করব।