চ্যালেঞ্জ
১৬ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ শিশু।
জলবায়ু পরিবর্তন ছাড়াও নদী বিধৌত ব-দ্বীপ বাংলাদেশ আরও প্রাকৃতিক সংকটের মুখোমুখি হয়। তবে উষ্ণায়নের ফলে হিমালয়ের হিমবাহ গলতে থাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং প্রাণঘাতী দুর্যোগ ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
বন্যা, ঘুর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদী ভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততাকে প্রধান প্রাকৃতিক বিপদ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ সরকার।
অনেক সময় বন্যার কারণে নদী ভাঙন হয়। আবার নদী ভেঙেও লোকালয় প্লাবিত হয়। এর ফলশ্রুতিতে প্রাণহানি, জমি ও সম্পদ বিনষ্ট এবং বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় খুবই সাধারণ ঘটনা। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বসবাসের এই এলাকাগুলো ওই সব প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের তিন জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও ভোলায় জলবায়ু পরিবর্তন ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ঘন ঘন দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে এই জেলাগুলো। বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি সংকটকে আরও ঘনীভুত করছে। পানির লবণাক্ততাও একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপকূলের অনেক এলাকা এখন এই সমস্যায় আক্রান্ত।
অতিরিক্ত গরমও জলবায়ু পরিবর্তনের আরেক ধরনের প্রভাব। এতে ফসলের ক্ষেত নষ্ট হয়ে মানুষের জীবিকা সংকটের মুখে পড়ে। প্রতি পাঁচ বছরে একবার খরার কারণে বিপদে পড়ে বাংলাদেশের মানুষ, আর এক্ষেত্রে দেশের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এসব লোকালয়ের শিশুদের ঝুঁকি বড়দের চেয়ে বেশি। গরম ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত সমস্যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বড়দের তুলনায় তাদের কম। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়ায় তাদের ডায়রিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পুষ্টিহীনতায় ভোগারও ঝুঁকি থাকে এসব শিশুদের। দুর্যোগে স্কুল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দুর্যোগের সময়ে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া, যৌন নিপীড়নের শিকার, শিশু শ্রম, পাচার এবং অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি থাকে
বাংলাদেশে নারী-পুরুষ নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও ছেলে ও মেয়েরা ভিন্ন ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়। শিশুর বয়স ও লিঙ্গের ভিত্তিতে তাদের অসহায়ত্বও ভিন্ন ধরনের হয়, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েক বছরে সরকার দুর্যোগ ঝুঁকি কমানোর (ডিআরআর) ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে।
উপকূলীয় এলাকায় বাংলাদেশ বহু ভবন নির্মাণ করেছে যা ঘুর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে দুর্যোগে মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। তবে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি ও উপার্জন হারানোর হার ক্রমশ বাড়ছে।
সরকার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন খাতে বার্ষিক বরাদ্দের ৬ থেকে ৭ শতাংশ ব্যয় করছে। বছরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ।
এই বিপুল বিনিয়োগের সঙ্গে আরও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, আর্থিক পরিকল্পনা, তদারকি, রিপোর্টিং ও কার্যকর নীতি হতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণের যোগসূত্র এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি
সমাধান
ইউনিসেফ মনে করে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারণ বড় ধরনের দুর্যোগে জীবনরক্ষা, উন্নয়ন, অংশগ্রহণ এবং শিশুর সুরক্ষা উন্নততর করার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সম্ভাব্য নাজুক পরিস্থিতি সামালে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ। দুর্যোগে গতানুগতিক জরুরি ‘সাড়া ও ত্রাণ’ ভিত্তিক কার্যক্রম থেকে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমনের আরও সমন্বিত ও টেকসই কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অ্যাক্টের আওতায় দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের একযোগে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন নীতি ও পরিকল্পনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও টেকসই পরিবেশের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে মিলে বাংলাদেশ পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির দিক দিয়ে অনেক কারিগরি দক্ষতা অর্জন করেছে। এসব দুর্যোগ সম্পর্কে জ্ঞান ও জানাবোঝাও বেড়েছে।
উল্লেখযোগ্য তহবিলসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেওয়ার অনেক বিষয় কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেছে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালের শেষ দিকে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত সাত লাখ রোহিঙ্গার জরুরি প্রয়োজন মেটাতে যখন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তা যোগাড় করা হচ্ছিল সেই সময় বাংলাদেশ সরকার শুধু ইউনিসেফ ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্থার সামান্য সহায়তা নিয়ে খুব দ্রুত ও কার্যকরভাবে বন্যায় বাস্তুচ্যুত প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে রক্ষা করে।
সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সামাল দেয়া, সমাজের সব ধরনের মানুষের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শিশুকেন্দ্রিক পরিকল্পনার পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখার পাশাপাশি এগুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজও করা হয়
এক্ষেত্রে মুখ্য বিবেচনার বিষয়গুলো হল-
# দুর্যোগের সময় ও পরবর্তীতে সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।
# দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এমন অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় উপকরণের উৎস নিশ্চিতে বিনিয়োগ।
# নীতি নির্ধারণ ও উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে শিশুদের বিষয়াদি ও তাদের প্রয়োজন মেটানোর পদক্ষেপ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
ইউনিসেফের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত এজেন্ডায় দুর্যোগকালে সব বয়সী শিশুরা যেসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার সবই বিবেচনায় নেওয়া হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত প্রয়োজনগুলো যাতে মেটানো যায় সে লক্ষ্যে উপযুক্ত কর্মসূচি প্রণয়নে তথ্যভিত্তিক (ডেটা সিস্টেমের) সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।
পানীয় জলের উন্নততর অবকাঠামো এবং স্কুলে স্কুলে পৃথক ল্যাট্রিন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে নিরাপদ পানি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং মেয়ে ও নারীদের উপযোগী স্থাপনা প্রতিষ্ঠাকে এগিয়ে নেওয়া হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং জনগণের কাছে বিভিন্ন বার্তা পৌঁছে দিতে স্থানীয় ও ধর্মীয় নেতা, কমিউনিটির প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি এবং এমনকি শিশুদেরও সহায়তা নেওয়া হয়।
নির্দিষ্ট বয়সভিত্তিক বিভিন্ন গ্রুপের জন্য ইউনিসেফের কার্যক্রমের কিছু বিষয় নিচে তুলে ধরা হল:
নবজাতক, ছোট শিশু ও তাদের মায়েরা
বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত সমস্যাগুলো সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে ইউনিসেফ। তাপদাহ, নতুন নতুন এলাকায় রোগ ছড়িয়ে পড়া এবং দুর্যোগকালে আহতদের চিকিৎসা প্রভৃতি বর্তমান স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় নিয়ে আসা যায়।
সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকর্মীদের পাঠ্যসূচিতে জরুরি পরিস্থিতির প্রস্তুতির বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ করছে ইউনিসেফ। স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে সৌর শক্তি ব্যবহারের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। দুর্যোগে অসহায় এলাকাগুলোতে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংরক্ষণে ইউনিসেফের সহায়তা কাজে লাগানো হয়।
দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে জনগণের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দিতে কমিউনিটি রেডিও ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ গর্ভধারণকালে হাইপারটেনশন, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার জন্য যে সমস্যায় ভোগেন অনেক মা, সে সম্পর্কিত তথ্য ও তা থেকে উত্তরণের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমে।
দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে মা, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের জন্য এইচআইভির ওষুধ ও সেবা সহজলভ্য করার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ।
স্কুলের পাঠ্যসূচি ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। কোনো একটি দুর্যোগের পর শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া বা শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রতিরোধে পাইলট প্রোগ্রামে সহায়তা করা হচ্ছে।
বাবা-মার সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইউনিসেফের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট (ইসিডি) কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বাবা-মার প্রশিক্ষণে জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুর সুরক্ষা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়।
দুর্যোগ পরিস্থিতি ও এর পরেও শিশুর জন্য সেবাগুলো চালিয়ে যেতে হবে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অংশীদারদের নিয়ে ইউনিসেফ জেলা পর্যায়ে ‘জরুরি পরিস্থিতিতে শিক্ষার’ জন্য পলিসি ও ফ্রেমওয়ার্ক নির্ধারণ করেছে।
সংকটের ঝুঁকি বাড়ায় দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে ইসিডি সেবাগুলো যাতে অব্যাহত রাখা যায় সেজন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ও টেকসই পদ্ধতি বের করতে গবেষণায় বিনিয়োগ করছে ইউনিসেফ।
শিশুর খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখার উদ্যোগে সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। দুর্যোগের সময়ে ভুক্তভোগীদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্যসম্পদের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতেও সহায়তা দেওয়া হয়। জলবায়ু সহিষ্ণু শস্য উদ্ভাবন ও চাষেও উৎসাহ দেয় ইউনিসেফ।
দুর্যোগকালে দূষিত পানির মাধ্যমে প্রায়ই পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও হাইজিন (ওয়াশ) স্থাপনা নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব স্থাপনা যাতে জলবায়ু সহিষ্ণু করা যায় সেজন্য গবেষণা ও সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ইউনিসেফ। জলাবদ্ধতা, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা ও খরাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিতে এমএআর সিস্টেম ও অন্যান্য জলবায়ু সহিষ্ণু পানি প্রযুক্তির উন্নয়নেও কাজ করছে ইউনিসেফ।
কার্বন নিঃসরণ কমাতে ইউনিসেফ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে উন্নততর রান্নার চুলার ব্যবহার উৎসাহিত করছে।
প্রাথমিক স্কুলবয়সী শিশু
পরিবেশগত জরুরি পরিস্থিতিতে গৃহীত পদক্ষেপ জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসৃত হওয়া উচিত, যাতে দুর্যোগপ্রবণ জেলাগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। দুর্যোগ প্রস্তুতি ও সাড়া প্রদানের জন্য জেলা পর্যায়ে সমন্বয় বৃদ্ধিতে কাজ করে ইউনিসেফ।
আনুষ্ঠানিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষায় শিশুদের অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করা হচ্ছে। শিক্ষার দ্বিতীয় দফার এই সুযোগে তাদেরকে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ সম্পর্কেও ধারণা দেওয়া হয়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপদ পানির স্থাপনা বৃদ্ধিতে সরাসরি সহায়তা দেয় ইউনিসেফ। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হয় সে বিষয়েও শিক্ষার্থীদের ধারণা দেওয়া হয়। ‘লিটল ডক্টর প্রোগ্রামের’ আওতায় প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই স্বাস্থ্য বিধি শেখানো হয়।
বাবা-মার একজন আছেন এমন শিশু এবং দুঃস্থ মায়েদের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। সংকটের আগে, সংকটকালে ও পরে এসব সেবা সরবরাহের ব্যবস্থা করতে কাজ করছে ইউনিসেফ।
পরিবর্তনের দূত হিসেবে কিশোর-কিশো
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নাজুক এলাকাগুলোতে) জীবন-দক্ষতা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করছে ইউনিসেফ। সান্ধ্যকালীন স্কুল ও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে স্কুল এভাবে বিকল্প উপায়ে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদানের পরীক্ষামূলক উদ্যোগে সহায়তা করছে ইউনিসেফ। বিশেষ পরিস্থিতিতে শ্রম বাজারে ঢুকে পড়া শিশুর সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যও রয়েছে এই উদ্যোগের পেছনে।
জীবন-দক্ষতা শিক্ষায় বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে-মেয়েদের দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যেমন পাচার, শহুরে সেন্টারে স্থানান্তর, আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাস ও যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেদের রক্ষার কৌশল শেখানো হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও এইচআইভি নাজুকতার মধ্যে সম্পর্ক বের করতেও কাজ করছে ইউনিসেফ।
দুর্যোগের পর কিশোরী মেয়েরা বাল্য বিয়ে, শিক্ষার সুযোগ হারানো ও অন্যান্য বঞ্চনার ঝুঁকিতে থাকে। ইউনিসেফ শিক্ষক ও কমিউনিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণে সহায়তা দেয় যাতে মেয়েদের শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাদের মাধ্যমিক শিক্ষা অব্যাহত রাখার জন্য অন্যান্য সহায়তাও দেওয়া হয়। ইউনিসেফের সহায়তায় পরিচালিত মোবাইল টিম ও শিশুবান্ধব অন্যান্য উদ্যোগে নিপীড়ন, সহিংসতা ও জরুরি পরিস্থিতিতে উপেক্ষার বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য কিশোরী মেয়েদের সক্ষম করে তোলে।
আরও কিশোর-কিশোরী এবং রেডিও শোনা গ্রুপগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উদ্যোগগুলোতে আরও সম্পৃক্ততা চায় ইউনিসেফ। শিশুদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে পানিতে ডুবে যাওয়া একটি বড় কারণ। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণে কমিউনিটির সম্পৃক্ততার অংশ হিসেবে কিশোর-কিশোরীদের জন্য নিরাপদ সাঁতার প্রোগ্রাম চালানো হয়।
লোকজনের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সামনের কাতারের কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং শহর ও পৌরসভায় মেগা ফোন, সৌরশক্তি চালিত রেডিওর সরবরাহ নিশ্চিত করে ইউনিসেফ।
নীতি ও সচেতনতা
ইউনিসেফের সংগ্রহে মনস্তাত্ত্বিক ও বিনোদনমূলক নানা ‘কিট’ বা উপকরণ রয়েছে এবং সেগুলো ইতোমধ্যে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে দেওয়াও হয়েছে। এটা জরুরি পরিস্থিতিতে শিশুদের ‘ন্যূনতম সেবা প্যাকেজের’ অন্তত তিনটি উপকরণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করে।
ইউনিসেফ শহরাঞ্চলে শিশুদের প্রয়োজন বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ কর্মসূচি প্রণয়ন করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের শিশুকেন্দ্রিক অভিযোজন ও স্কুল নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
প্রান্তিক লোকজনের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় নিয়ে শক্তিশালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তহবিল সংগ্রহেও সহায়তা করে ইউনিসেফ।
ইউনিসেফ তার ডিজাস্টার অ্যাক্ট ২০১০ এর পর্যালোচনার অংশ হিসেবে দুর্যোগ মোকাবেলায় শিশুবান্ধব প্রস্তুতি, সাড়া প্রদান, সুরক্ষা ও ঝুঁকি প্রশমনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার চালাচ্ছে।