হাতে হাতকড়া আর পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি অথচ মুখে রাজ্য জয়ের মুচকি হাসি।’ এমন একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কয়েক বছর ধরে। কিন্তু ছবির মানুষটির পরিচয় কজনই বা জানে? ছবির সেই দুই যুবকের একজন তোফায়েল প্রধান। সদ্য সমাপ্ত তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।
৩০ বছর বয়সের তোফায়েল প্রধান বয়স বিবেচনায় জেলার অন্যান্য চেয়ারম্যানদের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।
ডান্ডাবেরি পরা ছবির বিষয়ে তোফায়েল প্রধান নয়া দিগন্তকে জানান, ‘ছবিটি ২০১৫ সালের। সে সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বেশ কয়েকটি মামলার সম্মুখীন হয়েছিলাম। একাধিকবার জেল জুলুমেরও শিকারও হতে হয়েছে। সেদিন তাকে জেল হাজত থেকে আদালতে তোলা হয়েছিল। পঞ্চগড় আদালত পাড়াতেই কেউ একজন ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন দৃশ্যটি।’
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তোফায়েল প্রধান বলেন, ‘টানা চার মাস ১২ দিন কারাগারে ছিলাম। ছয়টি মামলার নিয়মিত জামিন শুনানি এবং হাজিরা দিতে আদালতে যেতে হতো। যেহেতু একাধিক মামলা তাই ডাণ্ডাবেড়ি লাগানো হতো। ডাণ্ডাবেড়ি পড়ে নামাজ পড়তে এবং খাবার খেতে অনেক কষ্ট হতো। কখনো কোর্ট থেকে ফিরতে দেরি হলে ডাণ্ডাবেড়ি পড়েই ঘুমাতে হতো।’
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের বাড়ি কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের টুনিরহাট ঘটবর এলাকায়।
১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা মরহুম আলহাজ্ব আকবর আলী প্রধান ছিলেন একই ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। আট ভাই এবং ছয় বোনের মধ্যে তোফায়েল সবার ছোট।
বাবা আকবর আলী প্রধানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তোফায়েল বলেন, আমার বাবা ছিলেন আপাদমস্তক একজন ইসলামিক ব্যক্তিত্ব। আমার বাবা আমাদেরকে সবসময় নীতি ও নৈতিকতার ওপর অটল এবং অবিচল থাকার নির্দেশনা দিতেন।
চেয়ারম্যান হিসেবে আপনার পরিকল্পনা কি? এই প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল প্রধান বলেন, ইউনিয়নবাসী তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এবং ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে তৃতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তোফায়েল প্রধান উপজেলার ৪নং কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নে আনারস প্রতীকে প্রতিদ্বন্দীতা করেন। চার হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তিনি পেয়েছিলেন তিন হাজার ৩৫৪ ভোট।