হাওরাঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড করতে হবে। হাওরাঞ্চলের জীববৈচিত্র রক্ষায় সড়কগুলো এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে।
মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল ১০টার দিকে তিন দিনব্যাপী ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে ডিসিদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন সরকারপ্রধান।
এর মধ্যে প্রথম দিন ৭, দ্বিতীয় দিন ৮ এবং তৃতীয় দিন থাকবে ১০টি অধিবেশন। করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সঙ্গে ডিসিদের অধিবেশনগুলোও ভার্চুয়ালি হবে।
অন্যান্য বছর জেলা প্রশাসকদের নিয়ে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে এ সম্মেলন হলেও করোনার কারণে এবার জেলা প্রশাসক সম্মেলন হচ্ছে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুই বছর পর এ সম্মেলন হচ্ছে। এবার ডিসি সম্মেলন শেষ হবে ২০ জানুয়ারি।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, এ দেশে একটি মানুষও দরিদ্র থাকবে না। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছেন। আমরা সেই দেশকে সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন— এ দেশে কোনো মানুষ ভিক্ষাবৃত্তি করবে না। আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছি। মাঠ প্রশাসনকে এসব বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর সরকারি চাকুরেদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের দায়িত্বও বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, সুনামগঞ্জের হাওরে প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। গত বছরের নভেম্বরে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
একই প্রকল্পে ওই এলাকায় সব ঋতুতে চলাচল উপযোগী সড়ক বা সাবমার্সিবল (ডুবন্ত) রোডও তৈরি করা হবে।
‘হাওর এলাকায় উড়াল সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এর আওতায় অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে হাওর অঞ্চলে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সহযোগিতা এ প্রকল্পের লক্ষ্য।
‘প্রকল্পভুক্ত এলাকা হলো সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা এবং নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা। ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হবে। এতে ব্যয় হবে তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে দেশীয় অর্থে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে- ১০ দশমিক ৮১ কিলোমিটার এলিভেটেড সড়ক উন্নয়ন, ৯৭ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার অল সিজন উপজেলা সড়ক, ২০ দশমিক ২৭ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক উন্নয়ন, ১৬ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার সাবমার্সিবল উপজেলা সড়ক, ২২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার সাবমার্সিবল ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক এবং ৫৭টি ব্রিজ ও ১১৮টি কালভার্ট নির্মাণ (মোট দৈর্ঘ্য পাঁচ হাজার ৬৮৮ মিটার)।