মহান আল্লাহর বানী- ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজুরত আয়াত-১০) কিন্তু আমাদের সামজে মুসলিম আলেম-ওলামা, বুজুর্গ, দায়ী ও ইসলামি স্কলারদের নামে আগে মুফতি, মাওলানা, আল্লামা, শায়েখ, পীরসহ নানাবিধ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। একটু ভাবুন তো, পৃথিবীর প্রথম মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও মুফতি বিশ্বনবী স. এর নামের আগে কি আমরা মুফতি, মাওলানা, আল্লামা, শায়েখ শব্দ ব্যবহার করি। শুধু তাই নয়, রাসুল স. এর সাহাবায়ে কেরাম, যাদের অনেকেই জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত, তাঁদের নামের আগেও কি এসব পদবি ব্যবহার করা হয়। হয় না। বিশ্বনবীর চেয়ে বড়পীর আর কি কেউ ছিলেন, তাঁর সাহাবায়ে কেরাম ও তবেয়ী-তাবে তাবেয়ীদের কেউ কি ইলমে, আমলে, আখলাকে, ইবাদতে, তাযকীয়ায়, ইত্তেবায়ে রাসুলে- কম ছিলেন? তবে তাঁরা কেউ পীর হলেন না, পীর হলেন হাজার বছর পরের বুজুর্গরা!
@ ‘মাওলানা’ শব্দটি ‘মাওলা’ ও ‘না’ দুই আরবি শব্দের সমাস। ‘না’ অর্থ আমরা বা আমাদের। আর ‘মাওলা’ শব্দের প্রায় ৩০ টি অর্থ রয়েছে। যেমন: প্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনিব, অভিভাবক, নিকটবর্তী, আত্মীয়, নেতা, গুরু, প্রতিপালক, সর্দার ইত্যাদি। সুতরাং ‘মাওলানা’ অর্থ আমাদের প্রতিপালন, প্রভু বা নেতা। আর পরিভাষায়- মাওলানা (مولانا একটি সম্মানসূচক উপাধি যা মুসলিম ধর্মীয় আলেম বা নেতার নামের শুরুতে যুক্ত করা হয়।
আল-কুর’আনের দ্বিতীয় সূরা আল-বাক্বারা’র শেষের আয়াতে ‘মাওলানা’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যে আয়াতটি প্রায়শই দু’আ-মুনাজাতে পাঠ করতে শুনি। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “আন্তা মাওলানা ফানসুরনা ‘আলাল কাওমিল কাফিরিন।” অর্থাৎ “তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।” (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ২৮৬) কেউ কেউ এই আয়াতটি ব্যবহার করে বোঝাতে চায়, যেই শব্দটি আল্লাহ’র ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে তা মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা মানে হলো- তাকে আল্লাহ’র পর্যায়ে উত্তীর্ণ করে ফেলা তথা শিরক করা। (নাউযুবিল্লাহ্)।
# ইসলামে মুসলিমদের পদবি :
এক. আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (হুজুরত আয়াত-১০)
তিন. বিদায় হজ্জ্বে নবিজীর স. ঐতিহাসিক ভাষন, হে লোকসকল! তোমরা আমার কথা শোন, এবং বুঝো, জেনে রাখো! প্রত্যেক মুসলিম প্রত্যেক মুসলমানের ভাই, আর মুসলিমগন ভাই (তাদের সম্পর্কটা ভ্রাতৃত্বের)। ইবনে হিসাম ২/৬০৩
আমাদের সমাজে পদ-পদবীর অভাব নেই। অভাব ভ্রাতৃত্বের। আলেমে আলেমে হিংসা, বিদ্বেষ ও কাদাছোড়াছুড়ি। সাধারণ মানুষ এখন মনে করে কোন আলেমের কাছে যাব ভাই? কেউ মাযহাবী, কেউ লা-মাযহাবী, কেউ কওমি আবার কেউ আলিয়া! তো হুজুরদের মধ্যে যেহেতু এতো দ্বন্দ্ব! তো তাদের থেকে সাধারণ মুসলিম দূরে থাকেন। এমতাবস্থায় আমাদের আলেম, ইমাম, হাফেজসহ দুনিয়ার সকল মুসলিম জ্ঞাণীদের ভ্রাতৃত্বের অটুট বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে একটি রজ্জু ধারণপূর্বক ঐক্যবদ্ধ একটি মুসলিম জাতি হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
বিলাল হোসেন মাহিনী
পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ও প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাস, যশোর।
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, অভয়নগর, যশোর।