তুরস্কে কুরআনের হাফেজ তৈরিতে মসজিদভিত্তিক মাদরাসাগুলোর ব্যাপক সাফল্য

তুরস্কে ২০২১ সালে প্রায় ১২ হাজার শিশু-কিশোর কুরআনের হাফেজ হয়েছে। দেশটির সাধারণ মাদরাসা ও অন্তত ৯০ হাজার মসজিদের ইমাম ও খতিবদের দ্বারা পরিচালিত মাদরাসায় পড়ে তারা হিফজ সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়ার্স অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষা-সেবা প্রকল্পের প্রধান কাদির দিজ।

রোববার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।

ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছরে সারা দেশে অন্তত ১১ হাজার ৭৭৩ জন শিক্ষার্থী হিফজ সম্পন্নের সনদ গ্রহণ করেছে। এদের মধ্যে অনেকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি হিফজ বিভাগে পড়ে এই কীর্তি অর্জন করে।

গত গ্রীষ্মে তুর্কি দিয়ানাত কর্তৃপক্ষ দেশটির ৮১টি এলাকা নিয়ে অন্তত ১ হাজার ৬৭৯টি কুরআন শিক্ষা কোর্স চালুর ঘোষণা দেয়। ৬ হাজার ৮৩৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার তত্ত্বাবধানে কোর্সগুলোতে ৭১ হাজার ৪৩৭ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয় এবং গত বছরের শুরুর কয়েক মাসেই এদের মধ্য থেকে প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

কাদির দিজ জানান, তুরস্কে সারা বছরই মাদরাসাগুলোতে কুরআন হিফজের ডে-কোর্স পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীদের মেধাস্তরের ভিন্নতার ফলে হিফজ সম্পন্ন করতেও একেকজনের একেক রকম সময় ব্যয় হয়। কোর্স শুরুর সময় থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৭৭ হাজার ১৯০ জন শিক্ষার্থী কুরআন মুখস্থের পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোর্সটি স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগে; এক বছর নাজেরা বা কুরআন দেখে দেখে পড়া, দুই বছর হিফজ বা মুখস্থ করা।

প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়ার্স অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা কাদির দিজ আরো জানান, তাদের তরফ থেকে মাদরাসাগুলোতে হাফেজ শিক্ষকও সরবরাহও করা হয়। তারা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে কুরআন হিফজের সাথে শিক্ষার্থীদের আরবি ভাষা শিক্ষাকেও বাধ্যতামূলক করবেন। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল লক্ষ্য হলো- শিক্ষার্থীরা যেন কুরআনে কারিম মুখস্থের পাশাপাশি তার অর্থের সাথেও পরিচিত হতে পারে।

কুরআনে কারিমের হাফেজের সংখ্যা বৃদ্ধিরও পরিকল্পনা করছে তুরস্ক। দেশটির ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আলি এরবাশ জানান, সারা দেশে এখন সনদধারী ২ লাখ হাফেজ আছেন এবং ৮০ হাজার শিক্ষার্থী এমন আছে যারা খুব শিগগিরই হিফজ সম্পন্ন করবে। তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ০.০২ শতাংশ নাগরিক কুরআনের হাফেজ। এটি বৃদ্ধি করে ১ শতাংশে উন্নীত করার চেষ্টা করছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সারা দেশে হাফেজ সংখ্যা হবে অন্তত ৮ লাখ ৪০ হাজার।

আলি এরবাশ জানান, তাদের দেশের ৪১ শতাংশ মানুষ দেখে দেখে কুরআন পড়তে পারেন। এটিও আরো বাড়ানোর জন্য কাজ করছেন তারা।

ইমাম-খতিবদের মাদরাসার সাফল্য
তুরস্কের মসজিদের ইমাম ও খতিবদের মাদরাসাগুলোর পক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কুরআনে কারিম মুখস্থ করানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। দেশটির ইমাম-খতিবদের মাদরাসাগুলোর একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে মাদরাসাগুলোর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৭৩টি। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬ লাখ ৬৭ হাজার।

দিয়ানাতের এই হিফজ কোর্স ইমাম-খতিবদের অন্তত ১৯৪টি মাধ্যমিক মাদরাসায় চালু করা হয়। সেখানে ভর্তি হয় ১৮ হাজার ৫৩৬ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্য থেকে ২ হাজার ৬১১ শিক্ষার্থী হাফেজ হয়ে সনদ গ্রহণ করেছে।

কাদির দিজ জানান, কুরআন হিফজের কোর্সের একাধিক ব্যাচ আছে। চার থেকে ছয় বছরের বাচ্চাদের জন্য আলাদা, উঠতি বয়সীদের জন্য আলাদা এবং বয়স্কদের জন্য আলাদা ব্যাচ। তুর্কি প্রেসিডেন্সি অব রিলিজিয়ার্স অ্যাফেয়ার্সের অধীনে সব বয়সীদের নিয়ে প্রতি বছর গ্রীষ্মে এই কোর্সের সূচনা হয়।

সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।