‘প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন’ এবং ‘পিএফআই প্রোপার্টিজ লি:’র নামক দু’টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৭০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভেঙ্গে দেয়া পরিচালনা পর্ষদ। ১৫৮ তম পর্ষদ সভার ভুয়া সার-সংক্ষেপ তৈরি করে সেটির বরাত দিয়ে হাতিয়ে নেয়া হয় এ অর্থ। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান মো:নজরুল ইসলামসহ ৯ শীর্ষ কর্মকর্তা পরষ্পর যোগসাজশে এ অর্থ হাতিয়ে নেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)র গভীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পৃথক ২টি মামলা করছে সংস্থাটি। আজ (মঙ্গলবার) সকালে মামলার অনুমোদন দিয়েছে কমিশন।
আসামিরা হলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’র সাবেক চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক কেএম খালেদ,অডিট কমিটির চেয়ারম্যান শাহরিয়ার খালেদ,পরিচালক এম.এ.খালেক,পরিচালক মো: মিজানুর রহমান, পরিচালক ফরিদউদ্দিন এফসিএ, পরিচালক আসাদ খান, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজ এবং বরখাস্তকৃত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়েত উল্যাহ।
দুদকের সিনিয়র উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-৩) ড. মোহাম্মদ জহিরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করেন। অপর সদস্যরা হলেন, সহকারি পরিচালক শারিকা ইসলাম ও সহকারি পরিচালক বায়েজিদুর রহমান খান।
অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাপ্ত রেকর্ডপত্রের ভিত্তিতে পারষ্পরিক যোগসাজশে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি:ও (এফআইএলআইসিএল)র ১৫৮ তম পর্ষদ সভার কার্য বিবরণীর ভুয়া সার-সংক্ষেপ সৃজন করে এ সার-সংক্ষেপের বরাত দিয়ে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লি:র ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখার, মতিঝিলে ‘এফআইএলআইসিএল’র নামে রক্ষিত ২২টি এমটিডিআর জামানত রেখে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে পিএফআই প্রপার্টিজ লি:কে ৪০ কোটি টাকার ঋণ/বিনিয়োগ সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ’৩৯ টাকা আত্মসাত করেন। যা ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি ১০৯ ও ৪০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন,২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এমএ খালেক, কেএম খালেদ,ফরিদউদ্দিন,মিজানুর রহমান,আসাদ খান এবং এমএ খালেকের পুত্র শাহরিয়ার খালেদ একই সঙ্গে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লি: এবং ‘প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশন’র পরিচালনা পর্ষদ সদস্য। সুতরাং ফারইস্ট’র চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম,অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেমায়তে উল্যাহ, কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আব্দুল আজিজ এবং এফআইএলআইসিএল ও প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক এম.এ.খালেক, কেএম খারেদ, ফরিদউদ্দিন, মিজানুর রহমান,আসাদ খান ও শাহরিয়ার খালেদ পরষ্পর যোগসাজশের মাধ্যমে আত্মসাতের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪০ কোটি টাকা তাদেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পি.এফআই প্রোপার্টিজ লি:কে ঋণ দিয়েছেন। পরবর্তীতে এ ঋণ পরিশোধ না করে আত্মসাত করেন। এর ফলে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স লি:র মোট ৭০ কোটি ৮৩ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪৯ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে দুদকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে নন-ব্যাংকিং বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ থেকে নিজেদেরই মালিকানাধী ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে অন্তত: সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটির বিগত পরিচালনা পর্ষদ। ব্যাপক দুর্নীতি,অনিয়ম আর লুটপাটের প্রেক্ষিতে গতবছর ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন।