বঙ্গমাতা মার্কেট নির্মাণের অজুহাতে অন্যের জমি দখলে নিতে আব্দুল লতিফ নামের এক কলেজ অধ্যক্ষের নেতৃত্বে দ্বিতল ভবন এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ভবনের ইট-সাঁটার খুলে রাতের আঁধারে বিক্রি, ভবনের নিচতলার ১০-১২ ব্যবসায়ীকে রাতের মধ্যে মালপত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
আব্দুল লতিফ উপজেলার রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও রাজগঞ্জ বাজার উন্নয়ন কমিটির সেক্রেটারির পদে রয়েছেন। বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও ক্ষমতার বলে তিনি রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সেক্রেটারি হয়েছেন।
তবে আব্দুল লতিফ দাবি- বঙ্গমাতা মার্কেট নির্মাণসহ বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেই জমি উদ্ধারে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে অবহিত নন। শুক্রবার ভোর থেকে এ ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা ভেঙে ফেলার ছবি তুলতে গেলে অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফের বাহিনী বাধা দেয়।
জানা যায়, জমিটির মালিক উপজেলার হানুয়ার গ্রামের মৃত খোরশেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে নূরুল ইসলাম বিশ্বাস। তিনি ১৯৬০ সালে ৯০ বছর মেয়াদে লিজ নেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ৯০ মেয়াদী লিজকৃত জমি ৩০ বছর পর পর ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করতে হয়। সে অনুযায়ী নূরুল ইসলাম বিশ্বাসের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত লিজ পান। পরবর্তী লিজ নবায়নে নূরুল ইসলামের আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের শাখা-৪ ২০১০ সালের ১৯ ডিসেম্বর তার অনুকূলে ২য় মেয়াদে ১৯৯১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত লিজ পান।
২০১১ সালের ৯ নভেম্বর এবং তার স্ত্রী আনোয়ার খাতুন ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট মারা গেলে আশরাফুল ইসলামসহ তার ওয়ারিশরা ওই জমি লিজ পেতে আবেদন করায় ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই আশরাফুল ইসলামসহ ওয়ারিশরা লিজ পান।
৩য় মেয়াদে লিজ নবায়নে লিজ গ্রহিতাদের পক্ষে আশরাফুল হকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি লিজ গ্রহিতাদের ৩য় মেয়াদে ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০৪৯ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত লিজ নবায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি যশোর অতিরিক্ত জেলা জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) যার ব্যবস্থা গ্রহণে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ প্রদান করেন।
এরপর রেকর্ডপত্র সংশোধনপূর্বক ভূমি উন্নয়ন কর আদায়সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। সে মোতাবেক জমি মালিকদের পক্ষে আনোয়ারুল হক ২০২১ সালের ১৫ জুলাই ৯৯০ টাকা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেন।
ভবনের নিচতলায় ভাড়ায় থাকা ডা. হোসেন আলী, শাহিনুর রহমান, আইয়ুব হোসেনসহ একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ ভাঙার রাতে তাদের মালপত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এখন তাদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
জমির মালিক আশরাফুল হক জানান, ওই জায়গা তার পৈতৃক ৩ শতকসহ সর্বমোট ১৫ শতক জমি রয়েছে। লিজকৃত জমির সর্বশেষ নবায়নসহ নামপত্তন করা হয়েছে। এরপরও অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা শিমুল হোসেনসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা তাদের জমি দখলে দ্বিতল ভবন গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান জানান, অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলতে সরকারি কোনো নির্দেশনা নেই। জমির মালিক আশরাফুল হকসহ তার ৯ ওয়ারিশ; যার নামপত্তনও হয়েছে।
অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ বলেন, সেখানে বঙ্গমাতা মার্কেট করা হবে। এজন্য জমি উদ্ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রশাসনের কোনো নির্দেশনা না থাকলেও বাজার উন্নয়নে এটি করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।