যশোর প্রতিনিধি: যশোরে এক ইউপি সদস্যের হাতে দুই তরুণ-তরুণীকে অমানসিক নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তিন দিন আগে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের আব্দুলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শুক্রবার ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বারসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণ-তরুণী যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামের বাসিন্দা। তারা একে অন্যের নিকটাত্মীয় বলে জানা গেছে। অপরদিকে অভিযুক্ত আনিচুর রহমান চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য।
নির্যাতনের শিকার তরুণীর বাবা অভিযোগ করে বলেন, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আমার মেয়ে আত্মীয় এক যুবকের মোটরসাইকেলে করে চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে ওয়াজ মাহফিল শুনতে যায়। পরে ফেরার পথে তাদের গতিরোধ করে অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে এনে দুজনকেই অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, তার সহযোগী আইযুব আলী, ভুট্ট ও আব্দুল আলীমসহ অজ্ঞাত ৪-৫ জন। একপর্যায়ে তাদের দুজনকে নিয়ে একটি দোকানের ভেতরে বেধড়ক মারধর করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবারের এ ঘটনার দুটি ভিডিও শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ১ মিনিট ২৯ সেকেন্ড এবং ৪৪ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওটিতে দেখা যায়- একটি দোকানে অর্ধশতাধিক মানুষের সামনে তরুণীকে এলোপাতাড়ি জুতাপেটা করছেন ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান। ওই তরুণী মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ইউপি সদস্যের পাশে থাকা কয়েক যুবক লাথিও দেন। তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবককেও এলোপাতাড়ি মারধর করেন ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন যুবক।
অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক তরুণীর হাত ও পা ধরে রেখেছে। এরপর ইউপি সদস্যদের সঙ্গে থাকা আইয়ুব, ভুট্ট ও আব্দুল আলীমসহ তিন থেকে ৪ জন লাঠি দিয়ে তরুণীকে হাতে-পায়ে বেধড়ক মারধর করছে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবককেও একইভাবে লাঠি দিয়ে পেটান তারা। নির্যাতনের শিকার তরুণ-তরুণী বারবার ছেড়ে দেওয়ার কথা বললেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। অনেককে তাদের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার কথাও বলতে শোনা গেছে ভিডিও দুটিতে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শুক্রবার তরুণীর বাবা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত অন্য ব্যক্তিরা হলেন- সদরের আব্দুলপুর গ্রামের ভুট্টো, আজিম আলী ও তৌহিদ হাসান।
যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি ওসি রূপণ কুমার সরকার জানিয়েছেন, নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মেয়েটির বাবা যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে যশোর কোতোয়ালি পুলিশ ও ডিবি পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইউপি মেম্বারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
ভাইরাল ভিডিও অনুযায়ী নির্যাতনকারী ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান সেটা নিশ্চিত করে চুড়ামণকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন বলেন, এভাবে নির্যাতন করা উচিত হয়নি। ইউপি সদস্য অন্যায় করেছেন।