দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে দুই বছর মেয়াদি একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম এবং প্রেসিডেন্ট হিসাবে অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান অথবা ড. কামাল হোসেনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। ১৬ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রস্তাবনা পেশ করেন।
প্রস্তাবনায় জাতীয় সরকারের একটি রূপরেখাও তুলে ধরেছেন তিনি। এতে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন নীতিতে আস্থা সৃষ্টি, সুশাসন নিশ্চিত করা এবং কয়েকটি ক্ষেত্রে সংবিধানের পরিবর্তনের জন্য প্রেসিডেন্টের অধ্যাদেশ ও গণভোটে একটি সর্ব দলীয় জাতীয় সরকার হতে পারে। এই সরকারের সদস্যবৃন্দ, ন্যায়পাল ও বিভিন্ন কমিশনের চেয়ারম্যানগণ ২০২৮ সন পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তাদের সকল আর্থিক তথ্য জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে।
প্রস্তাবনায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতীয় সরকারের প্রথম তিন মাসের মধ্যে নতুন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্বাচনী আইনের কিছু ধারার সংস্কার, গণভোট এবং ‘না’ ভোটের প্রচলন, প্রশ্নবিদ্ধ সংসদকে লক্ষ ভোটারের স্বাক্ষরে প্রত্যাহার ব্যবস্থা, জনস্বার্থ সম্পর্কিত বিভাগে ন্যায়পাল নিয়োগ, প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধকরণ এবং ১৯৮২ সনের জাতীয় ওষুধ নীতি পুরোপুরি কার্যকর করে, ওষুধ, শৈল্য চিকিৎসা ও রোগ নিরীক্ষার দর সরকার স্থির করে দেবেন। পর্যাপ্ত লাভ দিয়েও ওষুধের সর্বোচ্চ বিক্রিমূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে। অপ্রয়োজনীয় ও প্রতারণামূলক ওষুধ বাতিল হবে। সকল ওষুধ কোম্পানিসমূহকে একাধিক কাঁচামাল উৎপাদনে প্রণোদনা দেয়া হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, মানহানির মামলা করতে হলেক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে ন্যূনতম ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা কোর্ট ফি দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির শহরে ফৌজদারি মামলা করতে হবে। একই মামলা বিভিন্ন জেলার একাধিক আদালতে করা যাবে না।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক কর্মী ও আলেমদের জামিন নিশ্চিত করে এক বৎসরের মধ্যে তাদের বিচার শেষ করে রায় কার্যকর করা হবে। সুশাসন ও সকল অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ১৫/১৭টি প্রদেশ/স্টেটে বিভক্তকরণ, প্রত্যেক প্রদেশে/স্টেটে ৬-৭ জন বিচারপতি সমন্বিত হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠা এবং সুপ্রিম কোর্টে একটি সার্বক্ষণিক সাংবিধানিক বেঞ্চ সৃষ্টিসহ সুপ্রিম কোর্টে ৬টি স্থায়ী বেঞ্চ থাকবে-(১) ফৌজদারি, (২) দেওয়ানী, (৩) নির্বাচন ও মৌলিক অধিকার, (৪) কোম্পানি বিরোধ ও আয়কর সংক্রান্ত, (৫) সকল প্রকার দুর্নীতি বিষয়, (৬) যৌন নিপীড়ন ও নারীদের অধিকার। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসা অবধি, আদালতের সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, সরকারি চাকরিতে শিক্ষিত বেকাররা ৪০ বছর বয়স অবধি অংশ নিতে পারবে। তবে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ৩০ বছরের মধ্যে যোগ দিতে হবে। চিকিৎসা পেশাজীবীদের স্বল্পতা নিরসনে, সুস্থ থাকলে ৭৫ বৎসর পর্যন্ত মেট্রোপলিটন শহরের বাইরে কর্মে পুনঃনিয়োগ পাবেন। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সকল সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিশ্চিত করা হবে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে ২ কোটি দরিদ্র পরিবারের জন্য সাপ্তাহিক রেশনিং চালু হবে, মাসিক ১০০ টাকায় তিন বাল্বের বিদ্যুৎ সুবিধা এবং মাসিক ২০০ টাকার প্রিমিয়ামে ওষুধসহ সকল প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা পাবেন। দুর্নীতি তথ্যের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবে না।
ভোটার তালিকা সংশোধন, জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন সহজ করা। জাতীয় রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের দলীয় ব্যানারে ইউনিয়ন ও উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
পেশাজীবী, বয়োজ্যেষ্ঠ অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ ও সম্মানী ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন প্রত্যাহার করে ১৮ মাসের মধ্যে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সমাপন।
জাতীয় সরকারের প্রথম বাজেটে বার্ষিক ব্যক্তিগত আয় ৫ লাখ টাকা অবধি আয়কর মুক্ত হবে, সকল মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী আমদানি শুল্কমুক্ত হবে। ৫% সুদে কৃষিতে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে এনজিওদের মাধ্যমে। কারাগার, পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর হাসপাতালসমূহ সরাসরি এএমসি কর্তৃক পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে, ফলে দুর্নীতি বিলুপ্ত হবে। প্রত্যাগত প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে ভিআইপি সেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে, শবদেহ সরকারি খরচে দেশে আনা হবে। প্রত্যেক প্রবাসী ৫০ লাখ টাকার জীবনবীমা সুবিধা পাবেন। আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। একইসঙ্গে প্রদেশ/স্টেট সংসদের নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশ/স্টেট গভর্নর মনোনয়ন দেবেন, তারা নির্বাচিত হতে পারেন প্রাদেশিক সংসদ সদস্য দ্বারা।
জাতীয় সরকার প্রস্তাবনায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যাদের নাম যে পদের জন্য উল্লেখ করেছেন তা হলো, সরকারের হবেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান অথবা ড. কামাল হোসেন। জনসংযোগ, স্বরাষ্ট্র ও জন প্রশাসনের দায়িত্বসহ প্রধানমন্ত্রী হবেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুর্নীতি দমনে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের তালিকা প্রণয়নে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, জবাবদিহিতামূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়া প্রতিরক্ষায়। আইন, সংসদ ও সংবিধান সংস্কারে ব্যারিস্টার মইনূল হোসেন সঙ্গে মানবাধিকার ও আইন কমিশনে অধ্যাপক আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র ও বৈদেশিক সম্পর্কিত আবুল হাসান চৌধুরী (কায়সার), প্রতিমন্ত্রী বিএনপি’র শ্যামা ওবায়েদ, অর্থ ও দরিদ্রতা নিরসনে ড. বিনায়ক সেন, ব্যাংক ও মানিলন্ডারিং নিয়ন্ত্রণে ড. সালেহ উদ্দিন আহমদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে এস এম আকরাম, সংখ্যালঘু ও আদিবাসীর দায়িত্বে অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, বৈদেশিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত দায়িত্বে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। শিক্ষা ও মানব উন্নয়নে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে অধ্যাপক কাজী কামরুজ্জামান, সঙ্গে ওষুধ প্রশাসনের প্রধানের দায়িত্বে বিএসএমএমইউ অধ্যাপক সাইদুর রহমান খসরু এবং মেডিকেল ও প্যারামেডিকেল শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের দায়িত্বে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি অধ্যাপক আবুল কাশেম চৌধুরী, শিল্প বাণিজ্যের দায়িত্বে শেখ বসিরুদ্দিন আকিজ, তথ্য সম্প্রচার ও মিডিয়া দায়িত্বে এ কে আজাদ, স্থানীয় শাসন ও প্রদেশ/স্টেট সৃষ্টি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ড. তোফায়েল আহমেদ, নৌ-পথ, নৌবন্দর, আন্তর্জাতিক নদীর পানির অধিকার সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে প্রকৌশলী ইনামুল হক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দায়িত্বে প্রকৌশলী সামসুল আলম, নগর উন্নয়ন ও যোগাযোগে স্থপতি মুবাশ্বের হোসেন। প্রবাসী অভিবাসীদের কল্যাণ এবং বৈদেশিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন ও শিক্ষক-ছাত্র স্থাপনে প্রবাসী শিক্ষাবিদ অধ্যাপক হাসনাত হোসেন, এমবিই। ধর্ম ও নৈতিকতায় অধ্যাপক পারভীন হাসান, সংস্কৃতি-যাত্রা ও মেলার প্রসারে নবনীতা চৌধুরী, পরিবেশ ও প্রাণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, শ্রমিক কল্যাণ ও নিরাপদ সড়কের দায়িত্বে বাম সম্মিলিত জোট প্রতিনিধি মনজুরুল আহসান। নারী ও যুব উন্নয়নে বিএনপি প্রতিনিধি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মানবাধিকার ও সমাজ কল্যাণে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি শেখ রেহেনা এবং খাদ্য সরবরাহ ও রেশনিংয়ে মতিয়া চৌধুরী, সঙ্গে কৃষি ও কৃষক সমবায় প্রসারে ড. শওকত আলী। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …