পাকিস্তানের সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ফাওয়াদ চৌধুরী মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হামজা শেহবাজকে ভিন্নমতের আইন প্রণেতাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে তাদের পদ থেকে সরে যেতে আহ্বান জানিয়েছেন।
সাবেক তথ্যমন্ত্রী দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সাথে কথা বলার সময় বলেছিলেন যে, শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত কেবল প্রাদেশিক সরকারের উপর প্রভাব ফেলবে না, এটি ফেডারেল সরকারকেও ধাক্কা দেবে, পাশাপাশি পিএমএল-কিউ-এর দুই আইন প্রণেতাও দলত্যাগের ধারার মুখোমুখি হতে পারেন।
শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, চৌধুরী বলেছেন যে পিএমএল-কিউ নেতা পারভেজ এলাহি দুইজন পিএমএল-কিউ আইন প্রণেতাকে নোটিশ জারি করতে পারেন; তারা হচ্ছেন বিনিয়োগ বোর্ডের মন্ত্রী চৌধুরী সালিক হুসেন এবং জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও গবেষণা মন্ত্রী তারিক বশির চিমা।
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সরকারের মোট ১৭৪ ভোটের কথা উল্লেখ করে চৌধুরী বলেছিলেন যে, স্পিকার, এমকিউএম-পি-এর মৃত সদস্য এবং পিএমএল-কিউ-এর দুই সদস্যের ভোট গণনা না করা হলে সরকারের কাছে বর্তমানে ১৭০ ভোট রয়েছে। তিনি দাবি করেন অন্য একজন আইনপ্রণেতাও সরকার ত্যাগ করতে পারে। এটি সংখ্যাটি ১৬৯-এ নামিয়ে আনবে। তিনি আইন প্রণেতার নাম উল্লেখ করা থেকে বিরত ছিলেন কিন্তু পুনর্ব্যক্ত করেন যে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে সরকারের সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
আগের দিন, শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছিল যে, বিদ্রোহী সংসদ সদস্যদের ভোট সংসদে গণনা করা হবে না। ‘আজকের রায়ের পর শেহবাজ শরীফ এবং হামজা শেহবাজ উভয়ই তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন,’ ফাওয়াদ রায় ঘোষণার পরপরই গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলার সময় বলেছিলেন। তিনি যোগ করেছেন যে, পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত কারণ এটি প্রমাণিত হয়েছে যে ভিন্নমতের আইন প্রণেতাদের ভোট গণনা করা হবে না
পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ নেতা বলেছেন যে, মূল রায়ের পর কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক উভয় সরকারই ভেঙে পড়েছে। ফাওয়াদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট তার ভিন্নমতাবলম্বী আইনপ্রণেতাদের বিষয়ে পিটিআই-এর অবস্থান অনুমোদন করেছে। ‘যেখান থেকে দেখছি, বিধানসভা ভেঙে দেয়া হচ্ছে এবং দেশ নতুন নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে।’ সূত্র: ট্রিবিউন।
পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৩(এ) ধারার ওপর প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্সে মতামত জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিভক্ত রায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক বলেছেন, যেসব এমপি দলত্যাগী হবেন, পার্লামেন্টে তাদের ভোট গণনা করা হবে না। এর ফলে পাঞ্জাবে আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে ইমরান থানের দল পিটিআই।
এ সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের তিনজন বিচারপতি। এর বিরোধী ছিলেন দু’জন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারক তাদের রায়ে বলেছেন, সংবিধানের ৬৩(এ) ধারার অধীনে চারটি ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভোট গণনা করা হবে না। এই চারটি ক্ষেত্র হলো প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচন। আস্থা ভোট বা অনাস্থা ভোট। সংবিধান সংশোধনী বিল। অর্থ সংক্রান্ত বিল।
সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেই প্রস্তাব পাস হওয়ায় তিনি ক্ষমতাচ্যুতও হন। কিন্তু তার আগে তার দল থেকে বেশ কিছু এমপি বেরিয়ে গিয়ে বর্তমানে ক্ষমতাসীন জোট বা তখনকার বিরোধী জোটের সঙ্গে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার ঘোষণা দেন। এতে ওই সময় ইমরান খানের পতন নিশ্চিত হয়ে যায়।
এর পরে সুপ্রিম কোর্টে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৩(এ) ধারায় মতামত চেয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স পাঠান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। সুপ্রিম কোর্টে এ নিয়ে চুলচেরা বিম্লেষণ করেন ৫ জন বিচারকের প্যানেল। এর মধ্যে আছেন প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল, বিচারক ইজাজুল আহসান, বিচারক মুনিব আখতার, বিচারক মাজহার আলম খান মিয়াখেল এবং বিচারক জামাল খান মান্দোখাইল।
মঙ্গলবার ওই রেফারেন্সের চূড়ান্ত মতামত দেন বিচারকরা। কোনো এমপি দলত্যাগ করে দলের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে ভোট দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মত দেন তিনজন বিচারক- উমর আতা বান্দিয়াল, বিচারক ইজাজুল আহসান, বিচারক মুনিব আখতার। অন্য দুই বিচারক এর বিরুদ্ধে মত দেন
রেফারেন্সে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি চারটি প্রধান প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চেয়েছিলেন। তা হলো অনুচ্ছেদ ৬৩(এ)-এর কি সীমিত বা বিস্তৃত উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা থাকা উচিত? দলত্যাগী সদস্যদের ভোট কি সমান গুরুত্ব দিয়ে গণনা করা হবে? দলত্যাগীদের কি যাবজ্জীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হবে? দলত্যাগ, ফ্লোর ক্রসিং এবং ভোট কেনা প্রতিরোধে কি ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। সূত্র: ডন।