প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক পরিবহন নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে দেশের বিকাশমান অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। বর্তমান সরকারের শাসনামলে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে আমরা নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, ১৯ মে হতে সপ্তাহব্যাপী ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২২’ পালন করা হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। এ উপলক্ষে নৌ-খাতের নৌযান মালিক, নাবিক ও যাত্রীবৃন্দসহ সকল অংশীজনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান তিনি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রশিক্ষিত জনবল ও নিরাপদ জলযান, নৌ নিরাপত্তায় রাখবে অবদান’ সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার নৌ সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে নৌপথের সংরক্ষণ ও নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের সকল নদী দখলমুক্ত করা এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন নদীবন্দর স্থাপনসহ সকল নদীবন্দরের আধুনিকীকরণ, নদীবন্দরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা, নৌ পথের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা, পটুয়াখালী জেলায় তৃতীয় সমুদ্রবন্দর স্থাপন, উপকূলীয় দুর্গম পথে যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থা চালুকরণ, কন্টেইনার টার্মিনাল স্থাপন, স্থলবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নসহ আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ায় অবস্থিত লাইট হাউজসমূহ আধুনিকীকরণ এবং নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর, দুবলারচর ও কুয়াকাটায় নতুন লাইটহাউজ ও কোস্টাল রেডিও স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে মেরিটাইম দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় এলাকায় দুর্ঘটনা কবলিত সকল ধরনের নৌযান উদ্ধার কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান করা যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌ দুর্ঘটনা হ্রাসে নদীবন্দরসমূহে নিরাপত্তা জোরদার, ত্রুটিপূর্ণ নৌযান শনাক্তকরণ, নাবিকদের প্রশিক্ষণ আধুনিকীকরণ, নৌ নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম ও আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণসহ নানাবিধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর ফলে নৌযান ও নৌযানে যাত্রী সাধারণের চলাচল আরো নিরাপদ হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের বুকে বহমান শত শত নদ-নদী বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলিত হচ্ছে। এ সকল নদ-নদী এবং বঙ্গোপসাগরের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। নদীপথে মালামাল পরিবহণ সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ। নদীপথেই দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের সিংহভাগ পরিবাহিত হয়।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই পঞ্চাশের দশক থেকে নদী ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভাবতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সদ্য স্বাধীন মাতৃভূমির শাসনভার হাতে নিয়েই নদীমাতৃক বাংলাদেশের নৌচলাচল ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নৌপথের পলি অপসারণ ও নদী খননের জন্য স্বাধীন দেশে ৭টি ড্রেজার আমদানির মতো সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নদীর প্রতি তাঁর ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৌ সেক্টরের গুরুত্ব অনুধাবন করে উন্নয়নের যে ধারা শুরু করেছিলেন, তা অনুসরণ করে বর্তমান সরকার নৌ পরিবহণের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছে। যাত্রীদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা নৌপথের উন্নয়নে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করেছি। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হতে চলেছে। সরকার বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, নিরাপদ নৌচলাচল নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আরো তৎপর হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ নৌ-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী সরকারেব পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাসমূহকে প্রচেষ্টা ও সহযোগিতা প্রদানের উদাত্ত আহ্বান জানান।
তিনি ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ ২০২২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।