বাগেরহাটে দগ্ধ হয়ে গৃহবধূর মৃত্যু, হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে রহস্য

বাগেরহাট প্রতিনিধি:

আগুনে দগ্ধ হয়ে গৃহবধূ জাকিয়া বেগম (৩০) এর মৃত্যু নিয়ে ক্রমশ বাড়ছে রহস্য। সে আসলেই আত্মহত্যা করেছে নাকি তার স্বামী তাকে পুড়িয়ে মেরেছে এ বিষয়ে মুখ খুলছেনা কেউই। তার স্বামী বাগেরহাট জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য, সদর উপজেলা যুবলীগ নেতা টিটু কাজী। মৃত জাকিয়া বেগম তার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিল। সে সদর উপজেলার সদুল্ল্যাপুর গ্রামের ফরহাদ হাওলাদারের বড় মেয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের কররী সিএন্ডবি বাজার এলাকায়। দগ্ধ গৃহবধূকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তাদের স্বজনেরা এবং সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। দগ্ধ হয়ে গৃহবধূর মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। ঘটনার কয়েক দিন অতিবাহিত হলেও এখনও উদঘাটন হয়নি মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য। পরিবারের পক্ষ থেকেও করা হচ্ছে না কোনো অভিযোগ।

মৃত গৃহবধূর বাবা ফরহাদ হাওলাদার বলেন, প্রায় এক বছর আগে যুবলীগ নেতা সদর উপজেলার উৎকুল এলাকার টিটু কাজীর সাথে আমার মেয়ে জাকিয়ার বিবাহ হয়। উভয়ের এটা দ্বিতীয় বিবাহ। জাকিয়ার পূর্বের সংসারে অন্নিতা (১১) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। টিটু কাজীর স্ত্রী ও দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। এ পর্যন্ত আমার মেয়ে তার স্বামীর বাড়ি যায় নাই। গত ২৩/২৪ দিন পূর্বে সিএন্ডবি বাজারে ইলেকট্রনিক্স মালামালের একটি শোরুম দিয়ে ব্যবসা করে আসতে ছিল। গত বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুর দেড়টায় খবর শুনেছি আমার মেয়ে জাকিয়া বেগম সিএন্ডবি বাজার তার ইলেকট্রনিক্সের শোরুমের মধ্যে আগুনে দগ্ধ হয়েছে। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে প্রেরণ করে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৩ মে) সকাল ৯ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। প্রকৃত ঘটনা কি, তার মেয়ে কিভাবে দগ্ধ হয়েছে, সে সম্বন্ধে কোন কিছুই বলতে পারছেনা সে। তার স্ত্রী আরিফা বেগম (৫৫) এবং ছোট মেয়ে জিনিয়া (১৮) বৃহস্পতিবার দগ্ধ হওয়ার পর থেকে তার সাথে রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ঘটনাস্থলে উপস্থিত, চায়ের দোকানদার আহমদ আলী, কমল নন্দী, কমল দাস সহ অনেকেই আগুনে দগ্ধদের কথা স্বীকার করে বলেন, তখন দুপুর দেড়টা। তারা শোরুম এর সামনেই ছিল। হঠাৎ চিৎকার শুনে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দেখে শোরুমের ভিতরে জাকিয়া বেগমের শরীরে আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে। তখন তারা বিভিন্নভাবে পানি এনে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে। পরবর্তীতে স্থানীয় দু’জন মহিলা এসে তার শরীরে কাপড় জড়িয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর দগ্ধ জাকিয়াকে একটি প্রাইভেটকারে উঠিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এঘটনায় টিটু কাজীর হাতেও আগুনের সেকা লাগে। শো রুমের মধ্যে তারা দু’জনেই ছিল। তবে কি কারনে বা কিভাবে তার গায়ে আগুন লেগেছে তার সঠিক কারণ কেউ জানাতে পারেনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে জাকিয়া বেগমের স্বামী টিটু কাজীর সাথে যোগাযোগের জন্য তাঁর মুঠোফোনে কল দিলে মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কোন ভাবেই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাগেরহাট জেলা পুলিশের সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মাহামুদ হাসান এবং বাগেরহাট সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম আজিজুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মৃতদেহ এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাবার বাড়ি সাদুল্যাপুরে কবরস্থ করা হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।