পৌরসভার প্রধান নির্বাহীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় বাংলাট্রিবিউনের সাংবাদিককে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তলব

দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে ‘কাগজপত্র বা সাক্ষ্যপ্রমাণ’ দিতে এর প্রতিবেদক বাহাউদ্দিন ইমরানকে তলব করেছে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ‘জেলা প্রশাসন এভাবে কোনও সাংবাদিককে কার্যালয়ে তলব করতে পারে না। প্রতিবেদকের যা বক্তব্য সেটা তিনি প্রতিবেদনে বলেছেন, তারপরও তাকে জেলায় ডেকে পাঠানো স্পষ্টতই হয়রানি এবং পরোক্ষ হুমকি।’

গত ২৬ এপ্রিল সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান নির্বাহী (সিইও) নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে ‘অবাধ্য হলে এখনও ক্রসফায়ারের হুমকি দেন নাজিম উদ্দিন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউন। এ প্রতিবেদনের জেরে সোমবার (২৩ মে) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের (স্থানীয় সরকার শাখা) উপপরিচালক (উপসচিব) মাশরুবা ফেরদৌস সাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে প্রতিবেদককে তলব করা হয়। নোটিশে আগামী ৩০ মে সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে এই প্রতিবেদকসহ সংশ্লিষ্টদের ‘তদন্ত অনুষ্ঠানে’ স্ব স্ব পক্ষের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বা সাক্ষ্যপ্রমাণসহ যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এতে আরও জানানো হয়েছে, ‘প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়ে স্থানীয় সরকারের খুলনা বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক তদন্ত করবেন।’

নোটিশ

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, একমাত্র আদালত চাইলে কাউকে বিচারিক ক্ষমতাবলে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ডাকতে পারে। প্রতিবেদকের যা বক্তব্য সেটাতো তিনি প্রতিবেদনে বলে দিয়েছেন। তারপরও তাকে জেলায় ডেকে পাঠানো সাংবাদিকের জন্য হয়রানি।

গ্লোবাল টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা মনে করেন, ‘প্রতিবেদনের পরে সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে যাওয়া এক কথায় ভয়ঙ্কর’।

তিনি বলেন, ‘এই লোককে (নাজিম উদ্দিন) যখন তার আগের অপরাধের জন্য ক্ষমা করা হয়, তখনই নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই ব্যক্তির আচরণ কর্মকর্তাসুলভ নয় এবং তার ভেতরে নীতি-নৈতিকতার বিন্দুমাত্র বালাই নেই। এরকম ব্যক্তি প্রশাসনে থাকলে জনগণের শুধু ক্ষতি নয়, পুরো জনপ্রশাসন বিতর্কিত হচ্ছে।’

‘একবার সাংবাদিক নির্যাতন করে অপদস্ত হয়েও তার শিক্ষা হয়নি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি তাকে গণমাধ্যমের দুশমন হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, ‌‌‌‌’তা‌র (নাজিম উদ্দিন) বিরুদ্ধে এমনিতেই একটি গুরুতর ফৌজদারী মামলা পেন্ডিং রয়েছে, সেটি তদন্তাধীন। পাশাপাশি ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংসে তার অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে নতুন করে আসা অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশকে কেন্দ্র করে সোর্সের তথ্য প্রকাশে কোনও সাংবাদিককে বাধ্য করার সুযোগ নেই। তবে সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করতে পারে।’

একমাত্র আদালত বিচারিক ক্ষমতাবলে কাউকে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ডাকতে পারেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নোটিশ দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সোর্স প্রকাশে বাধ্য করার সুযোগ নেই। বরং সংবাদপত্রের প্রতিবেদনগুলোকে সাক্ষ্য হিসেবে তারা আমলে নিতে পারে।’

তদন্ত কমিটির দ্বারা সাংবাদিক তলবের ঘটনাকে ‘হয়রানি’ উল্লেখ করে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘রিপোর্টারের যা বক্তব্য সেটাতো তিনি প্রতিবেদন আকারেই বলে দিয়েছেন। তারপরও তাকে জেলায় ডেকে পাঠানো সাংবাদিকের জন্য হয়রানি।’

সাংবাদিকরা এমনিতে নানান চাপে থাকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এধরনের ঘটনা ঘটতে থাকলে সেটা সাংবাদিকতার জন্য বড় সংকট দেখা দিবে। স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। বর্তমান সময়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু তারপরেও একের পর এক এমন ঘটনা ঘটে চলেছে সেটা উদ্বেগের।’

এসময় তিনি ভোরের কাগজের প্রকাশক ও সম্পাদকসহ পাঁচ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হওয়া কুমিল্লার একটি মামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মামলা হয়েছে, সেই প্রতিবেদন সরকারি নথির ওপর ভিত্তি করে করা। এধরনের হয়রানি বন্ধ হওয়া জরুরি।’

মানবাধিকারকর্মী নূর খান মনে করেন প্রতিবেদনের কারণে রিপোর্টারকে নোটিশ দিয়ে তলব করার এই চর্চা প্রতিহত করা উচিত। তিনি বলেন, ‘এটা সাংবাদিকদের জন্য স্পষ্টতই হয়রানিমূলক। তিনি প্রতিবেদনে যা বলার বলেছেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে সেটাকে আমলে নিয়ে তদন্ত করতে পারেন। এছাড়া বাড়তি তথ্য নিয়ে রিপোর্টারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে, তার অফিসে এসে কথা বলা যেতে পারে। এভাবে এলাকায় ডেকে নেওয়া পরোক্ষ হুমকি হিসেবে দেখা যেতে পারে।’

এই চর্চা প্রতিহত করা উচিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তা না হলে কথায় কথায় যদি এভাবে ডাকা হয়, তাহলে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।’banglatribune

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।