নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চারটি বুথে বিগত ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় পূণঃগননা শুরু হয়েছে।
বৃহষ্পতিবার দুপুর দু’টোয় সাতক্ষীরার নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাসিরউদ্দিন ফরাজীর নির্দেশে তার বিচারকক্ষে এ গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে মাসুদুল আলমের ভোট কমেছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইউপি চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত জিএম শফিউল আযম লেনিন,
বিএনপি নেতা জিএম মাসুদুল আলমসহ আটজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মাসুদুল আলম ৫৫৩ ভোটে জয়লাভ করেন। গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনীমুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে, চাঁদনীমুখা পিজে আলীম মাদ্রাসা, সোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারি প্রিজাইডিং অফিসাররা অনিয়ম করেছেন রিটার্ণিং অফিসারে কাছে এমন অভিযোগ করেও প্রতিকার না পাওয়ায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিএম শফিউল আযম লেনিন সাতক্ষীরা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে ১০/২২ নং মামলা করেন। মামলায় জিএম মাসুদুল আলমসহ ১৪জনরকে বিবাদী করা হয়। আদলত বিবাদীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণোর নোটিশ জারির নির্দেশ দেন। গত ২১ এপ্রিল মাসুদুল আলম আদালতে জবাব দাখিল করেন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে পরে আদেশ জানানো হবে বলা হলেও গত ৫ মে তারা জানতে পারেন যে ২৬ মে পূর্ণগণনার দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মাসুদুল আলম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক যুগ্ম জেলা জজ -২য় আদালতের বিচারক ফারুক ইকবাল তা গ্রহণ করেননি।
একপর্যায়ে মাসুদুল আলম আপিল আবেদন গ্রহণ না করার বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ি গত ২২ মে সেরেস্তাদারের কাছে রিভিশনের(১৯/২২) আবেদন জমা দেন। পরদিন আদালতে উভয়পক্ষের শুনানী হলেও কাগজে কলমে ২৪ মে শুনানী দেখিয়ে রিভিশন খারিজাদেশ দেওয়া হয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে মাসুদুর রহমান গত ২৫ মে মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মামুনুর রহমানের আদালতে সিভিল রিভিশনের জন্য আবেদন করেন, যার টিণ্ডার নং ২৬৮৭/২২। ওই রিভিশন শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে মমে মাসুদুল আলমের আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আতিকুর রহমান তার প্যাডে লিখে দেন।
মাসুদুল আলমের আইনজীবী অ্যাড. জিল্লুর রহমান ও অ্যাড. এখলেছার আলী বাচ্চু জানান, বৃহষ্পতিবার তারা আতিকুর রহমানের আইনজীবী সার্টিফিকেটসহ ভোট গণনা করার জন্য সময়ের আবেদন করলে বিচারক নাসিরউদ্দিন ফরাজি তা না’মঞ্জুর করেন। এরপরপরই গত ২১ এপ্রিলের আদেশটি উভয়পক্ষের আইনজীবীকে অবহিত করার নির্দেশ থাকলেও তা না করা ও বিবাদী পক্ষ পূণঃ গণনার শুনানীর জন্য প্রস্তুত নেই এমন কথা উল্লেখ করে আদালতে আরো একটি সময়ের আবেদন করেন। এ নিয়ে শুনানীর একপর্যায়ে আদালত ১০ মিনিটের জন্য মুলতুবি করা হলো এমন কথা বলে বিচারক তার খাস কামরায় চলে যান। পরবতী কয়েক মিনিটের মধ্যে বিচারক সেরেস্তাদার শহীদুল ইসলামকে তার খাস কামরায় ডেকে মাসুদুল আলমের দ্বিতীয় সময়ের আবেদনটি ফেরৎ দেন। দুপুর দু’টোর দিকে উভয়পক্ষের আইনজীবী, মামলার বাদি জিএম শফিউল আযম লেনিন ও মাসুদুল আলমের উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে বৃহষ্পতিবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে গণনা শেষে দেখা গেছে চারটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থী জিএম শফিউল আযম লেনিন পেয়েছেন ৮৫৪ ভোট ও টেবিল ফ্যান প্রার্থী জিএম মাসুদুল আলম পেয়েছেন ২ হাজার ৬৭৯ ভোট। ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনী ফলাফলে ওই চার কেন্দ্রে টেবিল ফ্যান পায় তিন হাজার ১০০ ভোট ও নৌকা পায় ৬৬৭ ভোট। তবে ১৭৩ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরাতন বিল্ডিং হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে) নৌকা প্রার্থী ২৩৯ ভোট পেলেও পূণঃগণনায় তিনি ৩০ ভোট পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রে দুইটি বাণ্ডিল (প্রতিটি ১০০ টি করে) পাওয়া যায়নি। চাঁদনিমুখা পিজে আলীম মাদ্রাসা কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর ১৯৫ ও ১৭৩ নং সোরা সরকরি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৫৪ ভোট বেড়েছে। সেক্ষেত্রে সোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে (পুরাতন বিল্ডিং ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা ) কেন্দ্রে দুটি বাণ্ডিল নৌকার পক্ষে গেলেও চারটি কেন্দ্রে নৌকার ভোট বাড়ছে ৩৮৭টি। ৫৫৩ ভোট থেকে ৩৮৭ ভোট কমে গেলেও মাসুদুল আলম ১৬৬ ভোটে এগিয়ে থাকবেন।
মামলার বাদি জিএম শফিউল আযম লেনিনের আইনজীবী অ্যাড. পঙ্কজ কুমার মল্লিক বলেন, পূণঃগণনায় নৌকার ভোট বেড়েছে। তবে তবে ১৭৩ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরাতন বিল্ডিং হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে) নৌকা প্রার্থী ২৩৯ ভোট পেলেও পূণঃগণনায় তিনি ৩০ ভোট পেয়েছেন। ওই কেন্দ্রে দুইটি বাণ্ডিল (প্রতিটি ১০০ টি করে) পাওয়া যায়নি। আদালত এ গণনা শেষে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করবেন।