সংসদ বাতিল করতে হবে

জনসংহতি আন্দোলনের সঙ্গে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ‘যুগপৎ ধারায়’ আন্দোলনে ঐক্যমত হয়েছে দুটি দল।

বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একটা গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশের সব মানুষকে একতাবদ্ধ করে, রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে এই ভয়াবহ যে ফ্যাসিবাদী সরকার যারা আমাদের সব অর্জনগুলোকে ধ্বংস করে দিচ্ছে- তাদেরকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা একমত হয়েছি। যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি।’

মঙ্গলবার দুপুরে হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

সংলাপে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ‘রাজবন্দিদের’ মুক্তি, বিরোধী আন্দোলনে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারসহ বিদ্যমান সংবিধানের মৌলিক সংশোধনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি তা হচ্ছে যে, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে। সংসদ বাতিল করে আমরা যেটা বলেছি যে, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করতে হবে। তাদের অধীনে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে, তাদের মাধ্যমে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমেই ভবিষ্যতে পার্লামেন্ট ও সরকার গঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় মৌলিক কোনো মতভেদ দেখিনি। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের নামের বিষয়ে মতভিন্নতা থাকতে পারে, অন্তর্বর্তীকালীন না নিরপেক্ষ সরকার। এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। আমরা আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারব।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, আজকের আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকবে। আমরা বিশ্বাস করি, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা যেটা শুরু করেছি প্রক্রিয়া সেটা অতি দ্রুত শেষ করে একটা যৌক্তিক পর্যায় এসে পৌঁছাতে পারব এবং এই সরকার যারা আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে, যারা আমাদের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে হত্যা করছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা ফলপ্রসূ আন্দোলন করে এতে জয়যুক্ত হতে সক্ষম হব।’

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে এটা স্পষ্টভাবে মনে করি, বর্তমান সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন দরকার এবং এইভাবে যদি একটা জাতীয় রূপরেখা আজকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে হাজির হয় জনগণ নতুন করে আন্দোলিত হবে। একটা বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারব। সেজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে ঐক্যমত হয়েছি যে, যুগপৎ ধারায় আন্দোলন যার যার অবস্থান থেকে পরিচালনা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে এককাতার দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং এরা প্রত্যেকেই ভোটাধিকারের দাবিতে আজকে নিজেরা আন্দোলন করবেন। একটা জাতীয় ঐক্যের জায়গায় সরকার যেহেতু দাঁড় করিয়ে দিয়েছে- এই জাতীয় আন্দোলন আগামী দিনে সবাই নিজের অবস্থান থেকে সাধ্যমতো করবেন। এরমধ্যে কীভাবে সমন্বয় গড়ে তোলা যাবে সেই সমন্বিত যুগপৎ ধারার বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং ভবিষ্যতেও এ বিষয়ে আরও আলোচনা হবে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে একটা কাঠামো, একটা রূপরেখা নিশ্চিতভাবে সামনে আসবে।’

এ সময় জোনায়েদ সাকি সংবিধান নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যারাই ক্ষমতায় থাকে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে এবং দেশের মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এই বিষয়ে সমাধান করতে গেলে বাংলাদেশের বিরাজমান যে সাংবিধানিক ক্ষমতা আছে যেটার ওপরে ভর করে বর্তমান সরকার ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে। এই সাংবিধানিক ক্ষমতা কাঠামোর বদল দরকার। সেজন্য আমরা সাংবিধান সংস্কারের সুনির্দিষ্ট কতগুলো প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছি। যেমন আমরা মনে করি, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ আলাদা করতে হবে, নিম্ন আদালতকে উচ্চ আদালতের অধিনস্থ করতে হবে সমস্ত দিক থেকে তার নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিসহ …। উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি করতে হবে এবং জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘন করার কোনোরকম ততপরতা কিংবা কোনোভাবেই জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা যাবে না।’

ফখরুল বলেন, ‘কতগুলো মৌলিক বিষয় এদেশের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন যে কথাগুলো জোনায়েদ সাকি সাহেব বলেছেন। গণতন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে সংবিধানের পরিবর্তন এবং কতগুলো মৌলিক বিষয় আছে তার পরিবর্তন- আমরাও মনে করি যে, অত্যন্ত জরুরি এবং সেটা আলোচনার মাধ্যমে একটা জায়গা এসে পৌঁছাতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

এর আগে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টায় হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুক ও সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল আলোচনায় অংশ নেন। অন্যান্যরা হলেন- নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য তাসলিমা আখতার, মুনির উদ্দিন পাপ্পু, হাসান মারুফ রুমি, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইমরাদ জুলকারনাঈন, বাচ্চু ভুঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান, আলিফ দেওয়ান।

উল্লেখ্য, গত ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেছে বিএনপি। এর দুইদিন পর ২৭ মে বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে সংলাপ করে দলটি।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।