স্টাফ রিপোটার: পদ্মা সেতু চালু হলেও সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী সব পরিবহন এখনই পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে পারছে না। গোপালগঞ্জ জেলা মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সড়কে পরিবহন দিতে পারছেন না সাতক্ষীরার পরিবহনমালিকরা।
পরিবহন মালিকের অভিযোগ, গোপালগঞ্জ বাসমালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা না করে সেই পথে পরিবহন দিতে পারছেন না তারা। কারণ তাদের খুশি করা প্রয়োজন।
সাতক্ষীরার এক পরিবহনমালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দাবি করেন, সরকার যখন লাইসেন্স দেয়, তখন সব সড়কে চালানোর অনুমতি থাকে। তবে সড়কে চলতে গেলে জেলার পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে খুশি করতে হয়। এটা না করলে নানা রকম বাধাবিপত্তি চলে।
সাতক্ষীরা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে গেলে গোপালগঞ্জ জেলার মালিক সমিতি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ম্যানেজ করতে হবে, এ দাবি করে তিনি বলেন, তাদের কিছু দিতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা আমরা এখনো করতে পারিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আলোচনা করে আমরা রুটে পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা করব। সেই প্রক্রিয়ায় আমরা রয়েছি।
সাতক্ষীরা এসপি গোল্ডেন লাইনের সাতক্ষীরা কাউন্টারের সহকারী ম্যানেজার মিলন কুমার রায় বলেন, আমাদের গাড়িগুলো সব দৌলতদিয়া-আরিচা ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। আগামী ১ জুলাই থেকে পদ্মা সেতু ওপর দিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে যেসব যাত্রী গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, সাইনবোর্ডসহ তার আশপাশে যাবে, তারা পদ্মা সেতু হয়ে যাবে না। কারণ, তাদের ওপাশ দিয়ে ঢাকা পৌঁছে অনেক ঘুরতে হবে।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সোহাগ পরিবহন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও ইমাদ পরিবহন পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। গ্রিনলাইন পরিবহন বিকেলে যাবে। বাকি পরিবহনগুলো কখন যাবে আমি জানি না।
এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি তাহমিদ চয়নকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নিয়ম আছে জানিয়ে গোপালগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামিল সরোয়ার জানান, আলোচনা না করে কেউ পরিবহন এ সড়কে চালাতে পারবেন না, এটা নিয়ম। পদ্মা সেতু হয়ে যেতে গেলে এসে আলোচনা করুক, আবেদন করুক, আমরা অনুমতি দিয়ে দেব। কোন পরিবহন মালিক এ সড়কে গাড়ি নামাতে চাইলে তাকে আসতে বলুন। শুধু এখানে নয়, খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর— এসব জেলার মালিক সমিতি থেকেও তাকে অনুমতি নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সড়কে চলাচলের জন্য বিআরটিএ অনুমতি দেয়। আমরা অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলের জন্য অনুমতি দিয়ে থাকি। যেসব পরিবহন মালিক ইতোমধ্যে অনুমতি নিয়েছেন, সেসব পরিবহন চলাচল করছে।
এদিকে ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পণ্যবাহী ট্রাক পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভোমরা বন্দরের ব্যবসায়ী নেতারা।
রুট পারমিট না পাওয়ায় সাতক্ষীরা থেকে বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাস পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যেতে পারছে না। রোববার (২৬ জুন) পদ্মা সেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাগামী বেশিরভাগ বাস চলাচল করছে আগের রুট হয়ে।
এখনো আরিচা-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়েই এসব বাস চলাচল করছে। তবে সোহাগ পরিবহন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও ইমাদ পরিবহন বর্তমানে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাচ্ছে। গ্রিন লাইন পরিবহন এই রুটে নতুন করে যাত্রীসেবা শুরু করেছে। এছাড়া বিআরটিসিও সরাসরি সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি ঢাকা রুটে বাস চালু করবে বলে জানা গেছে।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, নতুন রুটের বিষয়ে আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ১ জুলাই থেকে জেলার বেশিরভাগ বাস পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে বলে আশা করছেন তারা।
সাতক্ষীরা একে ট্রাভেলস পরিবহনের ম্যানেজার কাজল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সব বাস এখনো দৌলতদিয়া-আরিচা ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। মালিক সমিতির নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আশা করছি, আগামী ১ জুলাই থেকে একে ট্রাভেলসসহ জেলার অন্য পরিবহনের বাসগুলো পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল করবে।’
সাতক্ষীরা লাইনস পরিবহনের ম্যানেজার মো. ইলিয়াস বলেন, ‘মালিক-মহাজনরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের বাস চালাতে কোনো সমস্যা নেই। আশা করছি ১ জুলাই থেকে বাস পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচল শুরু করবে। তবে যেসব যাত্রী গাবতলী, কল্যাণপুর, শ্যামলী, সাইনবোর্ডসহ তার আশপাশে যাবেন তাদের জন্য আরিচা-দৌলতদিয়া রুটে অমাদের যাত্রীসেবা চালু থাকবে।’
এরই মধ্যে নতুন রুটে কয়েকটি কোম্পানির বাস চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানান সাতক্ষীরা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি তাহমিদ হোসেন চয়ন।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাতক্ষীরার পরিবহন মালিকদের গাড়িগুলো এখনো নতুন রুটে চালু হয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা খুলনা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের বাস মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
ভোমরা স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাক পদ্মা সেতু হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাচ্ছে। তবে কতগুলো ট্রাক গেল, সেটি এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।