আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য, শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর, টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল বারীর জানাজা শেষ হয়েছে। শনিবার বাদ আসর শ্যামনগর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে মাওলানা আব্দুল বারীর জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নিতে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে সাধারণ মানুষের ঢল নামে।
মাওলানা আব্দুল বারীর জনপ্রিয় চেয়ারম্যান এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার জানাজায় উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। শনিবার সকাল ৯.২৫ মিনিটে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়ে ছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহ্যী রেখে গেছেন। মরহুমের জানাজা নামাজের ইমামতি করেন সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দীস রবিউল বাশার।
তিনি শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের হাওয়ালভাঙ্গী গ্র্রমের মৃত সোহরাব হোসেনের পুত্র। মাওলানা আব্দুল বারী ১৯৮৮ সালের দিকে জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। পরে ১৯৮৯ সালে শ্যামনগর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এর এক বছর পর তিনি জামায়াতের রুকনের শপথ গ্রহণ করেন। পরে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ২০০৯ ও ২০১৪ সালে একই উপজেলা থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে তিনি হামিদপুর মাদ্রাসা থেকে দাখিল, ১৯৭৭ সালে একই মাদ্রাসা থেকে আলিম, পরবর্তীতে ঢাকা আলিয়া থেকে ফাজিল ও কামিল পাশ করেন।
তার জানাজায় অংশ নেন- সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর হাফেজ রবিউল বাশার, সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, মরহুম আব্দুল বারীর ভাতিজা চেয়ারম্যান আবু তালেব, ছোট ভাই আব্দুর রহিম,উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আতাউল হক দোলন, বিএনপির সহ সভাপতি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম, শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান সাইদ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাষ্টার আব্দুল ওয়াহেদ, উপজেলা জামায়াতের আমীর,মাওলানা আব্দুর রহমান, সাবেক আমীর আব্দুল মজিদ,জামায়াতের জেলা সহকারী সেক্রেটারী মাহবুবুল হক,জেলা কর্মপরিষদ ও শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক আব্দুল জলিল,চেয়ারম্যান এড.শুকুর আলী,কালিগঞ্জ জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল ওহাব,দেবহাটা জামায়াতের আমীর ওলিউল্লাহ,আশাশুনি জামায়াতের আমীর ও চেয়ারম্যান আবু বক্কর। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মইনুদ্দিনের পরিচালনায় শোক সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউল হক দোলন বলেন রাজনৈতিক ভাবে মাওলানা আব্দুল বারীর সাথে মত পার্থক্য থাকতে পরে তবে শ্যামনগর বাসির উন্নয়নের জন্য তিনি সবসময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। চেয়ারম্যান না হলেও তিনি সব সময় সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যেতেন।
শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান সাইদ উজ জামান সাইদ বলেন, মাওলানা আব্দুল বারীর মৃত্যুর এক দিন আগের তার কথা হয়। মাওলানা আব্দুল বারী বলেন,তোমরা কি কর। এত ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যায় কেনসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি তাকে পরামর্শ দেন। তার মত এক জন সৎ সাহসী মানুষ আমরা হারালাম।
শোকসভায় বক্তরা বলেন, জানাজায় এত মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে মাওলানা আব্দুল বারী কেমন লোক ছিলেন। তিনি বড়মাপের রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। ২৪ ঘণ্টা রাজনীতি এবং সমাজসেবা ছিল তার কাজ। তার সহযোদ্ধা শ্যামনগর আসনের সাবেক এমপি গাজী রজরুল ইসলাম জানান,মরহুমের মৃত্যুতে শ্যামনগরবাসী একজন জন দরদী নেতৃত্বকে হারালো। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি,তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
মাওলানা আব্দুল বারী ব্যক্তিগত জীবনে স্বচ্ছ চিন্তা, সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্থ, নরমদিল ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী ছিলেন। অত্যন্ত ভদ্র ন¤্র, মার্জিত, পরিশীলিত এক অসাধারণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। শান্তি ও স্বাধীনতান্ত্রয় জনগণের প্রিয় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর এবং প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুলেখক, ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানি উস্তাদ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ।
স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা আব্দুল বারীর বলিষ্ঠ ভূমিকা এ অঞ্চলের মর্যাদাকে সারাদেশে উজ্জ্বল করেছে।
প্রচলিত শিক্ষব্যবস্থার সংস্কার, উন্নয়ন ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা আব্দুল বারী পালন করেন আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। ঘূণিঝড় সিডর,আইলা,আমম্পানসহ যে কোন দুর্যোগে তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতেন সবার আগে। টেকশই বেড়িবাঁধ,আশ্রায় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন।
জামায়াত নেতার মৃত্যুতে সাতক্ষীরা জামায়াতের শোক
শ্যামনগর উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর, টানা তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল বারীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দীস রবিউল বাশার । শোকবাণীতে তিনি বলেন, মাওলানা আব্দুল বারীর ইন্তিকালে আমরা ইসলামী আন্দোলনের একজন নিবেদিত প্রাণ ভাইকে হারালাম। তিনি ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গিয়েছেন। তিনি আন্দোলনের কঠিন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার জীবনের নেক আমলসমূহ কবুল করে তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ মাকাম দান করুন এবং তার শোকাহত পরিবার-পরিজনদেরকে এ শোক সহ্য করার তাওফিক দান করুন।