জনতাও ছিল নাছোড়, চেয়েছিলেন কেবল তারই পতন। নাটকের শেষ অঙ্কে টানটান উত্তেজনার শেষ পরতে উত্তেজিত জনতা প্রেসিডেন্ট ভবনে, সুইমিংপুলে, রান্নাঘরে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে আগেই সরকারি বাসভবন ছেড়ে পালালেন শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা, জানা গেল ১৩ জুলাই পদত্যাগ করছেন গোতাবায়া।
ইতিহাস বলছে, তামিল বিদ্রোহীদের সমূলে নির্মূল করে এক সময় সিংহলীদের কাছে নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে উঠেছিলেন গোতাবায়া ও তার বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপাকসে। তাদের নামে আর ভারে দুটোতেই কাটতো সমানে সমান।
ভাই মাহিন্দা শ্রীলংকার রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন প্রায় ২০ বছর। ২১ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন গোতাবায়া, দুই দশক সেই বাহিনীতে কাজ করে হয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। তার পর স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে তিনি কাজ করতেন তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে।
২০০৫ সালে মার্কিন জীবনের ইতি টেনে এবার রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন গোতাবায়া। ভাইয়ের অধীনে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। এ সময় লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল এলাম (এলটিটিই) দমনের ভার নিজের হাতে নেন গোতাবায়া।
২০০৯ সালে তামিলদের ২৬ বছরের স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্নকে ভূলুণ্ঠিত করে গোতাবায়া বাহিনী। শেষ কয়েক মাসের সেই সংঘাতে ৪০ হাজার বেসামরিক তামিল নাগরিককে লংকার সেনাবাহিনী হত্যা করেছিল, জাতিসংঘের প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য জানা যায়।
তামিলদের স্বপ্ন হত্যা করে সিংহলীদের কাছে বীর বনে যান গোতাবায়া।
২০১৫ সালে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন গোতাবায়ার বড় ভাই মাহিন্দা। ফলে শ্রীলংকার রাজনীতিতে রাজাপাকসে পরিবারের প্রভাবও কমতে থাকে।
২০১৯ সাল ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকার গির্জায় সন্ত্রাসী হামলা; ২৫০ জনের প্রাণ যায়। আবারও জোরালো হয়ে ওঠে জাতীয় নিরাপত্তার দাবি।
আর সেই সূত্র কাজে লাগিয়েই শ্রীলংকার মসনদ ফের দখলে নেয় রাজাপাকসে পরিবার। এবারের নায়ক মাহিন্দা নয়, সেই গোতাবায়া; যার হাত ধরেই তামিল নির্মূল হয়েছিল। লঙ্কানরা ভাবল তার হাতেই নিরাপদ থাকবে তাদের দেশ।
তবে এবার বিধিবাম, ৯ জানুয়ারি ২০২০ সালে প্রেসিডেন্টের আসনে বসা গোতাবায়াকে ২০২২ সালের জুলাই মাসের মধ্যেই ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে। আর তাকে গদি ছাড়া করেছেন সেই জনতা, যারা তাকে বছর দুয়েক আগেই নির্বাচিত করেছিল বিপুল ভোটে।
এখন আর নিরাপত্তা শ্রীলংকার বড় ইস্যু নয়, বড় ইস্যু জীবনের মৌলিক চাহিদা-খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা আর জ্বালানির তীব্র সঙ্কট।
সূত্র: আলজাজিরা