ক্রাইমবাতা রিপোট: খোরদো (কলারোয়া): ৯ মাসের অবুঝ শিশু আবুহর। ১৫ জুলাই শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। আবুহর যখন মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছিল তখন তার পিতা-মাতা একে অপরকে তালাক ও দেনমোহরের টাকা নিয়ে দরকষাকষি করছিল। ৯মাস বয়সী দুধের বাচ্চা আবুহরকে হাসপাতালের বিছানায় ফেলে রেখে দিনভর দেড় লক্ষ টাকার বিয়ের দেনমোহর নিয়ে দর কষাকষি করে এক লক্ষ টাকায় আপোষে তালাকের সিদ্ধান্ত হয়। আবুহরের মৃত্যুর সময় মা-বাবা ছিলো তালাকের শালিশে। সন্তানের মৃত্যু সংবাদে শালিশ বন্ধ হয়ে যায়। পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা আবুহরকে। কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের নাসির সরদারের পুত্র উজ্জল সরদার (৩২) এর সাথে কেশবপুর উপজেলার ভায়না গ্রামের বাবলু রহমানের কন্যা সুমাইয়া খাতুন (২৪) এর আড়াই বছর আগে দেড় লক্ষ টাকা দেনমোহরে বিবাহ হয়।
বিয়ের দেড় বছর পরে আবুহর নামের ১টি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। আবুহরের জন্মের পর থেকে টুকিটাকি ঘটনায় সুমাইয়ার স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ির সাথে প্রায় গোলযোগ হয়। ২০২২ সালের ১১ রমজান উজ্জলের উপর অভিমান করে পুত্র আবুহরকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে সুমাইয়া তার পিতার বাড়ি কেশবপুর উপজেলার ভায়না গ্রামে চলে যায়। সুমাইয়া দৈনিক পত্রদূত প্রতিনিধিকে জানায়, দেয়াড়া গ্রামের উজ্জলের সাথে বিয়ের পূর্বে ঢাকা শহরের সাব্বির হোসেন নামে এক যুবকের সাথে তার বিয়ে হয়। কয়েক দিন পরে সাব্বিরের সাথে বিয়ের সম্পর্কটি বিচ্ছেদ হয়ে যায়। প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের কিছু দিন পরে দেয়াড়া গ্রামের উজ্জলের সাথে দ্বিতীয়বার সুমাইয়ার বিবাহ হয়। সুমাইয়ার পিতা গ্রাম পুলিশে চাকরি করে। গত ১০ জুলাই সুমাইয়ার ৯মাস বয়সী একমাত্র পুত্র আবুহর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। গ্রাম্য ডাক্তারদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ১১ জুলাই আবুহরকে কেশবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কেশবপুর হাসপাতালের ডাক্তার জানায় শিশু আবুহরের হার্টের ৯০% সমস্যা দেখা দিয়েছে, বর্তমান ১০% ভাল আছে। অন্য হাসপাতালে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন তিনি।
কেশবপুর হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শের কথা স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের জানায়। সুমাইয়ার স্বামী ও তার বাড়ির লোকজন আবুহরকে দেখতে যায় না। স্বামী ঔষধ, ডাক্তার খরচের কোন টাকাও দেন না। ফোন করলে কেউ ধরেন না। সুমাইয়া সাথে কেউ কথাও বলেন না। এসব ক্ষোভে সুমাইয়া উজ্জলের নিকট তালাক চায়। সুমাইয়ার উজ্জলের দাম্পত্য জীবনে কলহ ও ছাড়াছাড়ির বিষয় নিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় অনেকবার শালিশ বৈঠক হয়।
সুমাইয়া আরও জানায়, আমার সন্তান আবুহরকে নিয়ে আমার পিতা ভয় পায়। দেয়াড়া গ্রামের মতিয়ার গাজীর মাধ্যমে ১৫ জুলাই সুমাইয়ার শালিশের শেষ দিন ধার্য্য করা হয়। ঐ দিন কেশবপুর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে অসুস্থ্য শিশু আবুহরকে ভর্তি করা হয়।
সুমাইয়া অসুস্থ্য আবুহরকে ফেলে রেখে দেয়াড়া গ্রামের আলিমের বাড়ি মতিয়ার মেম্বরের শালিশে পৌছায়। আবুহরের পিতা উজ্জল জানায়, বাচ্চা দুধ খায়। বউ ছাড়তে চাই না। মা ছাড়া বাচ্চা বাঁচানো যাবে না। আমার কাছে কেউ ফোন করেনি। আমি কিছুই জানি না। দেড় লক্ষ টাকা দেনমোহরে আমার বিয়ে হয়েছে। মতিয়ার মেম্বর একলক্ষ টাকায় আপোষে মিটিয়ে দিচ্ছেন। আমি মেনে নিয়েছি। মতিয়ার ফোন দেওয়ার পরে আমরা আলিমের বাড়িতে যাই। আমার ৯মাস বয়সী পুত্র আবুহরকে না দেখে ফিরে এসেছি। তালাকে স্বাক্ষর করেনি, টাকা দেইনি। পরে শুনেছি আমার ছেলে হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। একলক্ষ টাকার লোভে হাসপাতালের বিছানায় বাচ্চা ফেলে রেখে দিনভর আলিমের বাড়ি সুমাইয়া ও তার বাবা দিনভর কাবিনের টাকার দরকষাকষি করেছে। সুমাইয়া ও তার বাবা বাবলু সরদার সুমাইয়ার ছাড়াইয়া নেওয়ার কথা আমাদের বার বার বলেছে। দুধের অভাবে আবুহরের গলা শুকিয়ে গেছে। হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় আমার সন্তান মারা গেছে। মৃত্যুর সময় আমরা বাবা মা কেউ আবুহরের পাশে ছিলাম না। আমি আবুহরকে দাফন করেছি। আমার আর কিছু বলার নেই।
অবশেষে একলক্ষ টাকার বিনিময়ে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে আপোষ তালাক হবে-এই শর্তে সবাই একমত হয়। উজ্জল ও সুমাইয়ার বিবাহ ও সম্পর্ক বিচ্ছেদের ঘটনায় আপোষ তালাকের বিষয়ে দেয়াড়া কাজী অফিসে ফোন করা হয়।