মিয়ানমারে সামরিক সরকারের নৃশংসতার কথা তুলে ধরেছেন দেশটির সাবেক সেনাসদস্যরা। এর মধ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানে ঘরে আটকে পড়া এক কিশোরীকে সেখানে রেখেই কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা বিবিসিকে বলেছে এক সেনা। তিনি বলেন, আমি তাকে ভুলতে পারি না।
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণের বিষয়টি বিশেষ সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন সেনারা।
সাক্ষাৎকারে একজন কর্পোরালসহ ছয় সেনা ও কয়েকজন ভুক্তভোগীর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। এতে ক্ষমতা ধরে রাখতে সামরিক বাহিনী কতটা মরিয়া তার প্রমাণ মেলে
ওই সেনারা সামরিক বাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সের (পিডিএফ) সঙ্গে যোগ দেন। সাক্ষাৎকারে কারও প্রকৃত নাম প্রকাশ করা হয়নি।
এক সেনা বলন, তারা আমাকে নির্যাতন, লুটপাট ও নিরীহ লোকজনকে হত্যার নির্দেশ দেয়।
চলতি বছরের মে মাসে একটি মঠে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে সেনাদের একটি ব্যাটালিয়ন। মং ওই ব্যাটালিয়নের একজন ছিলেন। তিনি বলেন, সব পুরুষকে ঘিরে ফেলে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয় আমাদের। সবচেয়ে করুণ বিষয় ছিল, বয়স্ক লোকজন ও এক নারীকেও আমাদের হত্যা করতে হয়েছিল।
গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মধ্য মিয়ানমারের ইয়া মায়েত গ্রাম ঘিরে ফেলে তিনটি হেলিকপ্টার। গুলি করার নির্দেশ দিয়ে সেনাদের গ্রামে নামানো হয়। আলাদাভাবে পাঁচজনের বর্ণনায় উঠে আসে, সেদিন কী ঘটেছিল।
সেনারা গ্রামে ঘুরে ঘুরে বাড়িঘরে আগুন দেন। ‘পুড়িয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও’ বলে তারা চিৎকার করছিলেন। কর্পোরাল অং চারটি পাকা বাড়িতে আগুন দেন। সেনারা বলেন, প্রায় ৬০টি বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। গ্রামটির অধিকাংশই ছাইয়ে পরিণত হয়। ওই গ্রামের অধিকাংশ লোকজনই পালিয়ে যায়, তবে সবাই নয়। গ্রামের মাঝামাঝি অবস্থিত একটি বাড়িতে লোকজন ছিল।
অভিযানের মাত্র পাঁচ মাস আগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন থিহা। ওই বাড়িতে কী ঘটেছিল, তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা পাওয়া যায় তার কাছে।
একটি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার মুহূর্তে থিহা সেখানে এক কিশোরীকে আটকা পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি বলেন, আমি তার আর্তনাদ ভুলতে পারি না। এখনো তা আমার কানে বাজে। আমার মনে তা জেগে ওঠে।
ইয়া মায়েতের ওই ঘটনায় ১০ জন নিহত হন। আটজন কিশোরীকে এ সময় পাশবিক নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে।