সাতক্ষীরায় খাল খননে অনিয়ম: লুটে নেয়া হলো ১২ কোটি টাকাঃ বেড়েছে দুর্ভোগঃ বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা

ক্রাইমবাতা ডেস্ক রিপোট,সাতক্ষীরা: ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত অনিয়ম সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল অস্তিস্থ সংকটে পড়েছে। মাত্র এক বছরের মাথায় খালের দুধারে অপসারিত অবৈধ স্থাপনা সরকারী মদদে স্থায়ী রূপ নিয়েছে। যে যার মত করে খালের দুধারের দখল নিয়েছে। গড়ে তুলেছে পাকা বিল্ডিংসহ বিভিন্ন কারখানা। খালটির বুক ভরে গেছে কচুরিপানায়। বছর খানেক আগে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলে পানি নিষ্কাশন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেলার নাগরিক নেতারা। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে শুরু থেকেই। খাল কেটে নালা তৈরি করার অভিযোগ উঠে। কাদাপানি না শুকিয়েই খনন করা হয়। খালটি পুনঃখননের সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাণসায়র খালের দুই পাড়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনের নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়। বলা হয় প্রাণ সায়ের খাল হবে দূষণ মুক্ত, পরিণত হবে নান্দনিক বিনোদনের এক অপরূপ কেন্দ্রে, শহরের ক্লান্তিকর জীবনে এনে দিবে প্রশান্তির ছোঁয়া। কিন্তু সেইসব স্বপ্ন অধরেই থেকে গেল। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে সেই খাল আবার শহর বাসির দুঃখ হয়ে দাঁড়াল। এরই মধ্যে উন্নয়নের নানা কথা বলে লুটে নেয়া হলো ১২ কোটি টাকা। কাজের কাজতো কিছুই হয়নি বেড়েছে শহর বাসির ভোগান্তি।

জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর খালটি প্রথম পর্যায় খনন করা হয়। ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ১০ কিলোমিটার খাল সংস্কারে নামমাত্র খনন করে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকাই লোপাট করার অভিযোগ ওঠে। খাল খননের নামে খালের দুই ধারে শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে আবারো নেমে আসে পৌরবাসীর দুর্ভোগ। শুষ্ক মৌসুম শীতকালেও শহরে জলাবদ্ধতা বিরাজ করতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় খালের পানি প্রবাহ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় প্রাণসায়ের খালটি আবাও খনন করা হয়।
সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ থেকে খেজুরডাঙ্গা ৬ ভেন্ট স্লুইস গেটস্থ বেতনা নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা চুক্তি কার্যাদেশ দেয়া হয়।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার সদর উপজেলার এল্লারচর থেকে খেজুরডাঙ্গী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার খাল খননের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। নকশা অনুযায়ী এই খাল কাটার কথা ছিল। খালের উপরিভাগের প্রস্থ ৭৫ থেকে ৮০ ফুট হওয়ার কথা ছিল। গভীরতা ৬ থেকে ৮ ফুট ও তলদেশের প্রস্থ ২৫ ফুট হওয়ার কথা ছিল। এ খাল কাটার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। খাল খননের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট। খালের উপরিভাগের প্রস্থ কোথাও কোথাও ৫৫ ফুটের বেশি হয়নি। ৩-৪ ফুটের বেশি গর্ত করা হয়নি। খননের পর তলদেশের প্রস্থ ১৫ থেকে ১৮ ফুটের বেশি হয়নি। খাল শুকিয়ে কাটার কথা থাকলেও কাটা হয় পানি রেখেই।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, প্রাণসায়ের খাল খনন ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। এ জন্য ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যš Íসময় বাড়ানো হয়েছিল। খালপাড়ের মানুষ মামলা করায় এবং এস্কেভেটর মেশিন চলাচলের জন্য জায়গা বের করতে দেরি হওয়ায় কাজ করতে দেরি হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। বিশেষ করে শহর অংশে নকশা অনুযায়ী কাজ হয়নি স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, পরে আবার খাল খনন করতে হবে। না হলে বিল দেয়া হবে না। কিন্তু তার পরের খবর আর জানা যায়নি।

প্রথম অবস্থায় এ খালের প্রশস্ততা ছিল ২০০ ফুটের বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সে সময় বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকা এসে ভিড় জমাত এ খালে। এর ফলে সাতক্ষীরা শহর ক্রমেই সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত হয়। আর ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণের নামে খালের দুই প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এতে খালে স্বাভাবিক জোয়ারভাটা বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি বদ্ধ খালে পরিণত হয়।

নাগরিক কমিটির নেতা অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। খালটি খননপূর্বক সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে ছিলাম, কিন্তু কাজ হয়নি। খালটির বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। শহরের পাকাপুলের মোড় থেকে সুলতানপুর বড়বাজার ব্রিজ পর্যন্ত এবং টাউনবাজার ব্রিজ থেকে স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্তখালটি কচুরিপানায় ভরে গেছে। ভারী বর্ষণ হলে এই খাল দিয়ে শহরের পানি প্রবাহিত হতে পারবে না। ফলে দেখা দেবে জলাবদ্ধতা।

 

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।