সাতক্ষীরায় মাথা বিহিন লাশ উদ্ধারের ঘটনার প্রধান আসামী আটক : মাথা উদ্ধার

  আবু সাইদ বিশ্বাস,ক্রাইমবাতা রিপোট,সাতক্ষীরাঃ   মাত্র ২০ হাজার টাকার জন্য জবাই করে হত্যা করা হয়   সাতক্ষীরার আলোচিত চা দোকানী ইয়াছিন আলীকে। আটক হওয়া হত্যাকান্ডের প্রধান আসামী জাকির হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যা কথা স্বীকার করেছেন বলেন রোববার সকাল ১০টায় র‌্যাব-৬ সাতক্ষীরা আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক লে:কর্ণেল মোস্তাক মোর্শেদ জানান।

আটক জাকির হোসেন খুলনা শহরের বাচ্চু শেখের পুত্র। সাতক্ষীরা শহরের গড়েরকান্দা এলাকার বিবাহ করে দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই বসবাস করে আসছিল।
র‌্যাব জানান, ভিকটিম খুনির পূর্ব ব্যবসায়িক পার্টনা। ব্যবসার সুবাদে খুনি ভিকটিমের কাছে ২০ হাজার টাকা পাওনা ছিলো। কয়েকবার তাগিদ দেওয়া সত্বেও টাকা পরিশোধ করে নাই। যে কারণে অভিযুক্ত জাকির হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩০ আগষ্ট রাত ৯টার দিকে বাইপাস সড়কে ঘর উঠানোর কাজ করার কথা বলে সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কে নিয়ে আসে ইয়াছিন আলীকে। রাত গভীর হলে সুযোগ বুঝে রাত আনুমানিক ১২ টার দিকে ইয়াছিনের গলায় দিয়ে কোপ মারে।

ইয়াছিন আলী মাটিতে পড়ে গেলে তখন এলোপাতাড়ী কুপিয়ে ইয়াছিনের শরীর হতে মস্তক আলাদা করে অভিযুক্ত জাকির হোসেন। পরবর্তীতে মাথাবিহীন মৃত দেহ টেনে রাস্তার পার্শ্বে পানিতে ফেলে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে আনুমানিক ১ কিলোমিটার দুরে ব্রিজের নীছে ডোবার মধ্যে মাথা ফেলে যায়। পরের দিন ৩১ আগষ্ট এলাকার লোকজন রাস্তায় পার্শ্বে পানিতে লাশ পড়ে আছে দেখে থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এই সংক্রান্তে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে সাতক্ষীরা জেলার সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের পর জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাবে একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাথাবিহীন লাশের হত্যাকারীকে সাতক্ষীরা জেলার সদর থানাধীন আলীপুর এলাকায় অবস্থান করছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ০৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলার সদর থানাধীন আলী পুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যার ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত জাকির হোসেন গ্রেফতার করে এবং তার দেয়া তথ্য মতে অভিযান পরিচালনা করে মাথাবিহীন লাশের মাথা উদ্ধার করা হয়।

খুলনা র‌্যাব-৬ এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোস্তাক আহম্মেদ রবিবার সকাল ১০ টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে বাইপাস সড়কে এক প্রেস ব্রিফিংএ জানান, ২০ হাজার পাওনা টাকা দিতে টালবাহানা করায় এক মাস আগে জাকির হত্যার পরিকল্পনা করে ইয়াছিনকে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৫ দিন আগে শহরের কামাননগর থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে একটি দা কিনে তাতে ধার দেয়। দা নিয়ে ইয়াছিনের চায়ের দোকানে এসেছে কয়েকবার।

গত ৩০ আগষ্ট মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে একটি হোটেলে বিরিয়ানি খাওয়ানোর পর তাকে একটি ভ্যান চালাতে দিয়ে সে নিজে যাত্রী হিসেবে বসে থাকে। বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকায় এলে ইয়াছিনকে পিছন দিক থেকে ঘাড়ে কোপ দেয় জাকির। এরপর ভ্যানটি আরো কিছুদুর এগিয়ে গেলে তার ঘাড়ে আরো একটি কোপ মারলে রাস্তায় পড়ে যায় ইয়াছিন। সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে নির্জন জায়গায় জলাশয়ের মধ্যে নিয়ে তাকে দা দিয়ে জবাই করে হত্যা করে জাকির। পরে তার লাশ ও পরিহিত জামা একটি বস্তার মধ্যে ভরে শহরের কামাননগরের সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের মাছের ঘেরের দক্ষিণ পাশের বাইপাস সড়কের কালভার্টের নীচের জলাশয়ে বস্তা ফেলে দেয়।

সেখান থেকে মেডিকেলের সামনে এসে একটি পুকুরে গোসল করে তার রক্তমাখা জামা ফেলে দিয়ে বাড়ি চলে যায়। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রবিবার ভোরে সাতক্ষীরা শহরতলীর পারকুকরালি কাঠালতলা গুচ্ছগ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ৫৫ বছর বয়সী জাকিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি রবিরার সকাল টার দিকে শহরের কামাননগরের সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিলের মাছের ঘেরের দক্ষিণ পাশের বাইপাস সড়কের কালভার্টের নীচের জলাশয় থেকে বস্তাবন্দি ইয়াছিন মোল্লার মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া নিহতের রক্তমাখা জামা, জাকিরের রক্তমাখা জামা ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়। তবে হত্রাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাতে সাতক্ষীরা শহরতলীর বাইপাস সড়কে বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ করার কথা বলে জাকির হোসেন তার পূর্ব পরিচিত সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর সরদারপাড়ার মৃত শাহবাজ মোল্লার ছেলে ইয়াছিন মোল্লাকে পুরাতন সাতক্ষীরার চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায়। বুধবার ভোরে বাইপাস সড়কের বকচরা এলাকার নুরুজ্জামানের মাছের ঘেরের পাশের জলাশয় থেকে তার মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে বুধবার রাতে কারো নাম উল্লেখ না করেই সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।