জাকির: ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন কলারোয়া উপজেলার তরুলিয়া গ্রামের শওকাত আলীর ছেলে প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান। ইউটিউবে ড্রাগন চাষিদের সফলতার গল্প দেখে এ ফল চাষে ঝুঁকে পড়েন তিনি। দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ড্রাগনের বাণিজ্যিক চাষাবাদে সফল হবেন বলে আশাবাদী তিনি। বর্তমানে তার ২০ বিঘার ড্রাগন বাগানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফল গাছ। সবুজ গাছে শোভা পাচ্ছে গোলাপি, লাল আর সবুজ ফল।
প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান জানান, বুয়েট থেকে ২০১৩ সালে সিএসই বিভাগে লেখাপড়া শেষ করেছি। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সরকারি চাকুরির আশায় না ঘুরে মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান গড়তে দীর্ঘদিন পরিকল্পনা ছিল আমার। যার ফলশ্রুতিতে ঢাকাতে তার মিডিয়াসওয়ার লিমিটেড সফটওয়্যার কোম্পানিতে ৩২জন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে কৃষিতে আগ্রহ থাকলেও পরিবারের অমত ও বাঁধার কারনে কোনকিছু করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে সবার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ২০২০ সালে মানুষ যখন করোনায় ঘরবন্দি ছিল তখন গ্রামের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উদ্যোগ গ্রহণ করি। ইউটিউব দেখে প্রথমে ১০ বিঘা ও পরে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে আরও ১০ বিঘা বিলের জমিতে মাটি ভরাট করে বানিজ্যিক ভাবে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে অত্যাধুনিক পাইপ লাইনে সেচ প্রকল্প ও নিরাপত্তায় সফটওয়্যার নিয়ন্ত্রিত সিসি ক্যামেরা মজবুত ঘেরাবেড়া দিয়ে ড্রাগন চাষ শুরু করি। এক বছরের ব্যবধানে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ সম্ভাবনার এ ড্রাগন বাগানে গত বছর মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত (৮ মাস) ফল ভাঙ্গা হয়। চলতি মৌসুমেও ক্ষেত থেকে গাছপাকা নিরাপদ ফল সাতক্ষীরা-খুলনা ও ঢাকার ক্রেতারা পাইকারি ও খুচরা ক্রয় করছেন বলে জানান তিনি।
গত দুই বছরে প্রাই ১৯ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, খুচরা-পাইকারি বিক্রয়ের পাশাপাশি ‘ফলের আড়ৎ’ নামের এক ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন ফল রপ্তানি করছেন তিনি। আর বর্তমানে তার বাগানে ১৫টি পরিবারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, মানুষের একটা সঠিক স্বপ্ন ও সিদ্ধান্ত গোটা সমাজে উন্নয়ন ঘটিয়ে অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে দিতে পারে। যার দৃষ্টান্ত উদাহরণ প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান।
উপজেলার পরিষদের সকল কর্মকর্তারা কয়েকবার তার ২০ বিঘার বৃহৎ ড্রাগন বাগান পরিদর্শণ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি সকলের কাছে প্রশংসিত। তার এ ড্রাগন বাগানে গ্রামের বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তার যেকোন প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসন পাশে থাকবে।
এব্যাপারে কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, সব ধরনের মাটিতে ড্রাগন চাষ হয়। তবে উঁচু জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিন মিটার পরপর গর্ত করে চারা রোপণ করতে হয়। বছরের যেকোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। তবে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। সিমেন্ট অথবা বাঁশের খুঁটিতে গাছ বেঁধে দিতে হয়। গাছে ফুল আসার ২০-২৫ দিনের মধ্যে ফল ধরে। পুষ্টিগুণসম্পন্ন প্রতিটি ড্রাগন ফলের ওজন ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়। ২ থেকে ৪ বছর বয়সী একটি গাছে ৫ থেকে ১২টি ফল ধরে। পরিপক্ব একটি গাছে সর্বোচ্চ ৪০টি ফল পাওয়া যায়। ছাদবাগানের টবেও ড্রাগন ফল চাষ করা যায়।
প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান ড্রাগন ফলের চাষ শুরুর পর থেকেই কখন কী ধরনের গাছের পরিচর্যা নিতে হবে, সে বিষয়ে আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। তার সফলতা দেখে অনেক কৃষক এখন আমাদের কাছে ড্রাগন চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন।