সাফজয়ী মাসুরার বাড়ি না ভেঙ্গে নতুন বাড়ি করার আশ্বাস প্রশাসনের

আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরা: সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আজ বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিনের বাড়িতে যান। তিনি খেলোয়াড়দের পরিবারকে শুভেচ্ছা জানান এবং খোঁজখবর নেন। এ সময় জেলা প্রশাসক বলেন, সাবিনা ও মাসুরা সাতক্ষীরা এলে আড়ম্বরপূর্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এ জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাঁরা দেশকে সম্মানিত করেছেন। জেলা প্রশাসনও তাঁদের সম্মান জানাতে চায়।

প্রথমে জেলা প্রশাসক গতকাল সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাসুরাদের বাড়িতে যান। মাসুরার বাড়ি জেলার বেনেরপোতার বেদনা নদীর পাড়ে। এ সময় মাসুরার পরিবারের সদস্যরা বলেন, সড়কের দুই ধারের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য লাল চিহ্ন এঁকে দিয়ে যায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ওই চিহ্ন দেওয়া হয়েছে মাসুরা পারভিনের সদ্য নির্মিত বাড়ির দেয়ালেও। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তাঁরা।

জেলা প্রশাসক হুমায়ূন কবির বলেন, মাসুরাদের বাড়ি এখন ভাঙা হবে না। তাঁদের সরকারিভাবে দেওয়া নিচু জমি ভরাট করে বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মাসুরাদের এ বাড়ি উচ্ছেদ করা হবে কি না। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা, সড়ক ও জনপথ বিভাগের সাতক্ষীরার সহকারী প্রকৌশলী মো. জিয়াউদ্দিন ও লাবসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল আলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের কথা শুনে মাসুরাদের বাড়ির দেয়ালের লাল চিহ্ন মুছে দেন লাবসা ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল আলিম।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের মাসুরা পারভিনের বাড়ির দেয়ালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ অবৈধ দখল উচ্ছেদের লাল চিহ্ন এঁকে দেয়। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক উপস্থিতিতে তা মুছে দেওয়া হয়। পরে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও মাসুরার বাবা মো. রজব আলী, মা ফাতেমা বেগম ও বোন সুরাইয়া ইয়াসমিনের হাতে ফুলের তোড়া ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
মাসুরার বাবা জানান, ২০১৬ সালে ক্রিকেটার সৌম্য, মোস্তাফিজ, ফুটবলার সাবিনা ও তাঁর মেয়ে মাসুরাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের (মাসুরা) থাকার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন। ২০২০ সালে জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বেনেরপোতা এলাকায় ১৫ ফুট নিচু আট শতক জমি দেন তাঁদের। সেই জমির একাংশ পাঁচ লাখ টাকায় ভরাট করা হয়। পরে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সেখানে দুই কামরাবিশিষ্ট বাড়ি বানান মাসুরা। সব মিলিয়ে তাঁদের ব্যয় হয়েছে সাড়ে আট লাখ টাকার মতো।

রজব আলী আরও বলেন, তাঁর বাড়ি কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের আলাইপুর গ্রামে। অল্প বয়সে জেলা শহরে এসে আর ফিরে যাননি। জীবন শুরু করেছিলেন হোটেলে কাজ দিয়ে। পরে শহরের নানা জায়গায় চায়ের দোকান চালান। এখন ভ্যানে করে ফল-সবজি বিক্রি করেন। এর আগে সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা পূর্বপাড়ায় সাবেক পৌর কমিশনার আবদুর রাজ্জাকের বাড়ির একটি জরাজীর্ণ দোচালা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন তাঁরা। এত টাকা খরচ করে বাড়ি বানিয়ে এখন তাঁরা প্রায় নিঃস্ব। মেয়ের খেলার টাকায় সংসার চলে। বাড়ি ভেঙে দিলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি আবার অসহায় হয়ে পড়বেন।

মুঠোফোনে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘মাসুরা দেশের গর্ব। তিনি আমাদের গর্বিত করেছেন। যত দিন মাসুরাদের নতুন বাড়ি না হবে, তত দিন তাঁদের বাড়ি ভাঙা কিংবা উচ্ছেদ করা হবে না।’

পরে সকাল সাড়ে ১০টা দিকে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও হাজির হন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনাদের সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোলের সবুজবাগের বাড়িতে। সেখানে সাবিনার মা মমতাজ বেগম ও বড় বোন সালমা খাতুনের হাতে ফুল ও মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। জেলা প্রশাসক তাঁদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এ সময় সাবিনার বড় বোন জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁর বেকার দুই বোনের চাকরির জন্য বলেন। জেলা প্রশাসক বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন বলে জানান।

 

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।