শুভ্র: এর আগে আমরা ভারত, নেপালকে কোনো দিন হারাতে পারিনি। সেটাও ১–২টা ম্যাচ না, এক দলের সঙ্গে ১০ ম্যাচ (ভারত), আরেক দলের সঙ্গে ৮ (নেপাল)। সেই দুটি দলকেই হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া তো বিরাট ব্যাপার…
সাবিনা: মেয়েদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। স্যারদেরও মেয়েদের ওপর বিশ্বাস ছিল। সবকিছু মিলেই এটা হয়েছে।
শুভ্র: দলে আপনার ভূমিকার কথা যদি বলি, আপনি এই দলের সবচেয়ে বড় তারকা। পারফরম্যান্স, অভিজ্ঞতা—সবকিছু মিলিয়েই। বয়সেও আপনি ওদের চেয়ে অনেক বড়। বয়সের কারণে আপনার ভূমিকাটা কি অধিনায়কের সঙ্গে অনেকটা বড় বোনের মতোও?
সাবিনা: ওদের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ।
শুভ্র: সেটা তো আমরা জানি। দলে যেহেতু ১৯–২০ বছর বয়সী খেলোয়াড়ই বেশি, অভিভাবকসুলভ একটা ভূমিকাও কি আছে আপনার?
সাবিনা: অভিভাবক বলতে একজন অধিনায়ক হিসেবে মাঠ ও মাঠের বাইরে যা করা দরকার, আমি তা করার চেষ্টা করি।
শুভ্র: এর বাইরে জীবন সম্পর্কেও কি ওঁদের গাইড করেন? কারণ, আপনি অনেক বছর ধরে খেলছেন, অনেক কিছুর ভেতর দিয়ে এসেছেন…
সাবিনা: সবার জীবনেই কোনো না কোনো সমস্যা আছে, প্রতিবন্ধকতা কাছে। ওদেরও আছে। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে সাপোর্ট দিই, নিজেরটাও ওদের সঙ্গে শেয়ার করি।
শুভ্র: আপনার মুকুটে তো অনেক পালক। জাতীয় দলে খেলছেন সেই ২০০৯ সাল থেকে, ২০১৫ থেকে অধিনায়ক। মালদ্বীপে খেলেছেন, ভারতে খেলেছেন। অনেক কিছুতেই বাংলাদেশের প্রথম, গোলসংখ্যায়ও আপনার ধারেকাছে কেউ নেই। এত কিছুর পরও আপনি যখন কল্পনা করতেন, একটা বড় কিছু অর্জন করতে চাই, সেটা কি এই সাফ শিরোপা?
সাবিনা: অবশ্যই আমার স্বপ্ন ছিল সাফে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি।
শুভ্র: সেই স্বপ্ন তো পূরণ হয়ে গেল। এখন কী?
সাবিনা: যেহেতু ফেডারেশন চাচ্ছে, এশিয়ার মধ্যে নিজেদের আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। নিজেদের সেভাবে তৈরি করতে চাই।
শুভ্র: সে জন্য কী করতে হবে?
সাবিনা: অবশ্যই আরও প্র্যাকটিস। প্র্যাকটিস ছাড়া কোনো বিকল্প নাই। প্র্যাকটিস, জিম…। প্রেসিডেন্ট স্যার বলেছেন, ভালো করার জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার, সেগুলো তাঁরা দেবেন।
শুভ্র: আপনার সুনির্দিষ্ট কোনো চাওয়া আছে? এত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আপনার কী মনে হয়, এই এই জায়গাগুলো ঠিক করলে আমাদের মেয়েদের টিম আরও ভালো হতো।
সাবিনা: মেয়েরা কাজ করছে। ৪–৫ বছর হলো ফেডারেশন জিমও দিয়েছে। আমার মনে হয়, ফেডারেশন চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, নিজেদের আরও প্রফেশনালি তৈরি করা।
এভাবেই দেশের মানুষকে হাসিখুশি রাখতে চান সাবিনারা
শুভ্র: গত বছর জুনে ক্রীড়া লেখক সমিতির অনুষ্ঠানে আপনার ছোটবেলার কোচ আকবর আলী স্যারের পুরস্কারটা গ্রহণ করে আপনি কেঁদেছিলেন। এর আগের দিনই তিনি হঠাৎ চলে যান। এমন একটা সাফল্যের পর কোচের কথা নিশ্চয়ই মনে পড়ছে?
সাবিনা: অবশ্যই, যাদের জন্য এত দূর এসেছি, তাদের কাউকেই আমি ভুলিনি। আমার বাসায় যে সাংবাদিকই যাচ্ছেন, আমি আকবর স্যারের স্ত্রীকে সামনে রেখেই কথা বলাচ্ছি। ওনাকে ছাড়া আমি এত দূর আসতে পারতাম না। আজকের সাবিনা হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় যাঁর অবদান, তিনি আকবর স্যার।
শুভ্র: আকবর আলী স্যারই তো আপনাকে ফুটবলে এনেছেন। এর বাইরে কোনো ঘটনা, যেটা না হলে হয়তো ফুটবলার হতেন না…
সাবিনা: আমি মনে করি, নিজেকে একটা বড় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি অবদান থাকে নিজের। নিজের ইচ্ছাশক্তি না থাকলে আমাকে কেউ এখানে নিয়ে আসতে পারত না। সুতরাং আমি সব সময়ই মনে করি, যা পাচ্ছি, তা আমার প্রাপ্য।
শুভ্র: অবসরে কী করেন?
সাবিনা: মুভি দেখি।
শুভ্র: কী ধরনের মুভি?
সাবিনা: আমি সব ধরনের মুভি দেখি। ইংলিশ, হিন্দি, তামিল, মালয়ালম। তামিল বেশি দেখা হয়।
শুভ্র: আপনার সবচেয়ে পছন্দের মুভি?
রিপোট: প্রথম আলো