সাতক্ষীরায় ঘেরে আইলে উৎপাদিত এত সবজি যাচ্ছে কোথায়

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: উপকূলীয় জেলায় কৃষিতে সমন্বিত পদ্ধতিতে সবজি চাষে নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। পতিত জমি ব্যবহার করে গত কয়েক বছর ধরে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে ঘেরে আইলে সবজি চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে চাষিরা। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে কৃষির চরম বিপর্যয়ের মুখে বিশ্বের দরবারে গৌরবোজ্জ্বল এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এখানকার চাষিরা। শত বিপত্তির মুখেও চাষিরা তিল তিল করে গড়ে তুলেছে কৃষি নির্ভর অর্থনীতি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে অক্লান্ত পরিশ্রম আর জলাবদ্ধতা ও লবণক্ষতার সাথে লড়াই করে এখানকার চাষিদের উৎপাদিত সবজি বিশ্বের দরবারের তৃতীয় স্থান করে নিয়েছে। কৃষকদের অবদানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে উত্থান ঘটেছে, তা আজ চোখ বড় করে দেখছে বিশ্ববাসী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন ও ভারতকে টপকিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দেশে বর্তমানে ৬০ ধরনের যে সবজি উৎপাদিত হচ্ছে, তার সিংশহ ভাগ উৎপাদিত হচ্ছে এ অঞ্চল থেকে । ঘেরের আইলে নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর সবজি এখন সকলের নজর কাড়ছে। পানির উপরে সবুজের আড়ালে দোল খাচ্ছে কৃষকের সপ্ন। মাঠের পর মাঠ মৎস্য ঘের যেন সবুজে ঢাকা পড়েছে। ঘেরের পানিতে গলদা , বাগদা আর পানির উপরে করলা, শশা, লাউ, কুমড়াসহ হরেক রকমের সবজি কৃষকের মন ছুয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দরবারে। সারা বছর চাষের উপযোগী হাইব্রিডড বা উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বীজ সবজি চাষে এনেছে সাফল্য ও বৈচিত্র্য। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃৃষকরা দীর্ঘদিন খাদ্য সংকটে ভুগে এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করছে। কৃষকরা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছে। বর্তমান দেশে ও বিদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা দামও যেমন বেশি পাচ্ছে তেমনি কর্মসংস্থানের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে।

কৃষি খামারবাড়ি সূত্র মতে চলতি মৌসুমে শুধু ঘেরের আইলে ৮৭৫ হেক্টর জমিতে শাক সবজি চাষ করা হয়েছে। সবজি চাষে জেলাতে চলছে এক মহা কর্মযোগ্য । দেখতেও নয়নাভিরাম মনোমুগ্ধকর এক প্রকৃতি। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃৃষকরা দীর্ঘদিন খাদ্য সংকটে ভুগে এখন নিজেরাই নিজেদের পুষ্টি ও খাদ্য তৈরি করছে। বিশেষত তালা উপজেলার মিঠাবাড়ী পাচপাড়া, সরুলিয়া, ধানদিয়া, নগরঘাটা, তৈলকুপি, যুগিপুকুরিয়া, মাগুরা, মাদরা, কৈ খালি, শুকতিয়া,খলিষখালি, দুধলাই, পাকশিয়া, মঙ্গলানন্দকাটী, টিকারামপুর, বাগমারা, বালিয়াদাহ, খেশরা, হরিহরনগর, গাছা, মুড়াগাছাসহ একাধিক এলাকার পতিত জমিতে এখন সবজি আর মাছের বিপ্লব। কৃষকরা এক ফসলি জমিতে এখন বহু ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করেছে। আরও জানা যায়, বর্তমান দেশে ও বিদেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় কৃষকরা দামও যেমন বেশি পাচ্ছে তেমনি কর্মসংস্থানের উৎস সৃষ্টি হচ্ছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে, গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে সবজি উতৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। বেড়েছে সবজি জমির পরিমাণও। গত এক দশকে দেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। সেখানে জেলাতে সবজির আবাদ বেড়েছে ৬ শতাংশ হারে। দেশে চাষযোগ্য জমির মাত্র ১.৮ শতাংশ জমিতে শাকসবজি চাষ হয়। আর সাতক্ষীরা জেলাতে বর্তমানে ২ শতাংশ জমিতে সবজির চাষ হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের দৈনিক ২২৫ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসেবে, গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে সবজি উতৎপাদন বেড়েছে পাঁচ গুণ। বেড়েছে সবজি জমির পরিমাণও। গত এক দশকে দেশে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। সেখানে জেলাতে সবজির আবাদ বেড়েছে ৬ শতাংশ হারে।

গত দু’দর্শক আগে সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় অঞ্চলে বছরের ৯ মাস সময় জলাবদ্ধতা থাকত। এসব জলাবদ্ধতা রোধে কৃষকরা জমিতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করতে থাকে। এ পর শুরু হয় বোরো চাষ। ভাল সফলতা আসায় চাষিরা মাছ ও ধানের পাশা পাশি ঘেরের আইলে সবজবি চাষ করতে থাকে। ঘেরের আইলে সবজি চাষে অল্প সময়ে লাভের মুখ দেখতে থাকে চাষিরা। ফলে জনপ্রিয় হতে থাকে ঘেরের আইলেসবজি চাষে। বর্তমানে ঘেরের আইলে উৎপাদিত সবজি সারা দেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে। অল্প সময়ে স্বল্প জমিতে এ চাষে বিপ্লব দেখা দেয়ায় বেশির ভাগ কৃষকরাই মৎস্য ঘেরের ভেড়িতে সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছে। তালার নগরঘাটা ইউনিয়নের কাবাস ডাঙ্গা গামের কৃষক কৃুরন মন্ডল,কার্তিক মন্ডলসহ অসংখ্য কৃষকের সাথে কথা হয়। তারা কেউ নিজের জমি আবার কেউ অন্যের জনি হারি নিয়ে ঘেরে মাছ ও আইলে সবজি চাষ করছে। এতে তাদের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। একই অবস্থ আরো অনেকের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছর উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে উৎপাদিত সবজির ৪০ ভাগ নষ্ট হচ্ছে। অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হলে এত সবজি নষ্ট হতো না। বর্তমানে দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব সবজির ৯০ শতাংশ বীজ দেশে উৎপাদিত হয়। দেশে চাষযোগ্য জমির মাত্র ১.৮ শতাংশ জমিতে শাকসবজি চাষ হয়। আর সাতক্ষীরা জেলাতে বর্তমানে ২ শতাংশ জমিতে সবজির চাষ হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ ড.মোঃ জামাল উদ্দীন জানান, সাতক্ষীরায় যে পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়, তার উল্লেখ যোগ্য শতাংশ আসে ঘেরের আইলে অথবা ঘেরের মাচা থেকে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় চলে যায়। এছাড়া লাভজনক হওয়ায় মাচা পদ্ধতিতে চাষাবাদ দিন দিন বাড়ছে। জেলাতে সবজি চাষে চাষীদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। সবজি চাষে বিভিন্ন করণীয় সম্পর্কে তাদের সচেতন করা হচ্ছে।

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ১০/১০/২০২২
০১৭১২৩৩৩২৯৯

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।