খুলনায় বিএনপির সমাবেশস্থলে মানুষের ঢল

খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার রাত ১০টার পর থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী ফেরিঘাট সোনালি ব্যাংক চত্বরের সামনে অবস্থান নেয়। ভোর থেকেই খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্লাকার্ড, ব্যানার এবং ধানের শীষ নিয়ে বড় বড় মিছিল নিয়ে আসতে থাকে।

এরপর নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো বিএনপির নেতা-কর্মীদের দখলে চলে যায়। এ সময় পুলিশকে নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সকাল ১০টার সময় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল, যশোর, মাগুরা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে।

বিভাগীয় গণসমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে সকাল পৌনে ১১টা থেকে দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করছেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) শিল্পীরা।

এ সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ কষ্ট স্বীকার করে এসেছেন। ঝিনাইদহের কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে সমাবেশে যোগ দেয়া যুবদল কর্মী নাসির জানান, শুক্রবার রাতে লোকাল ট্রেনে করে তারা খুলনা এসেছেন। ট্রেনে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। অনেকে ঝুলে, আবার অনেকে ছাদে উঠে এসেছেন। আসার পথে পুলিশ বাধা না দিলেও বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছে।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা কৃষকদল নেতা রবিউল ইসলাম জানান, আসার পথে ফুলতলা উপজেলায় তাদের বাধা দেয়া হয়েছে। তারা ওই বাধা ডিঙ্গিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।

মেহেরপুরের বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন বলেন, তারা শুক্রবার রাতে একটি পিকআপ ভ্যানে একসাথে ২০ থেকে ২৫ জন খুলনায় এসেছেন। সারা রাত না খেয়ে, না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। তবে কষ্ট নেই।

শালিখা উপজেলার বুনাগাতী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপি নেতা নূর মিয়া মোল্লা বলেন, রাতে ৫০ জন নেতাকর্মী ট্রলারে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন। নওয়াপাড়ায় তাদের আটকে দেয়া হয়। পরে ভ্যান, পায়ে হেঁটে, সিএনজিতে করে সকাল সাড়ে ১০টায় সমাবেশস্থলে পৌঁছেছেন।

ষাটোর্ধ্ব রহমত আলী জানান, তিনি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলা থেকে সমাবেশস্থলে এসেছেন। কিছু পথ নসিমন-করিমনে এসেছেন। আর বাকি পথ এসেছেন পায়ে হেঁটে। অপরদিকে বৃহস্পতিবার বা তার আগে অন্য জেলা থেকে আসা হাজার হাজার নেতা-কর্মীর শুক্রবার রাত কেটেছে সমাবেশস্থলে খোলা আকাশে নিচে গল্প-আড্ডা, গান আর স্লোগানে। অনেকে ফেসবুকে লাইভ দিয়ে, সেলফি তুলে এং বসমাবেশস্থলে আসতে না পারা সহকর্মীদের পরিস্থিতি জানিয়েছেন। সবমিলিয়ে রাতের সমাবেশস্থল ছিল উৎসবমুখর।

বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সমাবেশ বাস্তবায়নে গঠিত মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক এহতেশামুল হক শাওন বলেন, শত বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে এসে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। বহু বাধা পেরিয়ে এখানে আসতে পেরে তারা আনন্দিত। অনেক কষ্ট করে তারা এসেছেন। আজকের সমাবেশ সফলে তারা আগেভাগেই সমাবেশস্থল পূর্ণ করেছেন।

এদিকে, বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে খুলনা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলা। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খুলনা থেকে চলাচলকারী সব বাস, মিনিবাস, লঞ্চ এমনকি রূপসাঘাট, জেলখানা ঘাট, দৌলতপুর ঘাট ও দিঘলিয়া খেয়া ঘাটের পারাপারের নৌকা ও ট্রলার বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসা, শিক্ষা, চিকিৎসার জন্য খুলনার ওপর নির্ভরশীল আশপাশের জেলার মানুষ।

খুলনা মহানগরীর পাশের দিঘলিয়া উপজেলার জামাল উদ্দিন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমার ছেলে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিন্তু ভৈরব নদীতে খেয়া না থাকায় তাকে হাসপাতালে নিতে অনেক কষ্ট হয়েছে। রাজনীতির নামে আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে কেন হয়রানির শিকার হতে হবে?

উল্লেখ্য, চাল-ডাল-তেল-গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি, খুন-গুম, দুর্নীতি-দুঃশাসনের প্রতিবাদ এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকার পতনের দাবিতে আজ শনিবার খুলনায় বিএনপির তৃতীয় বৃহত্তর বিভাগীয় সমাবেশ ডাকা হয়েছে। নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে দুপুর ২টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

Check Also

হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৫ ইসরাইলি সেনা নিহত, আহত শতাধিক

গাজার উত্তরে জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে দীর্ঘদিন ধরে অভিযান চালাচ্ছে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। সম্প্রতি সেখানে হামাস …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।