গাড়ির বিষাক্ত গ্যাসেই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু

গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুরে প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধারের প্রায় আড়াইমাস পর তাদের মৃত্যুর রহস্য ওই কারের ভিতর বিড়াল রেখে উদঘাটন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাড়ির এসি’র বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। সম্প্রতি গাড়িটির ভেতরে একটি বিড়াল রেখে দরজা বন্ধ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ছেড়ে দেয়ার আধা ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে বিড়ালটি মারা যাওয়ায় এ দাবি করছে পুলিশ। তবে পুলিশের এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন মামলার বাদী।

জিএমপি’র গাছা থানার ওসি ইব্রাহীম হোসেন বলেন, গত ১৮ আগস্ট মহানগরীর গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে থেমে থাকা প্রাইভেটকার থেকে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)’র লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মুখ দিয়ে সামান্য লালা বের হওয়া ছাড়া শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। লাশ উদ্ধারের পর প্রায় আড়াই মাসেও শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায় নি। তবে তাদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, পিবি আই, সিআইডি, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করে আসছেন।

গাছা থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাদির উজ্জামান জানান, নিহত ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়া বা অন্য কোন্ কারণে হয়েছে তা নিশ্চিত হতে নিহতদের জব্দকৃত টিফিন ক্যারিয়ারের বাটিতে থাকা খাবারের উচ্ছ্বিষ্টাংশ, পানির বোতলে থাকা পানি, জর্দার কৌটা, ছেলের জন্য কেনা ফাস্টফুড খাবারের ইন্ট্যাক্ট প্যাকেটে থাকা পাস্তা’তে বিষ বা এ্যালকোহলের উপস্থিতি আছে কি-না তা পরীক্ষার জন্য নমুনা ঢাকাস্থ মহাখালীর প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের কার্যালয়ে এবং সিআইডি’র ফরেনসিক বিভাগের ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ঘটনার সময় গাড়িতে কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল কি-না বা গ্যাস লিক হয়েছে কি-না, যে কারণে তাদের মৃত্যু হতে পারে তা নিশ্চিত হতে জব্দকৃত তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার পরীক্ষার জন্য ঢাকার বি আরটিএ’তে নেয়া হয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় প্রাইভেটকারের কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া যায় নি। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নিহতদের ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর ঘটনার কোন ক্লু না পাওয়ায় জিএমপি’র গাছা থানার ওসি ইব্রাহীম হোসেন তার কর্মাভিজ্ঞতার আলোকে গাড়িতে বিড়াল রেখে পরীক্ষার জন্য একাধিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সহকর্মীদের সঙ্গে সম্প্রতি আলোচনা করেন। এর প্রেক্ষিতে নিহত শিক্ষক দম্পতির ব্যবহৃত প্রাইভেটকারের ভিতর একটি বিড়াল রেখে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ছেড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এর ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে বিড়ালটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ২৫ থেকে ২৬ মিনিটের মধ্যে বিড়ালটি মারা যায়। শিক্ষক দম্পতিও বিদ্যালয় থেকে রওনা দেওয়ার পর যে স্থান থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়, সেই দূরত্বটিও ছিল প্রায় একই সময়ের। এ থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষাক্ত গ্যাসের কারণেই ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। গাড়ি ও গাড়ির ভেতরে থাকা বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করে সেগুলো পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), বি আরটিএ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সসহ আরও কয়েকটি সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ডিএনএ, ভিসেরা ও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এসব প্রতিবেদন পেলেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করা যাবে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শাফি মোহাইমেন বলেন, নিহতদের ভিসেরা প্রতিবেদন না পাওয়ায় ময়না তদন্ত প্রতিবেদনও দেওয়া হয়নি। তবে এসব পরীক্ষার জন্য তিন মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।

তবে পুলিশের এই ব্যাখ্যা প্রত্যাখান করে মামলার বাদী বলেন, পুলিশের এই বিড়াল ব্যাখ্যার কোনো ভিত্তি নেই। আমরা তাদের যুক্তি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। তদন্ত সঠিকভাবে করতে না পারায় এমন ব্যাখ্যা দিচ্ছে পুলিশ।

থানার ওসি ইব্রাহীম হোসেন আরো বলেন, প্রয়োজনে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি আমরা প্রকাশ করব। তবে আশা করছি শীঘ্রই ওই শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গতঃ গত ১৭ আগস্ট বিকেলে বিদ্যালয়ের কাজ শেষে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার যোগে গাজীপুর মহানগরীর কামারজুরী এলাকার বাসায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ,কে,এম, জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। স্বজনরা বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে পরদিন ১৮ আগস্ট ভোরে বাড়ির কাছে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে থেমে থাকা প্রাইভেটকার থেকে ওই দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষক জিয়াউর রহমানের মেঝো ভাই কামারজুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতিকুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট গাছা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।