ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচন। রাজনীতির মাঠ আবারও উত্তপ্ত। সরব হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেতে ধরনা দিচ্ছে নতুন নতুন দল। এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে নির্বাচন কমিশনে। তবে এবার আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে ‘বিডিপি’ (বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি) নামে আবেদন করা নতুন একটি দল।
দলটির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসিতে এ আবেদন জমা দেন। দলের জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে স্বাক্ষর রয়েছে মো. কাজী নিজামুল হকের। তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কর্মপরিষদ সদস্য এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা।
তথ্য বলছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াত নতুন কৌশলে মাঠে নামছে বিডিপির মোড়কে। নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল হওয়ায় গত দুটি নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারেনি দলটি। আসন্ন নির্বাচনেও জামায়াত দলীয়ভাবে অংশ নিতে পারবে না আপাতদৃষ্টিতে। নিবন্ধন বাতিল হলেও জামায়াত ও দলটির ছাত্র সংগঠন শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে বেশ আগে থেকে।
বিডিপি ও জামায়াতের সম্পৃক্ততা, রাজনীতি ও সরকারের অবস্থান নিয়ে মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং সাংবাদিক, কলামিস্ট ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
বিডিপি নামে একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে, যে দলটি জামায়াতের রিফর্ম বা জামায়াতের রাজনীতির নতুন কৌশল বলে মনে করছেন কেউ কেউ?
এ প্রশ্নের উত্তরে আনিসুল হক বলেন, ‘আমি সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছি। সংশ্লিষ্ট কারণে আমার দায়বদ্ধতা রেখে কথা বলতে হয়। কোনো বিষয় যদি আদালত বা নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বিচার বা প্রক্রিয়াধীন থাকে, তখন আমি সে বিষয়ে মন্তব্য করি না।
নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। তার আগেই যদি আমি কোনো মন্তব্য করি, তাহলে আপনারাই লিখবেন আইনমন্ত্রী বা সরকার এখানে প্রভাব রেখেছে। এ কারণে আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
যদি রাজনৈতিকভাবে প্রশ্ন রাখি? জামায়াত যুদ্ধাপরাধের অপরাধে দণ্ডিত দল। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি উঠলেও সরকার…’
‘একটি রাজনৈতিক দল বাতিল করার জন্য আইনের যে পরিবর্তন দরকার, তা প্রক্রিয়াধীন। আইন পরিবর্তন করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
দুই যুগ ধরেও আইন পরিবর্তন করা গেলো না?
‘যে কোনো আইন করতে বা পরিবর্তন করতে সময় লাগে। আমাদের সময় দিতে হবে। উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাত হচ্ছে বলে বিএনপির এক নেতা অভিযোগ তুলেছেন?
‘আমার জানামতে জামায়াতের সঙ্গে সরকার বা সরকারদলের কোনো আলোচনা হচ্ছে না। বিএনপি অনেক অভিযোগই করে আসছে, যার ভিত্তি নেই। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির গাঁটছড়া রয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো আপস বা সমাঝোতা হতে পারে না। অন্তত আমি এটি বিশ্বাস করি না।’
শাহরিয়ার কবির
বিডিপি নামে নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, যে দলটিকে জামায়াতের নতুন প্ল্যাটফর্ম বলা হচ্ছে। আপনার বিশ্লেষণ আছে কি না?
‘জামায়াতের এই কৌশলটা নতুন কোনো কৌশল নয়। যখনই জামায়াত কোনো বিপদে পড়েছে, তখনই জামায়াত ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। তারা গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করেছে, মনোগ্রাম পরিবর্তন করেছে এই কৌশলের অংশ হিসেবে। খোলস পাল্টালেই কেউটে সাপ যেমন ঢোঁড়া সাপ হয়ে যায় না, তেমনি নাম পরিবর্তন করলেই জামায়াত তার রূপ পরিবর্তন করতে পারবে না। এখন যারা নতুন দল করছেন তারা তো মওদুদীবাদে বিশ্বাসী হয়েই রাজনীতি করেছেন। মওদুদীবাদ তো হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ বৈধতা দেয়। যেটা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে করেছিল। ধর্মের নামে রাজনীতিটাই হচ্ছে তাদের কাছে মুখ্য বিষয়।’
‘১৯৭১ সালে জন্মায়নি তারা বলছেন। তাতে কিছুই যায়-আসে না। ১৯৭১ সালে জামায়াত মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছে, তার দায় দলটির প্রত্যেক কর্মীকে নিতে হবে। জামায়াত নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই দায় নিতেই হবে। এরা তো জামায়াত থেকে বেরিয়ে এসে মানুষকে বিভ্রান্ত করে সুবিধা নিতে চাইছে। নির্বাচনে অংশ নিতে কৌশল নিচ্ছে মাত্র। জামায়াত থেকে বিডিপি হচ্ছে নতুন বোতলে পুরান মদ।’
কিন্তু দলটির দায়িত্বশীলরা মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে রাজনীতি করতে চাইছে।
‘মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে মেনে নেবো বলে তারা যতই বলুক, তারা এটি প্রাণে ধারণ করে না। তারা কি একবারও বলেছে, জামায়াত ১৯৭১ সালে ভুল করেছে?
তারা দায় অস্বীকার করতে পারে। কিন্তু তাতে তো সব মুছে যায় না। জামায়াতের জ্ঞাতি ভাই মুসলিম ব্রাদারহুড। তারা নির্বাচনের আগে নাম বদলে হলো ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি। এরাও নির্বাচনের আগে এমন কৌশল নিতে চাইছে। নির্বাচন কমিশনে সুবিধা পাওয়ার জন্য।’
নির্বাচন কমিশন কী করতে পারে?
‘নির্বাচন কমিশনকে এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মুওদুদীবাদ যদি গণহত্যাকে বৈধতা দিতে পারে এবং সেটা যদি মানবতাবিরোধী হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই অপরাধ থেকে জামায়াত বা জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী কারও বাঁচার উপায় নেই। জামায়াত এখন কার কাছে ক্ষমা চাইবে? ৩০ লাখ শহীদ পরিবার। অনেকে কবরে চলে গেছেন। কবরে গিয়ে তো ক্ষমা চাইতে পারবে না। কিয়ামতের পর তো ক্ষমা হতে পারে না। আমরা চাইছি ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত আমলে নিয়ে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হোক।’
সরকার নিষিদ্ধ করছে না কেন?
‘কেন করছে না তার জবাব সরকারের মন্ত্রীরা ভালো দিতে পারবেন। আমরা তো ৩১ বছর ধরে নিষিদ্ধের দাবি করে আসছি। ট্রাইব্যুনালে বিচার করে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব।’
আইনমন্ত্রী বলছেন আইন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে?
‘২০১৪ সাল থেকে এ কথাই বলে আসছেন। কে আইনমন্ত্রীর হাত-পা বেঁধে রেখেছেন আইন করতে?’
জামায়াতের সঙ্গে সরকারের কোনো বোঝাপড়া?
‘সরকার ভালো বলতে পারে কেন নিষিদ্ধ করছে না বা জামায়াত থাকলে কী সুবিধা? আমরা চাই জামায়াতের অপরাধের কারণে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক।’
জাগো নিউজ