সিলেট ব্যুরো: সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল নামে খ্যাত দিরাই উপজেলা ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় আজমল হোসেন নামের এক আওয়ামীলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। নিহত আজমল হোসেন চৌধুরী কুলঞ্জ গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে। আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক। সংঘর্ষ চলাকালে জনসভার মঞ্চে থাকা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও আহত হয়েছেন।
গতকাল দুপুরে দিরাই উপজেলা সদরে বিএডিসি মাঠে অনুষ্ঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আজমল হোসেন চৌধুরীর ভাগ্নে রহমত আলী বলেন, ‘আমি ও মামা একসাথে সম্মেলনে ছিলাম। আমার ও মামার উপর দুটি ইটের ঢিল এসে পড়লে মামা পিঠে আঘাত পান। তাৎক্ষণিক তার আঘাতস্থলে বরফ লাগিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে গেলে তার অবস্থার অবনতি হয়। এক পর্যায়ে মারা যান তিনি।’
দলীয় সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার দুপুরে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে মঞ্চে উঠা নিয়ে সভায় সাবেক পৌর মেয়র মোশারফ মিয়া ও প্রদীপ রায়ের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ করে ইটপাটকেল ও চেয়ার ছুড়ে। দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়ার সমর্থকদের মঞ্চে উঠতে না দেওয়ায় সভা শুরুর পর পর সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আহতরা হলেন- দিরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র মোশাররফ মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল হাসান চৌধুরী, জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সেন্টু, আওয়ামী লীগ নেতা এবাদুর রহমান কুবাদ, পৌর কাউন্সিলর এবিএম মাসুম প্রদীপ প্রমুখ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সংঘর্ষের সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুল সামাদ আজাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, সহ-সভাপতি নোমন বখত পলিন, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্ত, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার খানম-সহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। তারা চেয়ারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করেন।
পরে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সংঘর্ষের একঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের সম্মেলন শুরু হয়।
দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম দৈনিক সংগ্রামকে জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন চলাকালে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয় এতে সামান্য সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া দাবি করেছেন, ‘নিহত আজমল হোসেন চৌধুরী তার কর্মী। সংঘর্ষের সময় তার সামনে প্রতিপক্ষের ইটের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পর আজমলের মৃত্যু হয়েছে’। তবে অপরপক্ষ এটাকে ‘স্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে দাবি করছে। দিরাইয়ের সম্মেলনমঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর হামলা!
এদিকে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর দফায় দফায় হামলা করেছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের একাংশ।
নেতৃবৃন্দ মঞ্চে থাকা চেয়ারকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের আত্মরক্ষা করেছেন।
গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় উপজেলা বিএডিসি মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন মঞ্চে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের একাংশ মঞ্চে উঠতে না পেরে এই হামলা চালিয়েছেন বলে আরেকাংশের অভিযোগ। জানা যায়, হামলাকারীরা মঞ্চে প্রায় আধঘণ্টাব্যাপী ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করেন। হামলার সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের একাংশ মঞ্চে বসা কেন্দ্রীয় নেতাদের মানবঢাল তৈরি করে রক্ষা করেন। পরে অবশ্য পুলিশ হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
হামলার এক ঘণ্টা পরে পুনরায় সম্মেলন শুরু হয়। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান বলেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে মঞ্চে হামলার ঘটনা ঘটে। তাই মোশাররফ হোসেন ও রঞ্জন রায়কে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো।