সমতার ভিত্তিতে নারী ও যুব অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে

মীর খায়রুল আলম: কথার শুরুতে জানতে হবে বাজেট কি? বাজেট কত প্রকার। আমরা জানি প্রাপ্ত উৎস থেকে পাওয়া আয় কীভাবে ব্যায় করেতে হবে  তা সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো বিষয়টি হল বাজেট। একইভাবে সরকারের কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে বিভিন্ন উৎস থেকে কি পরিমান আয়ের আশা করেন এবং কোন খ্যাতে কি পরিমান ব্যায় হবে তার সম্ভব্য হিসাবকে সরকারি বাজেট বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে আর্থিক বছর হলো জুলাই থেকে জুন।
বাজেটকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-চলতি বাজেট ও মূলধন বাজেট। আয়-ব্যায়ের ভারসাম্যের দিক থেকে সুষম বাজেট ও অসম বাজেটে ভাগ করা হয়। আবার অসম বাজেটকে উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেটে ভাগ করা হয়।
প্রতি বছরই বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের আকার আগের বছরের তুলনায় বেড়েই চলেছে। কিন্তু বাজেটে যে বরাদ্ধ রাখা হয় সেখানে নারী ও যুব বান্ধব তেমন বিশেষ হিসাব ধরা হয় না।
তবে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে জনসংখ্যার ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মানুষের একের তিনভাগ মানুষ বেকার। যারা সিংহভাগ শিক্ষিত বেকার। এসব বেকারদের উন্নয়নে যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ কার্যক্রম চালু রাখলেও তা চাহিদার তুলনায় যোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব যুব ও নারীদের প্রশিক্ষণ পরবর্তী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দেবহাটা উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের এক জরিপে দেখা গেছে, ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করে চলতি ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬ হাজার, ৩শত, ৮২ জনকে বিভিন্ন ক্যাটগরীতে ট্রেনিং প্রদান করা হয়েছে। আর ঋণ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫ শত টাকা। যার মধ্যে চলতি বছরে ১৮ জনের মধ্যে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে, দেশের অর্থনীতিতে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাপক অবদান রয়েছে, তাই তাদের অগ্রগতিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। ব্যবসায়ীক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির পাশাপাশি বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার নারী হিসাবে ধরা হলেও সমাজ, সাংস্কৃতি, অর্থনীতি সহ সবখানে ধীরে ধীরে নারীর অংশ গ্রহন বাড়ছে। কিন্তু এই নারীদের টেকসই উন্নয়নে প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের অর্থনীতির মুলধারায় সম্পৃক্ত করা দরকার বলে মনে করেন নারী উদ্যোক্তা। সমাজ ও অর্থনীতে বিশেষ অবদান রাখতে সরকারি ও বেসরকারি ভাবে তাদের প্রনোদনা জরুরী বলে দাবি করা হচ্ছে।
দেবহাটা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে পোশাক তৈরী, শো-পিচ, নকশিকাঁথা, বøববাটিক, ফ্যাশান ডিজাইন সহ নানা ধরণের প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি নারীদের জন্য রয়েছে ঋণ সহায়তা কার্যক্রম। যার অংশ হিসাবে ২০১৭ সালে ৩ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৮ সালে ৫ লাখ ৫৫ হাজার, ২০১৯ সালে ৫ লাখ ১০ হাজার এবং ২১ সালে ৭ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এর বাহিরে চলতি অর্থ বছরে ২৪ লাখ টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা, ৩ লাখ টাকা ঋণ সহায়তা এবং ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা নারী সংগঠনকে সহায়তা প্রদান করা হবে। তবে প্রশিক্ষণ গ্রহনের পর নারীরা সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন না নানা কারনে। যার মধ্যে ঋণ না পাওয়া কারণে অনেক নারী উদ্যোক্তারা পুঁজি সংকটে ভোগেন। ঋণ পেতে স্টাম্প, জামিনদার পেতে ঝাঁমেলা পোহাতে হয় তাদের। সেই সাথে কাঁচামাল পেতে বেগ পোহাতে হয় নারী উদ্যোক্তাদের। কর ও ভ্যাটের ক্ষেত্রে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। সাথে ঋণের পরিধি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এলাকা ভিত্তিক নারী উদ্যোক্তা মার্কেট প্লেস সৃষ্টি করতে হবে। বাজেরটের মাধ্যমে বরাদ্ধ দিয়ে দেশে এবং দেশের বাহিরে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরী পণ্য বেচাকেনার ব্যবস্থার দাবি উদ্যোক্তাদের। বাজেট কালিন সময় সমতার ভিত্তিতে নারী ও যুব সমাজকে অন্তভূক্ত করে মতামতের ভিত্তিতে বরাদ্ধ করতে হবে।
নারী ও যুব সমাজের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোথায় কোন সেবা পাওয়া যায় জানেন না প্রায় ৬০% নারী ও যুবরা। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে কি বা তাদের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয় সে সম্পর্কে সিটিজেনচার্ট থাকলে অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন যুব ও নারীরা। সেই সাথে সরকারের দেওয়া বরাদ্ধগুলো যাতে প্রকৃতরা পেতে পারে সেজন্য অনলাইন ডাটাবেজ চালুর দাবি তাদের। সেই সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠানে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়ার সুবিধা করার সাথে সামাজিক নিরাপত্তা বেস্টনিতে আওতায় বেকারদের অন্তভূক্ত করে বেকার ভাতা চালুর দাবি। সেই সাথে দূর্যোগকালীন সময় পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রাখতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে জরুরী বরাদ্ধ রাখাতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি রাখার আবেদন নারী ও যুব সমাজের।
দেবহাটা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার অধির কুমার জানিয়েছেন, নারী ও যুবদের দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যগত দিকে বিশেষ নজর দেওয়া যেতে পারে। কারন বিশেষ করে গ্রামের কিশোরীদের পিরিয়ড সময়কালীন পুষ্টি ও গর্ভবর্তী নারীদের প্রসবকালীন এবং পরবর্তী স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। তাই এসময় বিশেষ সহায়তা দেওয়া যেতে পারে। অনেক গরীব নবজাতক অনেক টাকার অভাবে চিকিৎসা হতে পারে না। অনেক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে চিকিৎসা ও ঔষধ সেবা দেওয়া দরকার। যদিও সমাজসেবা দুস্থ ও অসহায় মানুষকে ঔষধ সেবা দিয়ে থাকে। কিন্তু সেটি বিশাল জনগোষ্টির জন্য খুবই কম সংখ্যক। শিশু ও মায়েদের বিকাশে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিশেষ বরাদ্ধ রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

লেখক: মীর খায়রুল আলম, সভাপতি, দেবহাটা প্রেসক্লাব।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।