ক্রাইমবাতা ডেস্ক রিপোট: একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া বলেছেন, পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে হাতছাড়া হয়েছিল। যুদ্ধে পরাজয়ের ব্যর্থতা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ছিল না।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সে বুধবার এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়েছে।
জেনারেল বাজওয়া আগামী সপ্তাহে অবসরে যাচ্ছেন। তার স্থলে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আসিম মুনিরকে মনোনীত করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ।
দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মু্ক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ ছাড়াও তার দেশে গত সাত দশক ধরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ করার বিষয়েও কথা বলেন জেনারেল বাজওয়া।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান বলেন, আমি আজ এমন এক বিষয়ে আলোচনা করবো যা আমরা পাকিস্তানিরা এড়িয়ে যাই। সেটি হলো একাত্তর সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) পাকিস্তানের সেনাদের আত্মসমর্পণ।’
‘আমি তথ্য সংশোধন করে দিতে চাই একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তান হাতছাড়া হওয়া সামরিক নয় রাজনৈতিক ব্যর্থতা ছিল। আর সেখানে ৯২ হাজার সেনা নয় বরং লড়াইরত সেনার সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৪ হাজার। বাকিরা পকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন।’
জেনারেল বাজওয়া বলেন, পাকিস্তানের এই ৩৪ হাজার সেনা আড়াই লাখ ভারতীয় সেনা এবং মুক্তিবাহিনীর প্রশিক্ষিত ২ লাখ যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। সব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও লড়াই করা সেনাদের এ ত্যাগ পাকিস্তানে স্বীকৃতি পায়নি। এটি ছিল মহা অন্যায়।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ নতুন কিছু নয়। রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর গত সাত দশক ধরে সেনাবাহিনীই দেশটির শাসন ব্যবস্থার মূল চাবিকাঠির নিয়ন্ত্রক বলে বলা হয়।
অনুষ্ঠানে জেনারেল বাজওয়া এ বিষয়টি স্বীকার করেন এবং বলেন, ‘এ হস্তক্ষেপ অসাংবিধানিক।’ একইসঙ্গে বিদায় নিতে যাওয়া পাকিস্তানের এই সেনাপ্রধান দেশটির রাজনীতিকদেরও চরম সমালোচনা করেছেন। জেনারেল বাজওয়া বলেন, ‘তাদের আচরণ ভুলে ভরা ও দাম্ভিক।’
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের ভুলের কারণে দেশ ও জাতি যে সমস্যার মধ্যে পড়ে সেটিও তুলে ধরে এসব ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াটা জরুরি বলে সতর্কও করেন পাকিস্তানের বিদায়ী সেনাপ্রধান।