অনলাইন ডেস্ক:: মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। এজন্য অবশ্য তাকে ২৫ বছর সংগ্রাম করতে হয়েছে।
৭৫ বছর বয়সী ইব্রাহিম স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার কিছু পরে এ শপথ নেন। তার কিছু সময় আগেই তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেন দেশটির রাজা।
১৯৯০ সালের আগেই তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও তাকে হঠাৎ বরখাস্ত করা হয় এবং পরে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল।
সদ্য শেষ হওয়া নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছে। কিন্তু সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১১২ আসনের সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো দল বা জোট পায়নি।
পাকাতান হারাপান জোট এবং নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের মালায়-মুসলিম পেরিকাতান ন্যাশনাল জোট সরকার গঠনের জন্য চেষ্টা চালিয়েছিল। এছাড়াও এ দৌড়ে ছিল সাবাহ রাজ্যের বোর্নিও ও সারাওয়াক। পাশাপাশি ছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐতিহাসিক পরাজয়ের আগে প্রায় ৬০ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারকারী জোট বারিসান ন্যাশনাল (বিএন)।
আনোয়ার ইব্রাহিম ছাত্রজীবনে ১৯৭১ সালে মুসলিম ইয়ুথ মুভমেন্ট গঠনের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন। সংগঠনটি পরবর্তী সময়ে গ্রামীণ দারিদ্র্য ও অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল।
তার এসব কর্মকাণ্ড তৎকালীণ প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি তাকে ইউনাইটেড মালয়েজ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও বা উমনো) যোগদানে উদ্বুদ্ধ করেন। বিএন জোটের প্রধান এ দলটি ১৯৫৭ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর থেকে শাসন ক্ষমতায় ছিল।
দূরদর্শিতাসম্পন্ন, উচ্চাভিলাষী ও সংস্কারমনা রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহিম দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর পদে আসীন হন এবং পরে উপ-প্রধানমন্ত্রী হন।
কিন্তু এশিয়ায় তৎকালীন অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় মাহাথির মোহাম্মদ তাকে তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে ভাবতে থাকেন।
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগ আনা হয়।
এ ঘটনার পর আনোয়ার ইব্রাহিমের হাজারো সমর্থক রাস্তায় বিক্ষোভ করেন। তখন গ্রেফতার করা হয় অনেককে।
আনোয়ার ইব্রাহিম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০০৪ সালে মুক্তি পেলেও ১৯৯৮ সালে তার পতনের সাথে যে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা আবারো গতি পায়। এবং তাকে দ্বিতীয়বার সমকামিতার বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমকে ১০ বছরের মতো জেলে থাকতে হয় এবং সবশেষ ২০১৮ সালে ক্ষমা পেয়ে জেলমুক্ত হন।
ওই সময়ে পিএইচ প্লাটফর্মে তিনি আবার মাহাথির মোহাম্মদের সাথে যুক্ত হন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির (ওয়ানএমডিবি) বিরুদ্ধে তারা সোচ্ছার হন।
কিন্তু মাহাথির তার ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেলে এবং মালয়-মুসলিম রক্ষণশীলদের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও চাপের মধ্যে পিএইচ সরকারের পতন ঘটলে শীর্ষে যাওয়ার পথে আনোয়ার আবারো ব্যর্থ হন।
সূত্র : আলজাজিরা