নাজমুল হক খান, ক্রাইমবাতা রিপোট, তালা: (সাতক্ষীরা): দুর্বৃত্তদের ছোড়া এসিডে দগ্ধ সাতক্ষীরার সোনালী খাতুন (১৯) এবারের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৯৬ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। পাটকেলঘাটার কুমিরা পাইলট বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ভকেশনাল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সোনালী।
নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে সাফল্যের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে সোনালী। সে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নকাটি গ্রামের নুর ইসলামের কন্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর মাত্র ১৮ দিন বয়সে বাবা মায়ের কোলে থাকা অবস্থায় এসিড আক্রান্ত হয় সোনালী। এরপর স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়ার পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় তাকে।
সেখান থেকে সোনালীকে ঢাকার একটি হাসপাতালে এক বছর উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিরা গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেছে। বর্তমানে মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
সোনালীর বাবা নুর ইসলাম জানান, অত্যন্ত মেধাবী সোনালী অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে নিজের পরিশ্রম ও একাগ্রতা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। বাবা হিসাবে অনেক গর্বিত। ভবিষ্যতে মেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান তিনি।
নূর ইসলাম আরও জানান, ‘প্রতিবেশীদের সাথে বাঁশঝাড় কেটে ফেলা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় তারা মামলা করেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর এসিড ছুড়ে মারে। এতে সোনালী ও তার মা খোদেজা বেগম মারাত্মক দগ্ধ হন।
এসিড সন্ত্রাসের শিকার সোনালী খাতুন জানায়, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করায় সে অনেক খুশী। ভবিষ্যতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা আছে তার। এসিড আক্রান্ত হওয়ায় সহপাঠীরা তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি উল্লেখ করে জানায়, ‘স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের ব্যক্তিরা তাকে সাহস যুগিয়েছে। চেষ্টা করেছে তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার। তারা সেই কাজে সফলও হয়েছে।
কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ জানান, সোনালীর এই সাফল্যে তিনি এবং তাঁর শিক্ষকমন্ডলী গর্বিত। সোনালী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়েছে। সোনালীর অদম্য মানসিকতা, সাহস ও সকলের সহযোগিতা তাকে এতো দূর আসতে সাহায্য করেছে।