সাতক্ষীরায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

মুজাহিদুল ইসলাম, ক্রাইমবাতা রিপোট : শীত যত বাড়ছে, খেজুরের গুড়ের চাহিদাও বাড়ছে। তাই সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় খেজুর রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে খেজুর রস ও গুড় দিয়ে তৈরি হয় নানান রকমের বাহারি পিঠাপুলি ও পায়েস। তাই বানিজ্যিক ভাবেও খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

গাছিরা জানায়, সারা বছর অবহেলিত খেজুর গাছগুলোকে ঝুড়ে নতুন রূপ দেন তারা। প্রতিদিন বিকেলে খেজুর গাছের সাদা অংশ পরিষ্কার করে ছোট-বড় মাটির হাড়ি বেঁধে রাখা হয়। এর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি ও নানা শীতকালীন পিঠা তৈরির ধুম পড়ে। এখানকার খেজুরের গুড় ও পাটালির বিভাগীয় শহরসহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে নলেন গুড়ের সন্দেশ ও প্যাড়া মিষ্টি দেশজুড়ে বিখ্যাত। তাছাড়া পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করা হয়।

জানা গেছে, ভারত সীমান্তবর্তী সাতক্ষীরা জেলার সদর, কলরােয়া ও তালা উপজেলায় খেজুর গাছের সংখ্য বেশি। সাতক্ষীরার কলরােয়া উপজেলা থেকে আসা গাছিরা মৌসুমের শুরুতেই মালিকদের কাছ থেকে খেজুর গাছ চুক্তিতে নিয়ে নেয়। এসব খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ ও গুড় তৈরি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা থেকে আসা খেজুর রস সংগ্রহকারী তেঁতুলিয়া গ্রামের গাছি ইয়াছিন আলী, গণেশ শীল ও কলাাগাছী গ্রামের কেনাগাছী জানায়, প্রতি বছরের মতো এবারো সাতক্ষীরা, কলরােয়া ও তালা উপজেলার বিভন্ন এলাকায় তারা খেজুর গাছ লিজ নিয়েছেন।

তারা বলেন, শীতের পুরো ৪ মাস এসব খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন করবেন। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে এভাবেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের মাধ্যমে চুলার আঁচে পাটালি ও লালি গুড় তৈরি করে থাকেন।

তারা আরও বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর চিনির বাজার চড়া হওয়ায় গুড়ের বাজারেও কিছুটা চাপ পড়েছে। তাই এ বছর কিছুটা বেশী লাভের আশা করছি আমরা।

তালার বারইপারাই খেজুর গুড় তৈরী দেখতে আসা ইদ্রিস মিয়া বলেন, শীতকাল মানেই মা, দাদী কিংবা নানীর হাতে তৈরি পিঠা খাওয়ার ধুম। আর শীতকাল মানেই মিষ্টি রোদে বসে খেজুর রসের সাথে মুড়ি ভিজিয়ে খাওয়ার আনন্দই আলাদা।

গুড় বিক্রেতা লিয়াকত আলী জানায়, শীত মৌসুমের শুরু থেকেই খেজুর রস থেকে তৈরি পাটালি গুড় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং লালি গুড় ২০০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। বাজারে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেশি।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দীন বলেন, খেজুর গাছ পরিবেশ বান্ধব ও স্থান সাশ্রয়ী একটি বৃক্ষ প্রজাতি। এ প্রজাতি দুর্যোগ প্রতিরোধী বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশেও টিকে থাকতে পারে। খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে খামারিরা আর্থিক লাভবান ও স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত বেশ সুপ্রাচীন। গ্রামীণ অর্থনীতি এবং মৌসুমি কর্মসংস্থানে খেজুর গাছের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে।

বিশেষ করে শীতকালে বাংলাদেশের সর্বত্রই খেজুর রস, খেজুর গুড় বাঙালি সংস্কৃতিতে রসঘন আমেজ লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের মাটি ও কোমল প্রকৃতি হওয়ায় খেজুর গাছ বেড়ে ওঠার জন্য বেশ উপযোগী। রাস্তা, বাঁধ, পুকুর পাড় এমনকি খেতের আইল এবং আবাদি জমিতে এ বৃক্ষ বেশ ভালো জন্মে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।