সাতক্ষীরায় জামায়াতের গণ মিছল : গ্রেফতার ১৭ জন

 ক্রাইমবাতা রির্পেোট: সাতক্ষীরা সংবাদদাতা:  গণতন্ত্র পূণঃপ্রতিষ্ঠা, অন্তবর্তীকালিন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন, আমীরে জামায়াত ডাঃ শরিফুল ইসলাসহ গ্রেপ্তারকৃত সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামের উর্দ্ধগতি রোধ, সরকারের সীমাহীন দুর্ণীতির প্রতিরোধ ও কেন্দ্র ঘোষিত ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের গণমিছিল  অনুষ্ঠিত হয়েছে।
    আজ সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে শহরের হাটের মোড় থেকে মিছিলটি বের হয়। পরে মিছিলটি তিন খন্ড তিন দিকে চলে যায়। মিছিলের একটি অংশ হাটের মোড় থেকে তুফান মোড়ের দিকে অগ্রসর হে বিক্ষোভ করে। মিছিলের অপর অংশ ইটাগাছা হাটের মোড়ের দিকে অগ্রসহ হয়ে বিক্ষোভ করে। মিছিলের অপর একটি অংশ সুলতানপুর বড় বাজার হয়ে মুন্সিপাড়ার দিক বিক্ষোভ করে। মিছিলটি উপজেলার সামনে পৌছালে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এসময় সেখানেই সমাবেশ করে বিক্ষোভ কারীরা। এসময় পুলিশ তিন জনকে আটক করে। মিছিল শেষ করে ফেরার পথে কদমতলা মোড় এলাকা থেকে ৬ জন, মুন্সিপাড়া থেকে ৩ জন ও ভিষা অফিস মোড় এলাকা থেকে ২ জনসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আরো ৬জনকে আটকের খরর নিশ্চিত করেছে দলটি।সংক্ষিপ্ত সমবেশে সাতক্ষীরা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিপতিত। দেশ অব্যাহতভাবে নতুন নতুন সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও সামাজিক অঙ্গণে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বিদ্যমান। বর্তমান অবৈধ সরকার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য আদালতের দোহাই দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। অথচ আদালতের রায়ে পরপর দু’টি নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। তারা ক্ষমতার মোহে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। তিনি আরো বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসনের আয়োজন করে অন্যায় ও অনৈতিকভাবে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করে। আজ বাংলাদেশে জনগণের ভোটাধিকার নেই, কথা বলা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। চলাফেরা, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ আজ এক অধিকারহারা জাতিতে পরিণত হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারী ও উপজেলার পশ্চিম নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান (২১), একই উপজেলার ভাড়াসিমলা গ্রামের আজগার আলী গাজীর ছেলে সাগর হোসেন (২৫), একই গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে ছাত্রশিবির কর্মী আবু মুছা (২২), সাতক্ষীরা সদরের ঘোনা গ্রামের মোকছেদ আলী গাজীর ছেলে স্থানীয় ওয়ার্ড জামায়াতের রুকন মশিয়ার রহমান (৬০), একই গ্রামের সৈয়দ আলী গাজীর ছেলে জামায়াত কর্মী মোঃ ফজলুর রহমান (৬২), সাতক্ষীরা শহরের মুন্সিপাড়ার সামছুল আলমের ছেলে জামায়াত কর্মী শফিকুল আলম(৫৫), সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ছাত্রশিবির কর্মী সাঈদ হোসেন (১৯), একই উপজেলার কাথন্ডা গ্রামের জিল¬ুর রহমানের ছেলে ছাত্রশিবির কর্মী আল আমিন হোাসইন (২৩), একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে ছাত্রশিবির কর্মী বায়েজিদ হোসেন (২২), একই গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে ছাত্র শিবির কর্মী মোস্তাকিম বিল্ল¬াহ (১৭), আব্দুল মজিদের ছেলে ছাত্রশিবির কর্মী সোলাইমান হোসেন (২৩), ইমাম আলীর ছেলে জামাযাত সমর্থক মফিজুল ইসলাম (৩৫), একই উপজেলার মৃগিডাঙা গ্রামের মান্নান গাজীর ছেলে ছাত্রশিবির কর্মী রাশেদ হোসেন (১৯), শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে ছাত্র শিবির কর্মী জাহিদ হাসান(২২), দেবহাটা উপজেলার উত্তর কুলিয়া গ্রামের বেলায়েত আলী গাজীর ছেলে ছাত্রশিবিরের সাইফুল ইসলাম (২২) ও একই উপজেলার ঘোনাপাড়া গ্রামের গোলাম রহমানের ছেলে জামায়াত কর্মী আব্দুল হামিদ সরদার (৫৮)।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ মোঃ ফখরুল আলম খাঁন বলেন, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা শনিবার সকালে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১৬ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার কাছ থেকে পাঁচটা ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উপপরিদর্শক দোলায়ার হোসেন বাদি হয়ে সরকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে ককটেল ফাটিয়ে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে ১৯৭৮ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩), ২৫(ডি)তৎসহ বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের ৪ ও ৬ ধারায় শনিবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

 

জামায়াতের ১০-দফা কর্মসূচি :জামায়াতের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-১. অবিলম্বে বর্তমান অনির্বাচিত, অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে গণতন্ত্র হরণকারী, দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ এর আলোকে নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ একটি অন্তর্র্বতীকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে হবে;

২. কেয়ারটেকার সরকার বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালট এর মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে;

৩. বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ সকল বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, আলেম-উলামা, মানবাধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের সাজা বাতিল, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের ওপর জুলুম-নির্যাতন বন্ধ ও সকল রাজনৈতিক কারাবন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে;

৪. অবিলম্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ সকল দলের অফিস খুলে দেয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে স্থগিতকৃত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেয়া এবং দেশে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সভাসহ সকল ধরনের সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালনে প্রশাসন ও সরকারি দল কর্তৃক সকল প্রকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন মামলা ও নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে;

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সকল কালা-কানুন বাতিল করতে হবে;

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ সেবা খাতসমূহে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে এবং কৃষি ও শিক্ষা উপকরণ, শিশুখাদ্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনয়ন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরী নিশ্চিত করা, নারী-শিশু নির্যাতন, শিশুশ্রম বন্ধ করা ও কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে;

৭. গত ১৫ বছরব্যাপী বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে। সুদ, ঘুষ বন্ধ করাসহ ছাত্র-যুব সমাজের চরিত্র রক্ষা ও মাদকের ছোবল থেকে যুব সমাজকে উদ্ধার এবং ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে;

৮. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সকল নাগরিকদের উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে;

৯. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে;

১০. সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতিকে দ্বিধা-বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।