শেখ হাসিনার সরকার আর নাই দরকার’ শ্লোগানে উত্তাল রাজপথ

শেখ হাসিনার সরকার আর নাই দরকার’ শ্লোগানে উত্তাল রাজপ

গণমিছিল থেকে কর্মসূচি ঘোষণা ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান

 ৩১ডিসেম্বর ২০২২ – ২৩:৫৮  শনিবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ |

গণমিছিল থেকে কর্মসূচি ঘোষণা ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান

১০ দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বিএনপির গণমিছিল

গণঅভ্যুত্থানেই আপনাদের বিদায় করবো তার নমুনা দেখে যান : ড. মোশাররফ

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল ও ইবরাহীম খলিল : গতকাল শুক্রবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত গণমিছিল থেকে গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনকারীরা। আগামী আগামী ১১ জানুয়ারি সারা দেশে সব বিভাগীয় শহরে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ওয়ান-ইলেভেন সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে ওইদিন গণঅবস্থানের কর্মসূচি দেয়া হয় বলে জানা গেছে। বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শুধু এই গণমিছিল নয়, আমরা এই ১০ দফা কর্মসূচি আদায় করার জন্য আরও কর্মসূচি একের পর এক পর্যায়ক্রমে দেব। বিএনপির পাশাপাশি গণমিছিলের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশকারী দল ও জোটও যুগপৎভাবে ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করে। অন্যান্য জোট ও যুগপৎ আন্দোলনকারী দলগুলো জাতীয় প্রেসক্লাব, বিজয়নগর, পান্থপথসহ বিভিন্ন এলাকায় পালন করবে। এদিকে গতকাল বিএনপিসহ সরকার বিরোধী জোট ও দলগুলোর ডাকা গণমিছিল পরিণত হয় জনসমুদ্রে।  জুমার নামাজের পর মতিঝিল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে লাখো নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। বিএনপির গণমিছিল বিকেল ৩টার দিকে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত পৌনে সাতটার দিকে। গণমিছিলের অস্তিত্ব ছিল প্রায় ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার। এদিকে রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামীর গণমিছিলে পুলিশ বেধড়ক লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হবার পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় শতাধিক নেতাকর্মীকে। সংগঠনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের এমন ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি পুলিশী বাধা, হামলা ও গ্রেফতার সত্ত্বেও গণমিছিল সফল করার নেতাকর্মীসহ সবাইকে অভিনন্দন জানান। এদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দল-জোটের গণমিছিলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ দলগুলো। গণমিছিল উপলক্ষে ফকিরেরপুল থেকে শুরু করে মগবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক ও গলিতে ব্যাপক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সাঁজোয়া যান, জল কামানের গাড়ি, প্রিজন ভ্যান মোতায়েন করা হয়।

গতকাল ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় বিকাল তিনটায় নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, মৌচাক হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয় রাত পৌনে সাতটায়। দুপুরে জুম্মার নামাজের আগেই নয়াপল্টনে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেন। মিছিলের সম্মুখভাগ যখন কাকরাইল মোড় পেরিয়েছে পেছনের অংশ ছিল মতিঝিল নটরডেম কলেজ পার হয়ে আরো কিছুটা পেছনে। কর্মসূচি শুরুর আগে নেতা-কর্মীদের অনেকে নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে পার্শ্ববর্তী মসজিদের সঙ্গে মিলিয়ে জুমার নামায আদায় করেন। লাল, নীল, সবুজ টুপি মাথায় জাতীয় পতাকা ও বিএনপির পতাকা হাতে নিয়ে তারা এতে অংশ নেন।

সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়, বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবির কথা গণমিছিলের ব্যানার এবং কর্মীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল। ঢাকার গোলাপবাগে বিভাগীয় সমাবেশ থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এ গণমিছিল বের করে বিএনপি। এর আগে ২৪ ডিসেম্বর দেশজুড়ে এ কর্মসূচি পালন করলেও সেদিন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে ঢাকায় তা পিছিয়ে ৩০ ডিসেম্বর করা হয়।

গণমিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলটি। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, পাড়ায়-মহল্লায় পাহারা বসিয়ে সরকার জনগণের রাজপথে আসা রুখতে পারবে না। সরকার বলে জনগণ আমাদের সাথে নাই। জনগণ আছে কি নাই আমি সরকারকে তাদের যারা গোয়েন্দা সংস্থা, তাদের যারা বিভিন্ন ব্যক্তি, তাদের বলছি- আজকের গণমিছিল দেখে যান। আপনারা যে বলেছেন, পাড়ায় পাড়ায় আপনারা পাহারা দেবেন। আপনারা পাহারা দিয়েছেন কিন্তু এদেশের জনগণকে আপনারা ঘরে রাখতে পারেন নাই। অতএব আমরা বলি, আগামী দিনে এদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে আপনাদেরকে বিদায় করবে-তার নমুনা হিসেবে এই গণমিছিল দেখে যান।

চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা করে তিনি বলেন, আজকে যেসকল দল ও জোট আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে এই গণমিছিল করছে আমাদের বিশ্বাস ওই সকল দলগুলোও যুগপৎভাবে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। খন্দকার মোশাররফ বলেন, শুধু এই গণমিছিল নয়, আমরা এই ১০ দফা কর্মসূচি আদায় করার জন্য আরও কর্মসূচি একের পর এক পর্যায়ক্রমে দেব। আমরা আশা করি, গণতান্ত্রিক দল, আমরা মধ্যপন্থি শান্তিপূর্ণ দল, আমরা এ পর্যন্ত যত সমাবেশ, যত কর্মসূচি নিয়েছি শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে এবং আজকের গণমিছিলও শান্তিপূর্ণভাবে আমরা শেষ করব।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আজকে ঘোষণা করতে চাই, যত গ্রেপ্তার, যত নির্যাতন হোক না কেন- রাস্তায় আমাদের নেতাকর্মী শুধু নয় জনগণও নেমে গিয়েছে। আর তাদেরকে দমানো যাবে না। জনগণ ভোট দিতে পারলে ‘সরকারের কোনো পাত্তা থাকবে না’ দাবি করে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন ওদের জামানত বাতিল হয়ে যায়, বাজেয়াপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কিন্তু সরকারকে আসলে সিগন্যাল দেয়া হচ্ছে।

ড. মোশাররফ আরও বলেন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ধারা তারা অব্যাহত রাখতে চান। তিনি বলেন, সরকার নিজে নিজে ক্ষমতা ছাড়বে না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হবে। মোশাররফ বলেন, বিএনপি মহাসচিব ও স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ ২৪ হাজার নেতা-কর্মী জেলে আছেন। তারপরও ক্ষমতাসীনেরা তাদের নেতা-কর্মীদের দমাতে পারেনি। অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকের পর্যাপ্ত তারল্য নেই। ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। সরকার ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারছে না। এ সরকারের পক্ষে অর্থনীতি মেরামত করা আর সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দ্রব্যমূলের কষাঘাতে মানুষ অতিষ্ঠ। দারিদ্যের সংখ্যা বেড়ে ৪০ শতাংশে গিয়েছে। ধনী আরো ধনী হয়েছে, গরীব গরীব হয়েছে।

সরকারের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপির এ নেতা বলেন, সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারে গঠন করতে হবে। তারাই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। তাদের অধীনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

মগবাজারের চৌরাস্তায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে গণমিছিলের সমাপ্তি টানেন। তবে গণমিছিল সমাপ্তির দুই ঘন্টা পরও মিছিল আসতে থাকে। মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন ও মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন।

এর আগে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ছোট ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও শাহজাহান ওমর, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আফরোজা খানম রীতা, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেনজীর আহমেদ টিটোসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে আফরোজা আব্বাস ও হেলেন জেরিন খানের নেতৃত্বে মহিলা দল গণমিছিলের প্রথমে ছিল। সবশেষে ছিল নটরডেম কলেজের সামনে মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। মিছিলে মুক্তিযোদ্ধা দল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, জাসাস, ও ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এছাড়া আশপাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ থেকেও হাজার হাজার নেতাকর্মী গণমিছিলে অংশ নেন।

গণমিছিল কর্মসূচির প্রধান সমন্বয়ক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করেছি। বিএনপির সৈনিকেরা কতটা সুশৃঙ্খল থাকতে পারে, তার উদাহরণ এই গণমিছিল।

যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বড় জমায়েত করেছে বিএনপিসহ সমমনা তিনটি জোটসহ ৩৩ টি দল। প্রায় একই সময়ে গণমিছিল থেকে আগামী ১১ জানুয়ারি গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় তারা।  যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর মালিবাগ, পল্টন ও মতিঝিল এলাকায় জামায়াতে ইসলামী মিছিল বের করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। একইসাথে রাবার বুলেট, টিয়ারসেল নিক্ষেপসহ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। ঢাকার বাইরে রংপুরে বিএনপিসহ অন্যান্য জোট ও দলগুলো একই কর্মসূচি পালন করে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে গত ২৪ ডিসেম্বর সেখানে জেলা পর্যায়ের এই কর্মসূচি পালন করেনি স্থানীয় বিএনপি।

জানা গেছে, গণমিছিলের মূল ট্রাকে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা।

গণমিছিলে সার্বিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের ছিলেন ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বেনজীর আহমেদ টিটো, তাইফুল ইসলাম টিপু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, নবী উল্লাহ নবী, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, হাবিবুর রশীদ হাবিব, বেলাল আহমেদ, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, হায়দার আলী লেলিন, খান রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান সুরুজ, অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-আহ্বায়ক, সাধারণ সম্পাদক-সদস্য সচিব।

১২ দলীয় জোট : বিজয়ের মাসে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ১২ দলীয় জোট। শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনের সড়কে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের নেতারা এই ঘোষণা দেন। এর আগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় নগর এলাকায় জড়ো হতে থাকেন ১২ দলীয় জোটের নেতারা। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি সমর্থন করে এসব দাবি আদায়ে ১২ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও গণমিছিল করার ঘোষণা দেন।

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে এই জোটের মিছিল শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে জোটের নেতারা বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু করে পুরানা পল্টন মোড়ে ঘুরে নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে মিছিল শেষ করেন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২২ ডিসেম্বর বিএনপির সমমনা ১২দলীয় জোট আত্মপ্রকাশ করেছে।

১২ দলীয় এই জোটে রয়েছেন মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এলডিপি, জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি।

এদিকে গণমিছিলের আগে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে আজ নতুন পর্বের সূচনা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলন এ দেশে নতুন পরিস্থিতির জন্ম দেবে বলে মনে করেন এই নেতা। সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ১১ জানুয়ারির নতুন আরেকটি কর্মসূচি ঘোষণা দেন তিনি। ওই দিন বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান মোস্তফা জামাল হায়দার। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায় এই কর্মসূচি দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

গণসমাবেশ পূর্ব সমাবেশে সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করে তারা ঘরে ফিরবেন।

এনডিপির চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদ আবু তাহের বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ১৭০ দিন হরতাল করেছিল। ক্ষমতায় এসে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। অবিলম্বে সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল উত্থাপন করতে হবে। রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। সরকার পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে না দিলে সরকার পালিয়ে যাওয়ার পথ পাবে না।

মুসলিম লীগের মহাসচিব জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী বলেন, মেহনতি জনতার সংগ্রাম কখনোই ব্যর্থ হয় না।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মো. ইকরাম বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া দেশে নির্বাচন হবে না। আলেমদের মুক্তি দিতে হবে।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল করিম বলেন, খালেদা জিয়াকে চার বছর কারান্তরীণ রেখে তিলে তিলে মারার চেষ্টা চলছে। আলেম-ওলামাদের অন্যায়ভাবে দুই বছর কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। আমরা আলেম-ওলামাসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি চাই।

গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জাগপার সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, এনডিপির চেয়ারম্যান কাজী মোহাম্মদ আবু তাহের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। গণমিছিলে অংশ নিয়ে নেতা–কর্মীরা ‘এই মুহূর্তে দরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, ‘নিশিরাতের সরকার আর না আর না’, ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ ইত্যাদি শ্লোগান দেন।

গণতন্ত্র মঞ্চ : রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। একইসাথে তারা কর্মসূচী ঘোষণা করে। সকাল ১১টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চ জাতায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করে। মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন জোটের নেতারা। মিছিলটি পুরানা পল্টন, বিজয়নগর হয়ে কাকরাইল মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

কাকরাইল মোড়ে এক সমাপনী সভায় নেতারা ঘোষণা দেন, তারা জানান আগামী ১১ জানুয়ারি রাজধানীতে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বাবলু বলেন, আমাদের গণমিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। ১১ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। সবাইকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু, গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান বক্তব্য রাখেন।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণমিছিলের আগে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ হয়। সমাবেশে কালো কাপড়ে বড় ব্যানারে ‘নিশিরাতে ভোট ডাকাতির ৪ বছর: ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধ হোন: সমাবেশ ও গণমিছিল’ লেখা ছিলো। গণতন্ত্র মঞ্চের ৭ দলের কয়েকশ’ নেতা-কর্মীরা এই সমাবশ ও গণমিছিলে অংশ নেন। কর্মীরা ‘ভোট চোর সরকার, আর নাই দরকার’, ‘শেখ হাসিনার সরকার, আর নাই দরকার’, ‘আগুন জ্বালাও আগুন জ্বালাও, ভোট চোরের আস্তানায়’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এই মোনাফেক সরকারের অধীনে আগামীতে কোনো জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়, আগামীতে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে এবং পদত্যাগ করার পরে আলাপ-আলোচনা করে নির্বাচনকালীন অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। এই কোনো বিকল্প নাই। তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে একটা কারণের জন্য ধন্যবাদ জানাই। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ ভোট চোরকে ক্ষমা করে না, বাংলাদেশের মানুষ ভোট ডাকাতদেরকে ক্ষমা করে না। প্রধানমন্ত্রীর এই উপলব্ধির জন্য ধন্যবাদ জানাই। রংপুরের মানুষ সিটি করেেপারেশন নির্বাচনে কয়েকদিন আগে নৌকা প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে মানুষ প্রমাণ করেছেন ভোট ডাকাতদের মানুষ ক্ষমা করে না। এভাবে যদি ৫০ শতাংশ নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় অধিকাংশ থেকে আওয়ামী লীগের জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন জাতির জন্য একটা কলঙ্কজনক দিন। নিশিরাতে ভোট ডাকাতি করে আজকে এই সরকার রাষ্ট্রকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। কাজেই এই সরকার দেশের মানুষকে, নাগরিককে এমন কি নিজের দলের সদস্য-সমর্থকদেরকে যেভাবে অপমান করেছে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা আর কখনো ঘটেনি। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে গণতন্ত্র মঞ্চ আওয়াজ তুলেছি, আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে জবাবদিহিতার বাংলাদেশ, মানুষ ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করবে এবং সেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিতা করে দেশ পরিচালনা করবে।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট: গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মিছিল বের করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। বিকেল ৪টার পর তারা মিছিল শুরু করে। মিছিলটি সুপ্রীম কোর্টের সামানের চত্বর ঘুরে নয়া পল্টন হয়ে আবার প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়। মিছিল পূর্ব সমাবেশে এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ জোটের নেতারা বক্তব্য রাখেন। তারাও আগামী ১১ জানুয়ারি রাজধানীতে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে ঘোষণা দেন।

এলডিপি : বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে গণমিছিল করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। বিকেলে পূর্ব পান্থপথ (এলডিপি কার্যালয়) থেকে শুরু হয়ে মালিবাগ মোড়ে গিয়ে পুনরায় মগবাজার গিয়ে মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। মিছিল পূর্ব সমাবেশে এলডিপির প্রেসিডেন্ট অলি আহমেদ আগামী ১১ জানুয়ারি সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সারাদেশে গণঅবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এসময় কর্নেল অলি আহমেদ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা বিএনপি ঘোষিত কর্মসূচিগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে পালনের অংশ হিসেবে গণমিছিল করছি। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অর্থনৈতিকভাবে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষকে আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। মোট্রোরেলসহ মেগা প্রজেক্টের নামে বাংলাদেশ থেকে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।

অলি বলেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা আজ বিধ্বস্ত। যার কারণে আগামী দুই-তিন বছর পর প্রশাসন চালানোর জন্য যোগ্য ও মেধাবী জনবল পাওয়া যাবে না। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস। যার কারণে এক কোটির অধিক মানুষ ভারতে চিকিৎসার জন্য গমন করছে। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি আজ সংকুচিত হচ্ছে। আমদানির টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যাংকে টাকার অভাব। দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার অর্থনৈতিকভাবে বিপদে পড়েছে। এবং এর জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হবে। গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. নূরুল আমিন, নেয়ামূল বশির, আওরঙ্গজেব বেলাল, মাহবুব মুর্শেদ, সাকলাইন, ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব রহমান, কারিমা খাতুন, যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন মিয়াজীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

পেশাজীবীদের মিছিল: ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ- বিএসপিপি গতকাল শুক্রবার নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পরে র‌্যালিটি বিএনপি আয়োজিত গণমিছিলে গিয়ে সম্পৃক্ত হয়। এসময় বিএসপিপির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সদস্য সচিব সাংবাদিক  কাদের গনি চৌধুরী, এডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলী, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. এম এ কুদ্দুস, এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এডভোকেট ফজলুর রহমান, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খান, প্রফেসর ড. শামসুল আলম সেলিম, প্রফেসর ড. কামরুল আহসান, প্রফেসর নুরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম,প্রফেসর ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, প্রফেসর ইঞ্জিয়ার আলমগীর হাসিন আহমেদ, ডা রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. সরকার মাহবব আহমেদ শামীম, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন, সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার আসাদুজ্জামান চুন্নু, ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম, কৃষিবিদ নুরুন্নবী শ্যামল, কৃষিবিদ ড. শফিকুল ইসলাম শফিক, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, শাহজান সাজু, দিদারুল আলম,এস এম রিয়েল রোমান, ইঞ্জিনিয়ার এবিএম রুহুল আমিন আকন্দ, ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন, বিপ্লব উজ জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

মিছিলপূর্ব সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, এসরকারের আমলে পেশাজীবীরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত। ভিন্নমতের হাজার হাজার পেশাজীবীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বহু পেশাজীবীকে গুম ও খুন করে হয়েছে। মামলা দিয়ে পেশাজীবীদের ঘর ছাড়া, বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। তাই আজ ক্ষতিগ্রস্ত ও বিক্ষুব্ধ পেশাজীবীদের ঢল নেমেছে বিএনপির গণমিছিলে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত পেশাজীবীরা ইস্পাত-দৃঢ় ঐক্য নিয়ে রাজপথে থাকবে।

ডাক্তার জাহিদ বলেন, এই নিশি রাতের সরকার ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের সকল অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।

বাংলাদেশের মানবাধিকার নিশ্চিত, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবিতে জনগণ আজ বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। পেশাজীবীদেরও জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হয়েছে। পেশাজীবী জনতা ঐক্য গড়ে তুলে এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় দিতে হবে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, দেশে চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম হয়েছে। মানুষের জান মাল ইজ্জতের নিরাপত্তা নেই। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। দেশ মনুষ্য বসবাসে অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একদিকে মানুষ না খেয়ে মরছে অন্য দিকে সরকারের লোকেরা দুর্নীতি ও লুটের টাকা দিয়ে বিদেশে সেকেন্ড হোম কিনছে। এমনি পরিস্থিতিতে দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। এখন আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিপন্ন। গণতন্ত্র নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। মিডিয়ার স্বাধীনতা নেই। ন্যায়বিচার নেই। আদালত চলছে সরকারের ইশারায়। প্রতি পদে পদে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করে দেশে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করেছে। আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এটা করে। এটা তাদের গুণ।  তারা ভয় দেখিয়ে শাসন করে। তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে আমাদের গণমিছিল সফল করতে হবে। মামলা-হামলা গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে। পেশাজীবীদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন বেগবান করতে হবে। অতীতেও পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এখন শুধু তারেক রহমান বা বিএনপির অস্তিত্বের প্রশ্ন নয়, আজকে গোটা জাতির জন্য অস্তিত্বের লড়াই। যদি গণতন্ত্র ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ফিরে পেতে চাই, তাহলে যেকোনো এফ্যাসিবাদী সরকারকে বিদায় করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার হরণ, গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। ফ্যাসিস্টদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা মানাই না। তাদের হাতে দেশ ও স্বাধীনতা নিরাপদ নয়।

জাগপার গণমিছিল: শুক্রবার ১২ দলীয় জোটের পূর্ব ঘোষিত ১০ দফা দাবিতে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা’র সহ সভাপতি ও রাজনৈতিক মুখপাত্র রাশেদ প্রধানের নেতৃত্বে জাগপা’র গণমিছিলটি বিজয়নগর পানির ট্যাংকি থেকে শুরু হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে কাকরাইল গিয়ে শেষ হয়। এসময় মিছিলে আরো উপস্থিত ছিলেন জাগপা’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, নির্বাহী কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম হাসু, রিয়াজ রহমান, আসাদুজ্জামান বাবুল, যুব জাগপা’র সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, জাগপা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র সরকার, যুবনেতা আশিক মোল্লা, আনোয়ার হোসেন, বিপুল সরকার, পাভেল হোসেন, শাহ আলম, জনি নন্দী প্রমুখ।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।