দুই বছরে সাতক্ষীরা পৌরসভায় ২০টি পুকুর ভরাট

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষক আইন (২০১০ সালের সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

সুলতানপুর এলাকার বাবলু রহমান ও ইয়াসিন আলী বলেন, সুলতানপুরের নাজনিন বেগমের মালিকানাধীন পুকুরটি কয়েক মাস ধরে আস্তে আস্তে ভরাট করছেন তাঁর স্বামী মীর গোলাম মোস্তফা। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে গত ২১ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক সরদার শরীফুল ইসলাম ওই স্থান পরিদর্শন করেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাঁদের মাটি ভরাট করতে নিষেধ করেন। তারপরও সেখানে পুকুর ভরাট করা হয়েছে। নাজনিন বেগম নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে আবার মাটি ভরাট অব্যাহত রাখেন। ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে পুকুরের মাটি অপসারণ করার জন্য তাঁদের নোটিশ দেন পরে শরীফুল ইসলাম। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে ২২ ডিসেম্বর সকালেও ট্রলিতে করে মাটি এনে পুকুরে ফেলা হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা পুকুরে মাটি ভরাট বন্ধ করে দেন।

মীর গোলাম মোস্তফা বলেন, তাঁরা আর পুকুর ভরাট করবেন না। তবে পুকুরের মাটি ভেঙে তাঁদের দুটি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাঁদের পারিবারিক কবরস্থানের অনেকটা ভেঙে পুকুরের মধ্যে চলে গেছে।

সুলতানপুর এলাকার আজগর আলী বলেন, এলাকায় কয়েকটি পুকুর ছিল। কিন্তু রাতারাতি সেগুলো ভরাট করে চড়া দামে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকেরা।

শহরের পলাশপোল এলাকায় প্রায় দুই বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ছিল। ছয় মাস আগে সেটি ভরাট করে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন নওসাদ চৌধুরী। তাঁর ভাই মিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘টাকার দরকার হওয়ায় পুকুরের জমি বিক্রি করেছি।’

একই এলাকার আফতাবুজ্জামান দুই বছর আগে পুকুর ভরাট করে জমি বিক্রি করেছেন। ওই জমির ক্রেতা মো. নাসিরউদ্দিন বলেন, তাঁরা জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে সেখানে ভবন নির্মাণ করছেন। একই এলাকার শংকর সরকার বলেন, তিনি হাজু ঘোষের পুকুরের একাংশ কিনে আরসিসি পিলার তুলে ভবন নির্মাণ করেছেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে ভবন করার সময় নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরার সহকারী পরিচালক শরীফুল ইসলাম বলেন, তাঁদের জনবল কম। সব জেলায় তিনিসহ তিনজন রয়েছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা পুকুর ভরাটের কথা জানতে পারেন না। তবে জানতে পারলে তাঁরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। গত দেড় বছরে তাঁরা তিনটি পুকুর ভরাট বন্ধ করেছেন। এ বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা জরিমানা করেননি।

Check Also

আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আশাশুনি উপজেলা শাখার ২০২৫-২০২৬ সেশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।