বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আগামী রোববার এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন আদালত।
বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের আইনজীবীরা বেলবন্ড দাখিল করতে পারবেন না। এই আদেশের ফলে আগামী রোববারের মধ্যে তারা কারামুক্ত মুক্তি পাবেন না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। আদালতে বিএনপির দুই নেতার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
শুনানির সময় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, এ জেড এম মোরশেদ আল মামুন লিটন, মোহাম্মদ আলী, মো: সগীর হোসেন লিওন, মো: আক্তারুজ্জামান, মনিরুজ্জামান আসাদ, খন্দকার মারুফ হোসেন, শহিদুল ইসলাম সপু, মাকসুদ উল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, কে আর খান পাঠান, আনিছুর রহমান খান, আশিকুজ্জামান নজরুল, সালমা সুলতানা, মু. কাইয়ুম প্রমুখ।
এর আগে বিচারপতি মো: সেলিম ও বিচারপতি মো: রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার দুপুরে শুনানি শেষে বিএনপির এই শীর্ষ দুই নেতাকে ছয় মাসের জামিন দেন। একইসাথে তাদের কেন স্থায়ী জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের রুলে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিন জামিন আদেশের পর বিএনপি নেতাদের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন, হাইকোর্ট বিএনপি’র দুই নেতাকে ছয় মাসের অন্তর্ভুক্তিকালীন জামিন আদেশ দিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকায় তাদের জামিনে মুক্তির বাধা নেই।
শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেন, এই মামলার চার শতাধিক আসামির মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের নাম এফআইআরে নেই। আমান উল্লাহ আমান ও আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল নাম এফআইআরে আছে। আমান উল্লাহর বয়স ৬৪ বছর এবং জুয়েলের বয়স ৪৯। অপরদিকে মির্জা ফখরুলের বয়স ৭৪ এবং মির্জা আব্বাসের বয়স ৭১ বছর। এফআইআরে নাম না থাকার পরেও তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। আসামিদের জামিন দেয়া হয়েছে অথচ তারা জামিন পাওয়ার বেশি যোগ্য।
তিনি বলেন, তাদের জামিন আবেদনের শুনানির জন্য লম্বা তারিখ দেয়া হয়েছে। এমনটা কখনো দেখিনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, মধ্যরাতে তাদের বাসা থেকে তুলে নেয়ার সময় বলা হয়েছে তাদেরকে আবার বাসায় ফিরিয়ে দেয়া হবে। অথচ তাদের এই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। অথচ তারা এই ঘটনার সাথে জড়িত নয়। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির বলেন, মামলা এফআইআরে নাম থাকতে হবে এ কথা আইনে নেই। এই মামলায় সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড-যাবজ্জীবন, এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সাজার বিধান রয়েছে। তারা ঘটনার পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের জামিন দিলে সাক্ষীদের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
এ সময় তিনি বলেন, জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে বুধবার আবেদন করা হবে। পরে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ছয় মাসের জামিন দেন।
এর আগে নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় ১১ দিন পর রোববার আদেশের কপি পান তাদের আইনজীবীরা। আদেশের কপি পাওয়ার পর সোমবার উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।
জামিন আবেদনে বলা হয়, হাইকোর্ট বিভাগের ৬৫ ডিএলআরের ৫৪১ পৃষ্ঠায় আছে, মামলার এফআইআরে যাদের নাম আছে তাদের জামিন হলে যাদের নাম নেই তারা জামিন পাবেন। এছাড়া সাংবাদিক শফিক রেহমানের মামলায় আপিল বিভাগের নির্দেশনা আছে যারা অসুস্থ ও বয়স্ক তারা জামিন পেতে পারেন।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার এফআইআরে নাম না থাকা এবং দুজন বয়োজ্যেষ্ঠ, সমাজ ও রাষ্ট্রের গণ্যমান্য ব্যক্তি হওয়ায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের জামিন পেতে কোনো বাধা নেই বলে আইনজীবীরা মনে করেন।
গত ৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বিএনপির শীর্ষ এই দুই নেতাকে নিজ নিজ বাসভবন থেকে তুলে নেয়ার পর প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও এখনো তারা জামিন পাননি।
সর্বশেষ গত ২১ ডিসেম্বর তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। তবে আদালতের আদেশ না পাওয়ায় হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ নিজ বাসভবন থেকে তুলে নেয়ার প্রায় ১৩ ঘণ্টা পর ডিবির কার্যালয় থেকে ৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয়। গত ৭ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। এ মামলায় সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে চার বার জামিন না পাওয়া মির্জা ফখয়ল ও মির্জা আব্বাসের হাইকোর্টে জামিন আবেদনের সুযোগ রয়েছে।
গত ২১ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো: আসাদুজ্জামান তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ২৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এর আগে গত ১৫, ১২ ও ৯ ডিসেম্বর তিনটি আদালতে মির্জা ফখয়ল ও মির্জা আব্বাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়।
নয়াপল্টনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলায় গত ৮ ডিসেম্বর দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীসহ ৪৩৪ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
কারাগারে পাঠানো বিএনপি নেতাদের মধ্যে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৩৪ জন।