খুলনায় নেতাদের যে নির্দেশনা দিলেন শেখ হাসিনা: সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে কাজ করার আহবান

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে হবে। আওয়ামী লীগের শক্তিই তৃণমূলের নেতাকর্মী তথা সংগঠন। এদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে ভালবাসে এবং বিশ্বাস করে। এদেশের মানুষের সহযোগিতায় তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী। এই দুয়ের শক্তিতে বলিয়ান বলেই কেউ আওয়ামী লীগকে পেছনে ফেলতে পারে না। সেকারণেই আওয়ামী লীগ আজ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। অদম্য স্পৃহায় বাংলাদেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। তারপরেও দেশ বিরোধী চক্র ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের শান্তি ও কল্যাণে কাজ করে।

দেশ ও জাতির কল্যাণ করতে হলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে এবং সরকারে কল্যাণকর কাজে যারা ষড়যন্ত্র করে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদেরকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে হবে। তিনি উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল তথা বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। এরমধ্যে খুলনায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ডেন্টাল কলেজ, ক্যান্সার ইন্সটিটিউট, শেখ রাসেল আইসিটি পার্ক স্থাপন, স্কুল কলেজ সরকারিকরণ, পদ্মা সেতু, মধুমতি সেতু, বঙ্গবন্ধু টার্নেল নির্মাণ, মোংলা বন্দরকে আধুনিকায়ণ করা, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বরিশালে পায়রা সমুদ্র বন্দর স্থাপন, ঢাকায় মেট্রোরেল, ফ্লাই ওভার নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভুতপূর্ব উন্নয়ন করা হয়েছে। একই সাথে কৃষিতে উন্নয়ন হয়েছে।

বাংলাদেশকে শিল্পায়নের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে ব্রডব্যান্ডের আওতায় এনে তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নত দেশের প্রতিযোগিতায় আনা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রসহ প্রাকৃতিক এত দুর্যোগেও আল্লাহর রহমতে আমাদের কেউ থামিয়ে রাখতে পারে নি। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে অদম্য স্পৃহায়। এসব উন্নয়নে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের বন্ধু রাষ্ট্র হিংসায় জ্বলেপুড়ে মরছে। তারা নানা ধরনের মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছে। এদের মিথ্যাচারে কেউ কান দিবেন না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সরকারের উন্নয়নের কথা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। একই সাথে বিএনপি-জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারকে তুলে ধরতে হবে।

সেজন্যে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। শুক্রবার বিকেল ৫টায় খুলনায় শেরে বাংলা রোডস্থ বাসভবনে খুলনা মহানগর, জেলা, সদর ও সোনাডাঙ্গা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময়ে উপস্থিত ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে তনয়া শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুনুর রশীদ, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, সদর থানা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর ফকির মো. সাইফুল ইসলাম। এসময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খুলনা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের সংগঠনকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে প্রত্যেকটি ইউনিটকে পুর্নগঠন করার নিদের্শনা দেন।

এদিকে খুলনা জেলার দিঘলিয়ায় ভৈরব নদের তীরে নগরঘাট এলাকায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে কেনা চার বিঘা জমি ও পাঠ গোডাউন ঘুরে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় বোন শেখ রেহেনাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত সফরে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে সড়কপথে খানজাহান আলী সেতু (রূপসা সেতু) পার হয়ে আড়ংঘাটা বাইপাস ধরে দিঘলিয়া ঘাটে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি নগরঘাট ফেরি পার হয়ে বিকেল ৪টায় তার মায়ের নামে কেনা জমি ও পাট গোডাউনে যান। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান করেন।

খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নগরঘাট ফেরি পার হয়ে বিকেল ৪টায় তার মায়ের নামে কেনা জমি ও পাট গুদামে যান। সেখানে প্রায় ৪০ মিনিট অবস্থান করেন। পরিদর্শন শেষে দিঘলিয়া থেকে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা সড়কে অবস্থিত প্রয়াত চাচা শেখ আবু নাসেরের বাড়িতে যান শেখ হাসিনা। তার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু খুলনায় এসে এই বাড়িতে অবস্থান করতেন। প্রধানমন্ত্রী এই বাড়িতে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সড়ক পথে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে খুলনা ত্যাগ করেন।’

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সুজিত অধিকারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী পারিবারিক সফরে খুলনায় এসে দিঘলিয়ায় মায়ের নামে কেনা জমি ও গোডাউন ঘুরে দেখেন। সেখানে কিছুসময় অবস্থান করার পর প্রধানমন্ত্রী তার ছোট চাচা শেখ আবু নাসেরের বাড়িতে যান। প্রধানমন্ত্রী চা খেতে খেতে আমাদের দলের সাংগঠিক বিষয়ে দিক নানা নির্দেশনা দেন। এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় করে সন্ধ্যা ৬ টার পর পর তিনি সড়ক পথে খানজাহান আলী সেতু হয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দুপুর থেকেই খুলনা শহর বাইপাস ও দৌলতপুর, ফুলবাড়িগেটে সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর খুলনায় প্রবেশ করলে নেতাকর্মীরা শ্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সড়কে তৈরি করা হয় অসংখ্য তোরণ।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে খুলনায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রূপসা সেতু থেকে শুরু করে খুলনা শহর বাইপাস, দিঘলিয়া ও শেখপাড়ার চাচার বাড়ি এলাকায় মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্য। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভৈরব ও রূপসা নদী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে দিঘলিয়ার ভৈরব নদের কোলঘেষে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক জমিতে পাট গোডাউন ও এক কক্ষ বিশিষ্ট ঘরসহ জমি কেনেন। তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ আবু নাসের এ জমি দেখাশোনা করতেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী এ জমির মালিক হলেও জমিটির কথা জানতেন না তিনি। ২০০৭ সালে তিনি তার আইনজীবীর মাধ্যমে এ জমির খোঁজ পান।

খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং দিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এই জমি দেখাশোনা করে থাকেন। ২০২০ সালের দিকে প্রধানমন্ত্রীর জমিতে থাকা পুরাতন পাট গোডাউনটি ভেঙে সেখানে নতুন করে গোডাউন ও একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। গোডাউনটি একজন পাট ব্যবসায়ীকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। গোডাউন সংলগ্ন পাকা রাস্তার নামকরণ হয়েছে শেখ রাসেলের নামে। এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী এই স্থান পরিদর্শন করলেন।

জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে দিঘলিয়ার ভৈরব নদের কোলঘেঁষে নগরঘাট এলাকায় ১ একর ৪৪ শতক (৪ বিঘা) জমিতে পাটগুদাম ও এককক্ষবিশিষ্ট ঘরসহ জমি কেনেন। বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের ওই জমি দেখাশোনা করতেন। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী মালিক হলেও জমিটির কথা জানতেন না তিনি। ২০০৭ সালে তিনি ব্যক্তিগত আইনজীবীর মাধ্যমে ওই জমির খোঁজ পান। বঙ্গবন্ধুর পুরোনো সেই পাটগুদাম ভেঙে সেখানে আধুনিক গুদামঘর নির্মাণ করা হয়েছে। নদীর তীরবর্তী স্থানে বানানো হয়েছে রেস্ট হাউজ। গুদামসংলগ্ন পাকা রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসেলের নামে।

Check Also

দুর্নীতিবাজ, খুনি, স্বার্থান্বেষী মহলকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাই না: চরমোনাই পীর

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, ইসলামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।