সাতক্ষীরার বাজারে ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন জাতের কুল। স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি জেলার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং স্বল্প সময়ে লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছে সাতক্ষীরার কুল চাষ। বছরে প্রায় তের’শ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির কুল এই জেলায় বিক্রি হয়ে থাকে। এসব কুলের মধ্যে রয়েছে বিলাতি মিষ্টিকুল, থাই আপেলকুল, বল সুন্দরীকুল, কাশমির আপেলকুল, দেশী আপেলকুল, নারকেলকুল, টক বোম্বাইকুল ও স্থানীয় টক জাতের কুল।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলাতে ৯৫০ হেক্টর পরিমান জমিতে কুল চাষ হয়েছে। যা গত তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় ৪০ শতাংশ আবাদ বেড়েছে। সুত্রটি আরও জানায়, ২০১৯ এ জেলায় কুলের আবাদ ছিল ৫৫০ হেক্টর পরিমান। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বছরে ১৭ হাজার টন কুল উৎপাদন হয়। এর মধ্যে তালা ও কলারোয়া উপজেলাতে সব বেশী কুল উৎপাদন হয়ে থাকে। যার গড় মুল্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার উপরে। এ জেলার উৎপাদিত কুল স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্রোগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে কুল সল্প সময়ে অধিক মুনাফা হওয়াতে জেলায় প্রতি বছর বাড়ছে কুলের আবাদ। গত তিন বছরের ব্যবধানে অন্তত ৪০ শতাংশ কুলের আবাদ বেড়েছে সাতক্ষীরায়।
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ভৈরবনগর এলাকার কুল চাষি পাঞ্জাব আলী জানান, গত ৮ বছর ধরে তিনি কুল চাষ করেন। অন্যের জমি লীজ নিয়ে তাতে কুলের বাগান করেছেন। তার সাত বিঘার একটি কুল বাগানে থাই আপেলকুল, বল সুন্দরীকুল, বিলাতি মিষ্টি, কাশমির আপেলকুল, দেশী আপেলকুল, নারকেলকুল, ও টক বোম্বাইসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৫০০টি কুল গাছ রয়েছে। এসব গাছে একনাগাড়ে গত ৬ বছর যাবত কুল উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি বছর কুলের মৌসুমে ১২/১৩ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেন বলে জানান কুল চাষি পাঞ্জাব আলী।
চলতি মৌসুমে একই পরিমাণে বাগানে কুল চাষ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে কুল বিক্রি করা শুরু হয়েছে। স্থানীয় পাইকাররাসহ খুলনার ব্যবসায়ীরা তার বাগান থেকে কুল সংগ্রহ করছেন।
তিনি বলেন, গত বছর সাত বিঘা বাগানের কুল বিক্রি হয়েছে ১২ লাখ টাকার উপরে। এসময় জমি লীজ, সেচ, গাছের পরিচর্যা, সার কীটনাশক, ভিটামিন ও শ্রমিকের মজুরী দিয়ে তার উৎপাদন খরচ হয় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। বিক্রি শেষে তার লাভ হয়েছে ৫ লাখ টাকার উপরে। তবে চলতি মৌসুমে গাছে যে পরিমান ফলন এসেছে তাতে ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করছেন এই কুল চাষি।
কলরোয়া উপজেলার কোমরপুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক লাল্টু জানান, গত ৫ বছর যাবত তার নিজের জমিতে কুল চাষ করছেন। গত বছর ১০ বিঘা পরিমান জমিতে আপেলকুল উৎপাদন করে তার ৬ লাখ টাকা লাভ হয় তার। তিনি বলেন, অন্যসব ফসলের চেয়ে কুল চাষ খুবই লাভজনক। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের ফসল কুল উৎপাদন। ধান,পাট বা সরিষা উৎপাদনে এতো বেশি লাভ করা সম্ভব না। তাছাড়া নিরাপত্তা ঝুকিও কম।
তিনি আরো বলেন, ১০ বিঘা কুল বাগানে ৫ লাখ টাকার মত উৎপাদন খরচ পড়ে। সেখানে কুল বিক্রি হয় ৯ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে কুল বিক্রি শুরু করেছেন গেল এক সপ্তাহ আগে থেকে। এসময় বাজারে দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মন আপেলকুল সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছেন তিনি।
খুলনার পাইকারী কুল ব্যবসায়ী ও আড়তদারী প্রতিষ্টান মেসার্স মিতা বানিজ্য ভান্ডারের স্বত্তাধিকারী রাসেল হোসেন জানান, সাতক্ষীরার উৎপাদিত কুল বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। খুলনা বিভাগীয় শহর ছাড়াও বরগুনা, পটুয়াখালী, মাদারী, বরিশাল ও পিরোজপুর এলাকাতেও কুল সরবরাহ কওে থাকেন তিনি। প্রতি মন আপেলকুল ও বিলাতি মিষ্টিকুল ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে পাইকারী ক্রয় করছেন। সাতক্ষীরা থেকে প্রতি মৌসুমে ৭ থেকে ৮ হাজার মন কুল ক্রয় করে তার প্রতিষ্ঠানটি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ জামাল উদ্দিন জানান, সল্প সময়ের মধ্যে খুবই লাভজনক কুল চাষ। সেকারণে এ জেলায় দ্রুত কুল চাষের প্রসার ঘটছে। চাষীরা খুবই আগ্রহী হচ্ছে কুল চাষে। তাছাড়া জেলার অনেক মৎস্য ঘেরের বাঁধে কুল চাষ করে লাভবান হচ্ছে মৎস্য চাষীরা। অনেক উন্নতজাতের সুস্বাদু কুল চাষ হচ্ছে এ জেলায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বছরে ১৭ থেকে ১৮ হাজার টন কুল উৎপাদন হচ্ছে। যার গড় মুল্য ১ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকার উপরে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড
আরও সংবাদ