বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারাদেশের জনগণ জেগে উঠেছে। আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন আজকের নয়; এই আন্দোলন শুরু হয়েছে তখন থেকে, যখন থেকে বেআইনিভাবে দুই-দুইবার ভোট ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জোর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখল করেছে।’
আজ বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় এ গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়ে দুপুর ২টায় শেষ হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা জানি, আওয়ামী লীগ একটি অত্যন্ত পরিচিত পুরোনো দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে; আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের এখন পুলিশের ওপর নির্ভর করে, আমলাদের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষ আজ বলছে, তারা আর পারে না। চাল কিনতে পারে না। খাদ্য কিনতে পারে না। ওয়াসার এমডি আমেরিকায় ১৪টি বাড়ি কিনেছে। তিনি কত হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। আজকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তারা সব ব্যাংক লুটে ফোকলা করে দিয়েছে। সরকার লুটের রাজ্য গড়ে তুলেছে। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে আবারো একদলীয় শাসন কায়েম করা। আমরা সেটা হতে দেবো না! আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আজকে জনগণ জেগে উঠেছে; সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জেগে উঠেছে। গণমাধ্যমও ভূমিকা রাখছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেও ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ বানচাল করা যায়নি; ঢাকাসহ দেশের মানুষ সফল করেছেন। আসুন, আমরা ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হই।’
এছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষ আওয়াজ তুলেছে। এ সরকার দেশকে ধ্বংস করেছে। তাদের মাধ্যমে মেরামত করা সম্ভব নয়। গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটিয়ে এই সরকারকে বিদায় করব। আমাদের দেয়া ১০ দফার মাধ্যমে দেশকে মেরামত করার ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন করব।
মির্জা আব্বাস বলেন, জেলখানায় জায়গা নাই, সারা বাংলাদশকে জেলখানায় পরিণত করেছে সরকার। আমরা কাউকে ধাক্কা বা টোকা দিয়ে ফেলে দিব না। শান্তিপূর্ণ কর্মূসূচির মাধ্যমে পতন করব এই অবৈধ সরকারকে। আমরা কোনো রকম বিশৃঙ্খলা কাজে বিশ্বাস করি না। বিএনপি কোনো সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ড করে না।
গণ-অবস্থান কর্মসূচির সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ।
সঞ্চলনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মঞ্জু ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক।
এর আগে সকাল থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় বিএনপি’র নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন।
নয়াপল্টন সহ আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ ডিসেম্বর গণমছিল থেকে ১১ জানুয়ারি দেশের বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান কর্মসূচি করার ঘোষণা দেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মোশাররফ হোসেন।