তুলনামূলক সৃষ্টিতত্ত্বে বিবর্তনবাদও পড়তে হবে, তবে…

বিলাল হোসেন মাহিনী :তুলনামূলক গবেষণার জন্য অবশ্যই ধর্মের সৃষ্টি রহস্য স্টাডির পাশাপাশি বিজ্ঞানের নতুন নতুন গবেষণাও পড়তে হবে, পড়তে হবে বিবর্তনবাদও। কিন্তু, সমস্যা হলো, পাঠ্যে সৃষ্টিতত্ত্বের ধর্ম বিশ্বাসীদের তত্ত্বটা দেয়া হয়নি। বিবর্তন থিওরি উল্লেখের পাশাপাশি সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে কোন ধর্মে কী বলা হয়েছে তা উল্লেখ করলেই প্রায় সব বিতর্কের সমাধান হয়ে যায়।
কেউ যদি মনে করে, বিবর্তনবাদ মিথ্যা, তবুও তাকে তা পড়তে হবে, কারণ এটা আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব! ঠিক যেমন ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম-দর্শন জানতে হবে, মুসলমান না হলেও, কারণ এগুলো আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম‍-দর্শন।
এখন প্রশ্ন হলো, দেশের ৯৮ শতাংশ ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের ধর্ম বিশ্বাসের বিপরীতে এসে পাঠ্য বইতে কেনো ঢালাওভাবে বানর বা কোনো প্রাণী থেকে মানব সৃষ্টির দর্শন বা শিক্ষা ধর্ম বিশ্বাসী মানুষের সন্তানদের শেখাতে হবে? হ্যাঁ, বিভিন্ন ধর্মের সৃষ্টিতত্ত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি বিবর্তনের মাধ্যমে যে মানব সভ্যতার সূচনা হয়েছে, তা বিজ্ঞান বা দর্শনের মত হিসেবে দেখানো যেতো। কিন্তু না, এমনভাবে বিষয়টি পাঠ্যে আনা হয়েছে যে, মানুষের সৃষ্টি যেনো বানর থেকেই হয়েছে! কী অদ্ভুত চিন্তা!
পৃথিবীর অন্য সব দেশে বিজ্ঞান বইয়ে যা পড়ানো হচ্ছে, বাংলাদেশের বিজ্ঞান বইয়েও তাই পড়ানো হচ্ছে। এটা ঠিক। বাংলাদেশের স্কুলে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-খ্রিস্টান চারটি ধর্মও পড়ানো হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত হতো, যদি সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কিত সব তথ্য পাঠ্যবইয়ে উপস্থাপন করা হতো। এরপর তুলনামূলক স্টাডি করে সৃষ্টির সেরা জীব ‘আশরাফুল মকলুকাত’ শিক্ষার্থীরাই সিদ্ধান্ত নিত, কোনটা যুক্তিযুক্ত, ধর্মের সৃষ্টিবাদ, নাকি বিজ্ঞানের বিবর্তনবাদ।
নানা মত, পথ, ধর্ম-দর্শনের এই পৃথিবী।  ধর্ম ও দর্শনের ভিন্নতার কারণে ভিন্ন চিন্তার মানুষের নিকট সৃষ্টি রহস্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। নব্বই শতাংশ মুসলিম, যারা বিশ্বাস করে বিশ্বজগতের সব কিছুর স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। শুধু তাই নয়, যারা অন্যান্য ধর্মের মানুষ, তারাও বিশ্বাস করে তাদের সৃষ্টিকর্তা আছেন। সেখানে ধর্মভেদে কেউ ঈশ্বরকে আবার কেউ গডকে স্রষ্টা জ্ঞান করে। যাইহোক, সকল ধর্মের মানুষের বিশ্বাস হলো তাদের একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন। ধর্ম বিশ্বাসী কোনো মানুষ এ কথা বিশ্বাস করে না যে, তারা বানর থেকে বা কোনো প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়ে পৃথিবীতে এসেছে। কেননা, পশু-প্রাণী থেকে সৃষ্ট মানুষ কখনো আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা জীব) হতে পারে না।
বিজ্ঞান পড়াতে গেলে বিবর্তনবাদ পড়াতেই হবে। কেউ বিবর্তনবাদে বিশ্বাস না করলে সেটা তার ব্যাপার। আপনি যদি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে বিশ্বাসী নাও হন, তবু তাই বলে আপনি এটা বলতে পারেন না যে, অন্য ধর্মগুলো স্কুলে পড়ানো যাবে না। মুসলিম গবেষক ডক্টর মুহাম্মদ  শহীদুল্লাহ ‘মা মনসায়’ বিশ্বাস করতেন না, কিন্তু তাই বলে ‘মনসামঙ্গল’ কাব্য পড়তে তাঁর কোনো সমস্যা হয়নি।
কোনো কিছু পড়তে হলে, সেটা বিশ্বাস করতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বিশ্বাস না করেও অন্যের বিশ্বাস সম্পর্কে জানা যায়। জানতে হবে, তুলনামূলক স্টাডির জন্য। শিক্ষার্থীরা ধর্ম পড়বে, বিবর্তনবাদও পড়বে। এতে কী সমস্যা? স্কুলের বাংলা সাহিত্য বইয়ে ধর্মনির্বিশেষে সকলকেই হযরত মুহম্মদের (স.) জীবনীসহ ইসলামি গল্প নিবন্ধ প্রবন্ধ পড়তে হয়।
কী সমস্যা হয়েছে, তাতে? এক মহাপুরুষের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে  জানতে পারছে সকলে। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতেতো কাউকে বাধ্য করা হয়নি।
সরকার, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের দায়িত্ব হলো, সব ধরনের জ্ঞান শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা। শিক্ষার্থীরা কতটুকু নেবে বা না নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।
বিলাল মাহিনী
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।

 

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।