প্রায় দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে যশোর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। পাইলিংয়ের সময় বাসভবনে জার্কিং হওয়ায় কাজ বন্ধ করে দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এরপর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আর কাজ করেনি। সেখানে এখনো পড়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী।
যশোর গণপূর্ত বিভাগের তথ্য মতে, সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় আটটি উপজেলা শহরে আটটি ও জেলার পৌর এলাকায় একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ টাকা। ধর্মীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে আধুনিক মানের এসব মসজিদ উপজেলা পর্যায়ে তিন তলা ও পৌর শহরে চার তলাবিশিষ্ট হবে। এরই অংশ হিসেবে ১২ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার ১৫০ টাকা ব্যয়ে যশোর সদর উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। কার্যাদেশ পেয়ে সেখানে কাজ শুরু করেছিলেন ঠিকাদার নুর হোসেন। কিন্তু পাইলিংয়ের সময় শব্দ ও পাশে সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে জার্কিং (কম্পন) হওয়ায় কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন সেসময়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উপজেলা পরিষদ চত্বরের চা দোকানি মামুন হোসেন বলেন, দুই বছর আগে যখন পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয় তখন উপজেলা পরিষদ কেঁপে উঠত। দোকানের মালামাল পড়ে যেত কাঁপনিতে। এরপর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন পর ঠিকাদার পাইলিংয়ের জন্য আনা ভিমগুলো রেখে অন্যান্য মালামাল নিয়ে চলে যান।
তিনি আরো বলেন, তবে মসজিদের কাজটি দ্রুত শুরু করা উচিৎ। আমরা এখনো পুরাতন মসজিদে নামাজ আদায় করি। নতুন মসজিদটি চালু করা গেলে মুসুল্লিদের চাপ সামাল দেয়া সহজ হতো।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাইলিংয়ের সময় মনে হতো ভূমিকম্প হচ্ছে। উপজেলা পরিষদের আশপাশের এলাকাও কেঁপে উঠত। আমার দাবি, উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাইলিংয়ের কাজ দ্রুত শুরু করা হোক এবং সরকারের মহতি উদ্যোগে গতি ফিরুক। পাশাপাশি একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারলে আমাদের ভালো লাগবে।
ঠিকাদার নুর হোসেন বলেন, কার্যাদেশ পেয়ে দুই বছর আগে কাজ শুরু করেছিলাম। দরপত্রে কোথাও পাইলিং করে ভবন নির্মাণ করতে হবে উল্লেখ নেই। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করে তিন তলা ভবন সত্ত্বেও ডিজেল হ্যামার মেশিন দিয়ে পাইলিং করছিলাম। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনে কম্পন হচ্ছে অজুহাতে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে প্রেসার হ্যামার মেশিনের মাধ্যমে পাইলিং করতে বলা হয়েছে। তবে সেটার চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো পাওয়া যায়নি। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের ঘাটতি আছে। ফলে কাজ বন্ধ রয়েছে।
যশোর গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) তরিকুল ইসলাম বলেন, পাইলিং করার সময় সামান্য জার্কিং হয়। এতে অসুবিধা হওয়ার কথা না। এরপরও আপত্তি ওঠায় কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে ডিজাইন চেঞ্জ করা হয়েছে। প্রেসার হ্যামার মেশিন ব্যবহার করে পাইলিং করার জন্য অনুমোদন পেতে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। অনুমোদন পেলে ঠিকাদারকে কাজ করতে বলা হবে।
যশোর সদর উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার অনুপ দাশ বলেন, শুধু নির্বাহী অফিসারের বাসভবন না, উপজেলা পরিষদের অন্যান্য ভবনগুলোও কাঁপছিল। এ জন্য তখন কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। পেসার হ্যামার দিয়ে পাইলিং করার জন্য বিভিন্ন সময় জেলার মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় গণপূর্ত বিভাগকে বলা হয়েছে। গণপূর্ণ বিভাগ চেষ্টা করছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে আশা করছি।