৫০ হাজার বছর পর ফিরল ধূমকেতু, আজ রাতে দেখা যাবে খালি চোখে!

৫০ হাজার বছর পর ফিরল ধূমকেতু, আজ রাতে দেখা যাবে খালি চোখে!
*****************************************

মোঃ হারুন উর রশিদ,
প্রায় ৫০ হাজার বছর পর পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যাবে একটি ধূমকেতু। ধূমকেতুটির নাম সি/২০২২ ই৩ (C/2022 E3)। আজ ১ লা ফেব্রুয়ারি, বুধবার রাতের আকাশে খালি চোখে দেখা যাবে এই ধূমকেতুকে। ভারতের প্রায় সকল রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকেই এই ধূমকেতুটি দেখা যাবে। তবে খালি চোখে দেখার জন্য আকাশ পরিষ্কার থাকা বাধ্যতামূলক। ফ্রান্সের প্যারিস অবজারভেটরির জ্যোতিঃপদার্থবিদ নিকোলাস বিভার বলেন, ‘পূর্ণিমা থাকলে ধূমকেতুটি দেখা কঠিন। তবে বুধবার যেহেতু পূর্ণিমা হচ্ছে না তাই ধূমকেতুটি খালি চোখে দেখার সুযোগ আছে।’ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জুইকি ট্রানসিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি ২০২২ সালের মার্চে ধূমকেতুটির সন্ধান পায়। এ সময় এই ধূমকেতুটি সূর্যের থেকে ৬৪২ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর দিয়ে বৃহস্পতি গ্রহকে অতিক্রম করছিল। তখনই গবেষকেরা এ ধূমকেতুর নাম দেন সি/২০২২ ই৩। ১২ জানুয়ারি ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছিল। এ সময় সূর্য থেকে এর দূরত্ব ছিল ৪৮২ মিলিয়ন কিলোমিটার। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এখন রাতের আকাশে এবং ভোর রাতের দিকে বাইনোকুলারের সাহায্যে ধূমকেতুটি দেখা যায়। তবে ১-২ ফেব্রুয়ারি ধূমকেতুটি যেহেতু পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি আসবে (ভূপৃষ্ঠ থেকে ধূমকেতুটির দূরত্ব থাকবে ৪২ মিলিয়ন কিলোমিটার), তাই আরও স্পষ্ট দেখা যাবে। ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ধূমকেতুটির উজ্জ্বলতার মান ছিল +৪.৬। অর্থাৎ, খালি চোখে দেখা যায় এমন সবচেয়ে দূর্বল বস্তুর চেয়ে এটা কিছুটা উজ্জ্বল। পৃথিবীর কাছাকাছি এলে ধূমকেতুটির উজ্জ্বলতা আরও বাড়তে পারে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, ধূমকেতুটি ওর্ট ক্লাউড নামের একটি এলাকা থেকে এসেছে। ওর্ট ক্লাউড মূলত সৌরজগতের চারপাশে বিশাল গোলক, যেখানে রহস্যময় বরফের বস্তুদের অবস্থান রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এর আগে, সর্বশেষ এ ধূমকেতু যখন পৃথিবীকে অতিক্রম করেছিল, তখন আধুনিক মানুষ নয় পৃথিবীতে নিয়ান্ডারথলদের বিচরণ ছিল। ধূমকেতুটি বরফ ও ধূলিকণায় গঠিত। এটি পেছনে সবুজ আভা ছেড়ে যায়। বিজ্ঞানীরা বলেন, ধূমকেতুটির ব্যাস প্রায় এক কিলোমিটার হতে পারে। এর আগে, ২০২০ সালে খালি চোখে দেখা যাওয়া নিউওয়াইজ নামের ধূমকেতুটির চেয়ে এটি অনেক ছোট। তবে এবারের সি/২০২২ ই৩ ধূমকেতুটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি পৃথিবীর অনেক কাছ দিয়ে যাবে। তাই প্রত্যাশার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিতে পারে এটি। কিন্তু ধূমকেতুটি সবুজ আভা ছেড়ে যাচ্ছে কেন? আসলে ধূমকেতুটি মোটেও সবুজ নয়। কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়ার কারণে এর মাথার অংশটি সবুজাভ দেখায়। এটি সম্ভবত ডায়াটোমিক কার্বনের (C2) কারণে হয়। দুটি কার্বন পরমাণু একসঙ্গে আবদ্ধ হয়ে একটি সাধারণ অণু গঠন করাকে বলে ডায়াটোমিক কার্বন। সূর্য থেকে আসা অতিবেগুনি রশ্মি এই অণুকে ভেঙ্গে দিলে এটি সবুজ আভা নির্গত করে। বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হয় সেই আভা। এ কারণে ধূমকেতুটি সবুজ দেখায়৷ ভারত থেকে আজ রাত ৯:৩০ টার পর উত্তর পশ্চিম আকাশে ধ্রুবতারার দক্ষিণে এই ধূমকেতুটি দেখা যাবে। তবে শহুরে এলাকা থেকে আলোক দূষণের কারণে খালি চোখে ধূমকেতুটি নাও দেখা যেতে পারে৷ তাই বাইনোকুলার ব্যবহার করলে ভালো ভাবে ধূমকেতুটি দেখা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

Check Also

বেসরকারি শিক্ষকদের এসিআর ,বদলি ও উচ্চতর স্কেল, চালু হচ্ছে চলতি বছর থেকে

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ   প্রথমবারের মতো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা) কর্মরত শিক্ষকদের জন্য চালু হচ্ছে এসিআর (অ্যানুয়াল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।