সিরিয়া ও তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে ধসে যাওয়া ভবনের নিচে। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ হাজার। কঠিন এই পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজকে আরও কঠিন করে তুলেছে সেখানকার হিমশীতল তাপমাত্রা।
৭ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আটকেপড়া মানুষদের জীবিত উদ্ধার করার সম্ভাবনাও কমে আসছে সময়ের সঙ্গে। নিহতের সংখ্যা বিশ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ।
তুরস্কের খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহর ছিলো এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। দেশটির আদানা শহরের ৩৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়া মানুষদের মরিয়া হয়ে খুঁজতে কংক্রিটের ভগ্নাংশ ও বিভিন্ন আসবাবপত্র হাত দিয়েই সরিয়ে ফেলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উদ্ধারকর্মীরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আটকেপড়া মানুষদের জীবিত খুঁজে বের করে উদ্ধার করতে। প্রতিটি বহুতল ভবন যেন এখন ধ্বংসস্তূপের একেকটি পাহাড়।
‘কেউ আছেন? শুনতে পাচ্ছেন?’, কিছুদুর পর পর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বারবার এমন চিৎকার করে প্রাণের খোঁজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
ভূমিকম্পের সব খবর পড়তে ক্লিক করুন: সিরিয়া-তুরস্কে ভূমিকম্প
তুরস্ক ও সিরিয়া জুড়ে চাপা পড়া ব্যক্তিদের খুঁজতে ও উদ্ধার করতে হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী, দমকলকর্মী, চিকিৎসাকর্মী, সামরিক ও বেসামরিক লোকজন আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
ভূমিকম্প শুরু হলে উত্তরপশ্চিম সিরিয়ার ইদলিব শহরের বাসিন্দা সাংবাদিক মোহাম্মাদ কাজমুজ ভোরের আলো ফোটার আগেই পরিবার নিয়ে শহর ত্যাগ করেন।
কাজমুজ বলেন, ‘সবাই ভবনে থাকা অবস্থাতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ভবন ধ্বসে পড়তে দেখেছি। এর আগে গৃহযুদ্ধের সময় সিরিয়া ও রুশ সরকারের বোমা হামলার শিকার হয়েছিল এই ভবনটি। আশেপাশের মানুষ আতঙ্কে সবকিছু রেখে বাসা থেকে এক কাপড়ে বেরিয়ে পড়েছিলো রাস্তায়। মনে হচ্ছিল এ যেন কিয়ামত।’
আশেপাশের ভবন থেকে মৃতদেহ সরানো ও উদ্ধারকাজে স্বেচ্ছাসেবক দলের সঙ্গে প্রায় ১২ ঘণ্টা কাজ করেছেন কাজমুজ। তীব্র শীতের পরও ইদলিবের টিকে থাকা ভবনগুলোতে ফিরতে ভয় পাচ্ছেন সেখানের বাসিন্দারা। মৃত ও আহতের সংখ্যা এত বেশি যে হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতেও আর রোগী নেওয়ার মতো অবস্থা নেই।
সিরিয়ার সীমান্তবর্তী শহর জিন্দিরেসের আলী বাতেল তার শহরকে বাঁচাতে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার, সন্তানেরা এখনও ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে। ধ্বংসস্তূপের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্যের জন্য আর্তনাদ শোনা গেলেও তাদেরকে বাঁচানোরে মতো কেউ নেই, উদ্ধারের কোনও চেষ্টাই করা হচ্ছে না সেখানে।’
বেঁচে যাওয়া আরেক সিরীয় নাগরিক, ওসামা আব্দেল হামিদ বলেন, ‘ভূমিকম্পের সময় আমার পরিবার ঘুমাচ্ছিলো। আমাদের ওপর দেওয়াল ভেঙে পড়ে। তবে আমার ছেলে সেখান থেকে বের হতে পেরেছিল। বের হয়ে সে সাহায্যের জন্য চিৎকার করার পরে আশেপাশের মানুষ এসে উদ্ধার করে আমাদের।’
উদ্ধারকারীদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, এবং আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান