সাতক্ষীরায় মানবাধিকার পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় শহরের কোরাইশী ফুডপার্ক মিলনায়তনে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক সাতক্ষীরা শাখার আয়োজনে উত্তরণ-ডিএইচআরএনএস প্রকল্পের আওতায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: নজরুল ইসলাম। ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক সাতক্ষীরা শাখার আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এড: সাইদুর রহমান, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্কের কর্মকর্তা এড: সাইদ আহমেদ, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, মানবাধিকারকর্মী মধাব চন্দ্র দত্ত, এড: শাহনেওয়াজ পারভীন মিলি, ড: দিলীপ কুমার দেব, এড: আজহারুল ইসলাম, এড: নাজমুননাহার ঝুমুর, জিএম মনিরুজ্জামান সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্মী মোকাম আলী খান, সাংবাদিক মিজানুর রহমান, অধ্যক্ষ এআরএম মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি, এড: আসাুজ্জামান দিলু, জ্যোৎ¯œা দত্ত, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, এড: কাজী আব্দুল্লাহ হাবিব, মনিরুল ইসলাম মিলন, এড: আল মাহমুদ পলাশ, এসএম শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ পাড়, সাকিবুর রহমান বাবলা প্রমুখ। সভায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক সাতক্ষীরা শাখার সকল সদস্য ও সুধীজন উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরার মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময়কালে বক্তারা বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির ব্যাপারে সরকারের সম্পৃক্তি বৃদ্ধিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। পারস্পারিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার সমুন্নত রাখা ও সুরক্ষার বিষয়টি আরও নিশ্চিত করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক মর্যাদা রক্ষা করা গেলে সমৃদ্ধ ও মর্যাদাপূর্ণ দেশ ও জাতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ^ দরবারে স্থান পাবে। আইনের প্রয়োগিক ধারাকে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারীদের উন্নত পেশাদারিত্ব মানবাধিকার পরিস্থিতিকে সমুন্নত রাখতে পারে। সমস্যার অজুহাত দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। অপরাধের প্রতিটি ঘটনার নির্মোহ বিশ্লেষণও দরকার। নতুবা তৃতীয় পক্ষ এর সুযোগ নিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করতে পারে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের জবাবদিহিতার পাশাপাশি নাগরিক সমাজ তথা এনজিও, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি এবং আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বক্তারা বলেন, রাষ্ট্রের সাধারণ নাগরিকরা মানবাধিকার লংঘন করে না। বরং মানবাধিকার লংঘিত হয় রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার দ্বারা। ব্যাখ্যা দিয়ে বক্তারা বলেন, নাগরিকরা অপরাধ করতে পারে, কিন্তু অপরাধের বিচার না হওয়া কিংবা বিচার না পাওয়ার ঘটনা মানবাধিকার লংঘনের শামিল। আইনী সহায়তা যে কেউ চাইতে পারে। কিন্তু আইনী সহায়তা চাইতে গিয়ে যদি তিনি বঞ্চিত হন সেটিও মানবাধিকার লংঘনের শামিল। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। জনগণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি কমে আসবে বলে বক্তারা মনে করেন। এজন্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সার্বিক প্রতিকূল অবস্থা থেকে যাত্রা করে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জন, নারী ও শিশুদের মৃত্যুহার, খাদ্য, পানি ও পয়োনিষ্কাশনের ক্ষেত্রসমূহে সক্ষমতা অর্জনে অগ্রগতি লাভ করেছে।
ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপিত বিভিন্ন মানবাধিকার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তারা বলেন, নাগরিক সমাজের গুরুত্ব সীমিত করার, ক্রমবর্ধমান নজরদারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রতিশোধমূলকভাবে বাক্স্বাধীনতা হরণ করার বিষয়গুলো প্রতিফলিত হচ্ছে। এজন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন এবং কখনো কখনো তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। বাক্স্বাধীনতা, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী দল এবং সাংবাদিকদের সংগঠন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতার পাশাপাশি নাগরিক ও রাজনৈতিক সমাজের ভূমিকা জোরদার করার লক্ষ্যে সামাজিকভাবে সচেতনতা জরুরী। আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যরা অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা ছাড়াই যাতে প্রতিবাদ সমাবেশসমূহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করাও গুরুত্বপূর্ণ। নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর মতামত জরুরী।
মতবিনিময় সভায় বক্তারা সাতক্ষীরায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন করেন ডিস্ট্রিক্ট হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক সাতক্ষীরা শাখার সদস্য সচিব এড: মোহাম্মদ মুনির উদ্দীন।
উস্থাপিত প্রবন্ধে জেলার বিগত তিন মাসের বিভিন্ন ঘটনা উল্লেখ করে বলা হয়- ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর ও চলতি সালের জানুয়ারি এই তিন মাসে সাতক্ষীরায় ২টি হত্যাসহ ৪৮জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে হত্যার ঘটনা ২টি, আত্মহত্যা ১৫টি, পানিতে ডুবে ৩জনের মৃত্যু, গাছ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু, বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২জনের মৃত্যু, ছাদ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু, সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু, পুলিশের তাড়া খেয়ে ও পুলিশ হেফজতে অসুস্থ হয়ে ২জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় একজনের মৃত্যু হয়। এছাড়া তিনমাসে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৯জন। এছাড়া এই সময়ে জেলায় ২১টি ধর্ষণ, বিভিন্নভাবে নারী নির্যাতনের ঘটনা ৮৪টি, চোরাচালান মামলা ১১টি, মাদকদ্রব্য আইনে মামলা হয়েছে ২৫৩টি, অন্যান্য মামলা হয়েছে ৩০৩টি। জেলার আটটি থানায় তিন মাসে ৭১৩টি মামলা হয়েছে। তবে এই সময় আদালতে কতটি মামলা হয়েছে তা জানা যায়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১৮টি, ডিসেম্বর মাসে ১৩টি এবং চলতি সালের জানুয়ারি মাসে ১৭জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও পুলিশের দেওয়া ভাষ্যমতে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সাতক্ষীরায় একটি হত্যাসহ ১৮জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এরমধ্যে একজন হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনায় ৪জন, পানিতে ডুবে একজন, গাছ থেকে পড়ে একজন, ভবনের ছাদ থেকে পড়ে একজন, সাপের কামড়ে একজনের মৃত্যু হয়। নভেম্বর মাসে পৃথক আত্মহত্যার ঘটনায় পুলিশ ৯টি মরদেহ উদ্ধার করে। এছাড়া এ মাসে কয়েকটি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সাতক্ষীরায় ১৩জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। পুলিশের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পৃথক ঘটনায় ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৭জন। এছাড়া দুটি পৃথক ঘটনায় দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।
এদিকে চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে জেলায় একটি হত্যাসহ ১৭টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ০৮জন। আত্মহত্যা করেছেন ২জন। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২জন, পানিতে ও কাদায় ডুবে ২জনের মৃত্যু হয়। গারদখানায় পুলিশ হেফজতে অসুস্থ হয়ে একজন এবং বৈকারিতে অজ্ঞাত বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। প্রেসবিজ্ঞপ্তি
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …