দেশের ভিতর ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের জ্বালানিমন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা সহ ১৬ জন এবং সামরিক জান্তা শাসিত মিয়ানমারের বিভিন্ন ‘এনটিটি’র বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এর অধীনে সংশ্লিষ্টদের সম্পদ জব্দ করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। এতে আরও বলা হয়, ওই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে রাজনীতিকরা এবং মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনের প্রশাসকরা। অভিযোগ আছে তারা ২০২২ সালের জুলাই মাসে চারজন গণতন্ত্রপন্থি কর্মীকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। তারা গণহত্যা, আকাশপথে হামলা তদারকি করেছে। দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রদেশ কাচিন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর অভিযানকালে তারা বেসামরিক মানুষজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।
এর প্রেক্ষিতে সোমবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছে, সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য যারা দায়ী, সহিংসতা যারা করেছে, ভয়াবহভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তাদেরকে বিচার করা উচিত। এই বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তালিকায় বলা হয়েছে, যৌন সহিংসতা চালানো হয়েছে। বেসামরিক নাগরিক সমাজের কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ চালানো হয়েছে। স্কুল এবং হাসপাতালে আকাশপথে হামলা চালানো হয়েছে।
২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার পর এসব করেছে সামরিক জান্তা।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তার মধ্যে আছে মিয়ানমারের জ্বালানিমন্ত্রী মাইও মিন্ট ওও, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল মুয়াং মুয়াং আই, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল মোয়ে অং এবং সেনাবাহিনীর কাছে অস্ত্র সরবরাহকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। এতে নাম আছে কাচিন রাজ্যে সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল কো কো মুয়াংয়ের। কাচিন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর আকাশপথে হামলা, গণহত্যা, ঘেরাও, অগ্নিসংযোগ এবং মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে দেখভালের জন্য তাকে দায়ী করা হয়েছে। ইয়াঙ্গুনে ২০২২ সালের জুলাইয়ে গণতন্ত্রপন্থি অধিকারকর্মীদের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া এবং তা কার্যকর করার সঙ্গে যুক্ত আছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিও মিন্ট। এর আগে তিনি সেনাবাহিনীতে জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময়ে সেনা বিচারক বিরোধী দলীয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড এবং জেল দিয়েছে। ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের পর থেকে মারাত্মকভাবে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে তিনি দায়ী বলে বলা হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বিবৃতিতে।
এতে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক প্রতিরোধমুলক ব্যবস্থা বৃদ্ধি করার জন্য আবারও আহ্বান জানায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এর মধ্যে আছে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্য দিয়ে তাদের কাছে অস্ত্র বিক্রি, হস্তান্তর বন্ধ করা উচিত। কারণ, এসব ব্যবহার করে সামরিক বাহিনী নৃশংসতা চালায়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে বিরোধী দলের সমন্বয়ে গঠিত ছায়া সরকার ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (এনইউজি)। স্বাগত জানিয়েছে বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকে। এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘ওয়েল টার্গেটেড’ মন্তব্য করে বার্মা ক্যাম্পেইন বলেছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে যেসব মানুষ ব্যবসা করছে তাদের দিকে দৃষ্টি দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এসব মানুষ সেনাবাহিনীকে জ্বালানি, অস্ত্র ব্রোকার, সামরিক কেনাবেচায় সুবিধা দিয়ে থাকে। বার্মা ক্যাম্পেইন ইউকের নির্বাহী পরিচালক আনা রবার্টস বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা যথাযথ হয়েছে। এতে টার্গেট করা হয়েছে সেনাবাহিনীর বিমান হামলা, তাদের কাছে অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহকে।